ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আঞ্চলিক প্রভাব প্রাধান্য পাবে না

ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন

আলী ইউনুস হৃদয়
🕐 ৯:৩১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৮, ২০১৯

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন। যোগদানের পরই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে চান। দৈনিক খোলা কাগজের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলী ইউনুস হৃদয়’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন নবনিযুক্ত উপাচার্য-

উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের অনুভূতি কেমন?
নিঃসন্দেহে ভালো লাগছে। বর্তমান সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমার সারা জীবনের স্বপ্নই ছিল শিক্ষক হব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছি। এর আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি।

এখন যে দায়িত্ব এসেছে সেটা শুধু শিক্ষকের দায়িত্ব নয়, এটা প্রশাসনিক দায়িত্ব। তাই শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ যুক্ত হলো। আমি সব সময় ছাত্রদের অগ্রাধিকার দিয়ে একাডেমিক কাজগুলো করেছি। এখন প্রশাসনিক কাজ যেন ন্যায়নীতি ও সততার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারি সে জায়গায় অগ্রাধিকার দিব।

উপাচার্য হওয়ার স্বপ্ন ছিল কখনো?
আমার স্বপ্নই ছিল অধ্যাপক হব। সেই দায়িত্ব পালন করেছি। আর এই দায়িত্ব পালনের সময় মনে হয়েছে অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাদান ও গবেষণার কাজটি অগ্রাধিকার দেওয়া। তার পাশাপাশি রাষ্ট্র মনে করেছে, প্রশাসনিক দায়িত্ব দিলে আমি সেটা পালন করতে পারব।

তাই রাষ্ট্রের এই দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছি। আমি এখন নতুন স্বপ্ন দেখছি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেন বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষা ও গবেষণার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে
পরিচিতি লাভ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংকট সমাধানে কি ভাবছেন?
এই দায়িত্ব পালনের জন্য আমি শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি যোগদান করার পর সংকটগুলো বুঝে শুনে সমাধান করার বিষয়ে মন্তব্য করব। আমি শুধু বলব, নতুন দায়িত্ব সততা ও ন্যায্যতার সঙ্গে শতভাগ পালন করার জন্য আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে আপনার কী ধরনের ভূমিকা থাকবে?
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে। দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই অগ্রাধিকার দিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে উন্নত করা। একই সঙ্গে গবেষক শিক্ষকদের সহযোগিতা করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষা কার্যক্রম বিকাশে...
সহশিক্ষা কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের ইতিবাচক দিক। তাই শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি এই কার্যক্রমকে সমানতালে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। আমি চাইব বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন সব ধরনের সহ-শিক্ষা কার্যক্রম সমানতালে চলে। আর সে জন্য আমার শতভাগ পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে।

পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবকে কীভাবে মোকাবেলা করবেন?
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আঞ্চলিক প্রভাব থাকার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিশ্বের বিদ্যালয়। তাই এখানে আঞ্চলিক প্রভাব প্রাধান্য পাবে না। সেখানে প্রাধান্য পাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টি কীভাবে একটি অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হতে পারে। আর সেটা শিক্ষা, গবেষণা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই নিশ্চিত করতে চাই।

শিক্ষক সংকট, অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার চাপকে কীভাবে সামলাবেন?
সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমার লক্ষ্য থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারীসহ সবাইকে নিয়ে এই চাপগুলোকে কাটিয়ে ওঠা। আমি মনে করি বরিশালের সব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, সুধীসমাজ ও পেশাজীবী মানুষের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তাদের কাছে আমার একটাই প্রত্যাশা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের মধ্যে একটি অনন্য শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর এই প্রচেষ্টায় আমি সবাইকে পাশে চাই এবং সহযোগিতা চাই। সহযোগিতা করলে নিশ্চিত সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠছে...
আবরার হত্যাকাণ্ড জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমার কোনো শিক্ষার্থী এরকম হত্যাকাণ্ডের শিকার হোক এটা কল্পনাও করি না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিটি শিক্ষার্থী শিক্ষা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। সেই দিক থেকে বলব আমি যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি সে জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘ্নে করতে পারে এ জন্য সব প্রচেষ্টা থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের বিষয়ে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?
সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নই। বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার যেহেতু সব কিছুকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা সে জায়গা থেকে আমিও চেষ্টা করব। সবারই ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিকমানের নাগরিক হয়ে উঠবে।

সেশন জট দূরীকরণে...
প্রথমেই দেখব সেশন জটের অবস্থাটা কি? এরপর শিক্ষকদের সঙ্গে বসব। এছাড়া একাডেমিক কাউন্সিল আছে তাদের সঙ্গেও কথা বলব। অতিদ্রুত কীভাবে সেশন জট নিরসন করা যায় সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।

নিকট অতীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে...
আমি নিজে যদি সৎ থাকি তাহলে আমার চারপাশের মানুষগুলোকে সৎ রাখার চেষ্টা থাকবে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে আমার প্রতি যে দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি দিয়েছেন সে জায়গা থেকে তাদের মর্যাদা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করব। আর যদি আমি আমার পাশে সৎ মানুষকে পাই তাহলে অবশ্যই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম কোনো বিষয় সামনে আসবে না।

 
Electronic Paper