ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেশের বর্তমান সংকট রাজনৈতিক

মাহমুদুর রহমান মান্না

কাজল রশীদ শাহীন
🕐 ১০:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০১৯

চাকসুর সাবেক জিএস, ডাকসুর ইতিহাসে রেকর্ড দুবারের নির্বাচিত ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না। বর্তমানে তিনি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, জোটের সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। বরাবরই উচ্চকণ্ঠ এই নেতা খোলা কাগজের সঙ্গে বলেছেন দল গঠন, ঐক্যফ্রন্টের তৎপরতা, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, আওয়ামী লীগে যোগদান ও ছেড়ে আসাসহ বর্তমানের বিবিধ প্রসঙ্গে। আলাপচারিতায় কাজল রশীদ শাহীন

আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন কখন?

আশির পরের কথা। আমি যখন বাসদ থেকে বেরিয়ে এসেছি। বসে আছি। একদিন শেখ হাসিনা একটা কথা বললেন, দেখেন, আমি তো সমাজতন্ত্র পর্যন্ত যাব না। আমি ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ পর্যন্ত যেতে পারি। উনি আমাকে স্কেন্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর উদাহরণ দিলেন। আমি বললাম, ঠিক আছে করেন। উনি আমাকে যোগ দিতে বলেছিলেন, আমি বলেছিলাম, আপনার দলটা ভালো নয়। উনি তখন বলেছিলেন, আপনি আমার সঙ্গে থাকেন। দশটা কথা বলেন। ভালো ভালো কথাই তো বলবেন, খারাপ তো আর বলবেন না। ওই দশটার মধ্যে একটা কথাও যদি আমি গ্রহণ করি এবং কাজে লাগাতে পারি, তাহলে তো লাভ হলো। আপনি একা তো কিছু করতে পারবেন না, যত ভালো কথাই বলেন আর যত ভালো চিন্তাই করেন। আমি ওনার এই কথাটা বিশ্বাস করেই যোগ দিয়েছিলাম। সেই যোগ দেওয়াটা ছিল খুবই সাদামাটা। কোনো লোকজন না, কিছু না, শুধু পত্রিকায় একটা বিবৃতি দিলাম। এজন্য তিনি আমাকে খুব রাগারাগি করেছিলেন। বলেছিলেন, আপনি যোগ দেবেন, একটা অনুষ্ঠান করব, তাও হলো না। আমি বলেছিলাম, আপনার এখানে খুব আনন্দের সঙ্গে যোগ দিচ্ছি, তা নয়। আমি আমার রাজনীতিতে পরাজিত হয়েছি বলেই আপনাদের সঙ্গে কাজ করব। এটা কোনো ঘটা করার বিষয় নয়। তারপরও উনি লোকজন ডাকলেন, মিষ্টি খাওয়ালেন। আমি প্রায়ই বলি, আমি দুটি জিনিস ওনার কাছ থেকে শিখেছি। যখন আদর্শ নিয়ে খুব বেশি কপচাতাম, তখন উনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, আদর্শের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন, ঠিক আছে। শুধু খেয়াল করবেন, এগুলো দ্বারা যেন মানুষের আবেগ উদ্যম উচ্ছ্বাস ধ্বংস না হয়ে যায়।

বিষয়টা আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন...
ধরুন, একটা ছেলে এলো, সে তো অত আদর্শ বুঝে না। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিচ্ছে। তাকে যদি আপনি ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করেন, অ্যাই, বঙ্গবন্ধু কী, তা তুমি বোঝ? তাহলে তার আবেগটা নষ্ট হয়ে যাবে। ও এত কথা শুনতে পারবে না, চলে যাবে। এটা আমি পরবর্তীতে ড. ইউনূসের মধ্যে দেখি। তিনিও একই কথা বলতেন। বলতেন, প্রত্যেক মানুষের ভেতরই ইনিশিয়েটিভ আছে, তা জাগাতে হয়। তারপর তাকে গাইড করতে হয়, তাহলে সে তার জায়গায় পৌঁছতে পারে। আমি এখন যে দল করি, আমি যে এখানে সুপ্রিম, এমন কোনো অ্যাটিচ্যুড করি না। নতুনদের বোঝাই যে, তোমরাও পার। আমি আমার দলে এই প্র্যাক্টিসটাই করার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, সমাজতন্ত্র এখানেই ভুল করে। সমাজতন্ত্র ইনিশিয়ালিটিজ নষ্ট করে দেয়।

আমি মার্কসের ‘ডাস ক্যাপিটাল’ অনেকবার পড়েছি। সেদিন একটা পত্রিকায় পড়লাম, একজন মার্কিস্ট বুদ্ধিজীবী বলছেন, ডাস ক্যাপিটালের কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ছিল। আমার কাছেও কিছু বিষয় দুর্বল মনে হয়েছে। প্রথম দিকেই মার্ক প্রোডাকশনের ডিপার্টমেন্ট ওয়ান, ডিপার্টমেন্ট টু- এগুলো বলছেন। আমি বাংলাদেশে কাউকে পাইনি যে বোঝাতে পারে, এটা কী?

আবার ধরেন সারপ্লাস ভ্যালু, আপনি কী দিয়ে জাজ করবেন। আমি আমার ফ্যাক্টরিতে একটা শার্ট বানাচ্ছি। একই শার্ট আপনিও বানাচ্ছেন। দুটোরই বিদেশি বায়ার। আমি আমার এই শার্টের জন্য ওর থেকে মজুরি বা সিএম পাচ্ছি ১২ ডলার। আপনি বার্গেইন করে পেলেন ১৬ ডলার। এই যে চার ডলার এক্সট্রা। এটা কে পাবে? এটা আমার পাওনা, আপনি তো পারেননি। এখন শ্রমিক যদি বলে, এই চার ডলার আমার পাওয়া, তাহলে তো আমার শ্রমিকও বলবে, আমাকে চার ডলার দিতে হবে। কিন্তু আমি কোথা থেকে দেব? ওই ভদ্রলোক এই জায়গায় এসে ব্যাখ্যা করেছেন, মার্কস যখন সারপ্লাস ভ্যালু ব্যাখ্যা করছেন তখন প্রযুক্তি, এন্টারপ্রেনারশিপ বা উদ্যোক্তাগিরি, বার্গেইন করা, মার্কেটিং করা- এগুলো তার কনসেপ্টেই ছিল না। ফলে উনি এগুলোর সমাধান বা ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তার মানে এই যে ইনিশিয়েটিভ, এটা আপনি মার্কসের কাছে পাবেন না। আজকে কম্পিউটারের যে আবিষ্কার, সেখানে নানা সফটওয়্যার বানানো হচ্ছে। বিশাল ক্যালকুলেশন করতে গিয়ে আপনার কোনো পরিশ্রম হচ্ছে না। জাস্ট ডাটাগুলো দিয়ে এক মিনিটের মধ্যে ফলটি পাচ্ছেন। যে এই সফটওয়্যারটা আবিষ্কার করল, আপনি যদি তাকে স্পেশাল রিওয়ার্ড না দেন, তাহলে সে তো আর কন্টিনিউ করবে না। মার্ক্সইজম এটাকে এলাও করছে না। সে বলছে, সবই হলো সামাজিক সম্পত্তি। তুমি নিজের জন্য করছ না, সোসাইটির জন্য করছ না। এবার ও তো আর কিছু করবে না। এজন্য হোল সমাজতান্ত্রিক বলয় ফেল করেছে। কারণ তাদের কোনো প্রোডাক্টিবিটি নেই। এগুলো নিয়ে আমার প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। আমি জাসদের কাছে প্রশ্ন করেছি, বাসদের কাছে করেছি; কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। তখনই আমি বুঝেছি, এদের সঙ্গে থেকে লাভ নেই। তাই ঝগড়াঝাটি করে নিজের মতো করে চলে এসেছি।

আপনি বলছিলেন, শেখ হাসিনার কাছে দুটি জিনিস শিখেছেন। আরেকটা কী?
একটা হচ্ছে মানুষের ইনিশিয়ালিজ। ক্রিয়েটিভিটি। আরেকটা শিখেছি, সেটা তেমন ভালো জিনিস না, তবে শিখেছি। শেখ হাসিনা যখন আসেন, তখন প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল, উনি রামের খড়ম। খড়ম রেখে দেশ চালাবে অন্যরা। কিন্তু এই খড়ম এক সময় নিজেই রাম হয়ে গেল।

তার মানে যারা নিয়ে এসেছিল, তাদের উদ্দেশ্য এটাই ছিল?
এগুলো তো তখন পত্র-পত্রিকায় লেখা হতো। উনি তো কখনো রাজনীতি করেননি। সুতরাং দল চালাতে হবে অন্যদেরকেই- এমন আরও কত কী! উনি কতদিন এগুলো আমার সঙ্গে শেয়ার করেছেন। বলেছিলেন, ‘ওরা মনে করে আমি কিছুই বুঝি না, ওদের কথা মতো চলব।’ কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। এটা একটা অসাধারণ যোগ্যতা। এটা আমি শিখেছি। এটার পজিটিভ দিকও আছে, নেগেটিভও আছে। ডেফেনেটলি নেগেটিভ দিকটা আমি নেব না। নেগেটিভ দিক বলতে কর্তৃত্বপরায়ণতাকে বোঝাচ্ছি। এও ঠিক, দলের মধ্যে লিডারশিপ বলে একটা জিনিস আছে। আমরা গণতন্ত্র বলছি বটে, কিন্তু সবার ওপর সবার সমান কর্তৃত্ব হলে তো দল চলবে না। এই প্র্যাক্টিসটাও আমি তার থেকে বুঝেছি। তাকে এটা শেয়ার করিনি।

আওয়ামী লীগে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই আপনার একটা আউট গোয়িং মুড ছিল?
আমি তো আওয়ামী লীগ করতে চেয়েছিলাম। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেখার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর নয়। তখন তো আমু, রাজ্জাক, সুরঞ্জিত, তোফায়েলের অবস্থা আমার থেকেও অনেক খারাপ ছিল। পরে ওরা তো অনেকে মন্ত্রী-টন্ত্রী হয়েছে। একবার আমি প্রধানমন্ত্রীসহ গাড়িতে করে রংপুর যাচ্ছি। কিছুদূর যাওয়ার পর উনি বললেন, সামনে নাসিম ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি চুপ করে আছি, দেখি উনি কী করেন। গাড়ি দাঁড়াল না। চলে গেল। সেই নাসিম ভাই তো মন্ত্রী হয়েছে।

তার মানে, আপনার নিজস্ব এনালাইসিস থেকে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছিল? এখানে কোনো ঘটনা জড়িত না?
না না। ঘটনা কিছু নেই। শেখ হাসিনা সেদিনও, ওই যেদিন আমরা ডায়লগে গেলাম ঐক্যফ্রন্টের হয়ে, সেদিনও উনি সবার কাছেই আমার কথা বলেছেন। ওপেনলি বলেছেন, এ তো ভালো ছেলে একটা। সাংগঠনিক সম্পাদক বানানোর পরও এমনটা বলতেন। বলতেন, ও লেখে ভালো, বলে ভালো, ব্যবহারও ভালো। আমি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পরে, জনসভায় আমাকেই ডাকত সবাই।

এখন আপনার নিজের একটা দল আছে। দল তৈরি করার অভিজ্ঞতা কেমন?
গণতন্ত্র যদি থাকত, তাহলে আমি ভালো কিছু করতে পারতাম। যেতেই তো পারি না কোথাও। একটা ভয় ঢুকে গেছে মানুষের মনে! একটা জেলায় গেলাম। লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বললাম। ভালো ভালো লোক পেলাম। কিন্তু কমিটি ডিকলারেশন করতে পারলাম না। ভয়ে কেউ আসতে চায় না।

সিরাজুল আলম খানের কথা বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্য পুরুষ...
রহস্য পুরুষ কেন হবেন? আমি তো মনে করি, স্বাধীনতা আন্দোলনে অনেক বড় কন্ট্রিবিউশন সিরাজুল আলম খানের। জয় বাংলা স্লোগান। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, এসব তো উনিই বলেছিলেন। পুরো ছাত্র আন্দোলন তো উনিই চালিয়ে নিয়েছেন। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না এসব।

রাজনীতিতে তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি কেন?
শেখ মুজিব তো তাকে খুবই ভালোবাসতেন। সম্মানও করতেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর তো আলাদাই হয়ে গেলেন উনি। শেখ মুজিবের দুর্বলতা ছিল মনি, তার ভাগ্নে।
দ্বন্দ্বটা তো মনি ভাইয়ের সঙ্গে সিরাজ ভাইয়ের ছিল। শেখ মুজিব দুটোকে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু ভাগ্নের দিকে তার টানটা বেশি ছিল।

নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে আপনারা যে ঐক্য করলেন, তার অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
ঐক্য হওয়ার পর বিএনপি মনে করেছিল, ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি। ক্ষমতায় চলে যাবে তারা। কনফিডেন্সের কথা জানি না, তবে তারা এমনটা মনে করত। তাদের পরবর্তী রিঅ্যাকশন তো তাই। এটা যে একটা আন্দোলনের অংশ, যেটা আমরা সবসময় বলতাম, তারা সেভাবে নেয়নি এটাকে।

প্রধানমন্ত্রী কে হবে, ওই প্রশ্নটা...
ইলেকশনে যদি জিতি, তাহলে মেজরিটি পার্টি তো বিএনপিই হবে। সুতরাং বিএনপি থেকেই প্রধানমন্ত্রী হবে। আমাদের তো কোনো অসুবিধা ছিল না।

নির্বাচনটা যে ওভাবে টার্ন নিচ্ছে, আপনারা কি আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিলেন?
একদিন আগে বগুড়াতে ছিলাম আমি। ওখানে এক আর্মি অফিসার ছিলেন। তারা তো বলেই দিয়েছিল, আমরা কিন্তু এটা করছি। পুলিশও তেমনটা বলেছে।

আপনাদের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে কোথাও থেকে প্রতিরোধ হলো না কেন?
আমার এলাকা থেকেই তো হয়েছে। ছয়টা সেন্টারে আমি জিতেছি। নারীরা পর্যন্ত লাঠিসোটা, দা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, আসো দেখি, কীভাবে কেন্দ্র দখল করো। আমার এলাকায় বিজিবি গুলি করেছে, নিউজ তো আসেনি। এসব হয়েছে রাত ১২টার পর থেকে। আসলে কি, যুদ্ধ করে তো জনগণ পারবে না।

আমরা শেষের দিকে। আপনার নিজের যদি কিছু বলার থাকে...
দেশে এখন খুব বড় রকমের সংকট। আমি আগেই বলেছি, এটা বড় রকমের রাজনৈতিক সংকট। আর রাজনীতিকে আমি একটা দর্শনের জায়গা থেকে দেখতে চাই। রাজনীতি সমাজ গঠন করে, সমাজ ভেঙে দেয়, সমাজকে এগিয়ে নেয়। পলিটিক্স ইজ দ্য কমান্ডার অব এ সোসাইটি।

ক্ষমতায় যারা আছে তারা লুটপাট করে বেড়াচ্ছে আর অপজিশনে যারা আছে তারা এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আমার কথা অনেকটা হতাশার মতো মনে হবে; কিন্তু আমি হতাশার কথা বলছি না। এর থেকে খারাপ অবস্থায় থাকার পরও পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মানুষের অপরিসীম ধৈর্য্য আছে, সহনশীলতা আছে, সহিষ্ণুতা আছে, সৃজনশীলতা আছে। উদ্যোগও আছে। এই মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই।

রাজনৈতিক দলগুলো যদি যথাযোগ্য উদ্যোগ নিতে পারত, তাহলে সব আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকত। মাঝে মাঝে ভয় হয়, এগুলো না জানি আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়! আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণহীন ঘটনা, অরাজনৈতিক ঘটনা অনেক দেখেছি। সেরকম কিছু না হোক। এজন্য রাজনৈতিক দল, সামরিক শক্তিসহ সবাইকেই আমি এই বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাব।

(শেষ পর্ব)

 
Electronic Paper