ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘এখন খেলা যাবে না আমাকে নিয়ে’

ড. কাজল রশীদ শাহীন
🕐 ১০:২৬ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০১৯

বিদিশা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী।
আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হলেও এ সম্পর্ক ঘিরে আলোচনা বন্ধ হয়নি কখনো।
‘রহস্যময়ী নারী’র তকমাও লেগেছে বিদিশার গায়ে। 
খোলা কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপে উঠে এসেছে এরশাদের সঙ্গে
প্রেম-ভালোবাসা-বিচ্ছেদ, জাতীয় পার্টির রাজনীতি, একমাত্র সন্তান
এরিকের কথা। সঙ্গে ছিলেন ড. কাজল রশীদ শাহীন

কেমন আছেন? সময় এখন কীভাবে কাটছে?
ভালো আছি। আমি তো আসলে কাজকর্মের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করি। কখনো কখনো খুঁজে খুঁজে কাজ বের করি, যাতে ফ্রি না থাকতে হয়। বিদিশা ফাউন্ডেশনে প্রচুর কর্মকা- থাকে, এখন রোজার মাসে তো আরও বেশি। তাছাড়া কিছু ব্যবসা বাণিজ্য আছে। বাকি সময় পলিটিক্সের খোঁজখবর রাখি, নিউজ পেপার পড়ি।

রাজনীতির খোঁজ কীভাবে নেন?
এখন তো সবচেয়ে বড় মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া। নিউজ পেপার আছে, অনলাইন ম্যাগাজিন আছে।

কোনো নির্বাচনের সঙ্গে কি আপনি সরাসরি জড়িত ছিলেন?
আমি ইলেকশন করিনি। তবে ইলেকশন দেখেছি কাছ থেকে। আমার আসলে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আমি তো ছোটখাটো মানুষ। বড় বড় পলিটিশিয়ান যারা আছেন, ইলেকশন নিয়ে তাদের ভালো অভিজ্ঞতা থাকতে পারে।

সেটা তো আপনার বিনয়...
না, না। ইলেকশনে যুক্ত থাকলে তো জানতেন। পলিটিক্স তো লুকিয়ে করা যায় না। এখন ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া আছে তো- লুকিয়ে লুকিয়ে এখন কেউ কিছু করতে পারে না।

লুকিয়ে রাজনীতি করার প্রবণতা আছে অনেকের...
অনেকে চেষ্টা করে। যারা নেপথ্যে থাকে তারা কারও না কারও হয়ে রাজনীতি করে। তবে আমার ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না। যদি ভালো কাজ হয়, তাহলে আমি আছি কিন্তু পয়সা দিয়ে আমাকে কেউ কিনতে পারবে না। টাকার বিনিময়ে আমাকে কেউ সিট ছেড়ে দিল আর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমি এমপি হয়ে গেলাম- এগুলো আমাকে দিয়ে হবে না। আমার কথা হলো, দেশ-রাষ্ট্রের জন্য যা ভালো আমি তাই করে যাব।

বাইরে একটা পার্সেপশন আছে, এখনো জাতীয় পার্টির অনেক কিছু আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন...
কিছু মানুষ তো এটা বলবেই। ফেসবুকে প্রচুর ফলোয়ার আছে আমার, তারা আমাকে নিয়ে মাতামাতি করে, নানা কথা বলে, আমি তো তাদের সেসব শিখিয়ে দিই না। আমি কোথাও দাঁড়ালে জনসমুদ্র হয়ে যাবে, সেই পপুলারিটি আমার আছে- ওইটাই তো আমার কনফিডেন্স। এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেছি। তাই জাতীয় পার্টির ওপর আমার ব্লেসিং সব সময়ই থাকবে। পার্টির একজন কর্মী যদি আহত হয়, আমি মনে করব আমার এরিক আহত হয়েছে। কারণ জাতীয় পার্টির কর্মী আমার সন্তানের মতো। প্রত্যক্ষভাবে, পরোক্ষভাবে আমি জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকবই। জাতীয় পার্টিতে তো আমার বদনামের কোনো রেকর্ড নেই।

কিন্তু আপনার ব্লেসিংয়ে জাপায় অনেকের ভাগ্য খুলে গেছে...
আসলে এটা জাতীয় পার্টি বলে নয়, আমার জীবনটাই এমন। আমি গর্ব করেই বলতে পারি- আমাকে একটা ফাঁকা দোকানে নিয়ে যান, দোকানটা ভর্তি হয়ে যাবে। রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান, এত লোক হয়ে যাবে যে খাবারই খাওয়া যাবে না। এটা সত্যি যে, আমি ভাগ্য নিয়ে এসেছি। আমি বাই বর্ন পপুলার। আমার নামের ভেতর নিশ্চয়ই কোনো ক্যারিশমা আছে, তা না হলে আমি নিজের নামইবা নিজে দেব কেন বা আমাকে আমার নামেই সবাই চিনবে কেন? আমার মধ্যে সব সময় একটা পজেটিভ ভাইব্রেট করে।

এটা কীভাবে হয়েছে বলে মনে হয় আপনার?
আধ্যাত্মিক কিছু আছে হয়তো। আল্লাহ পাকের নিশ্চয়ই কোনো রহমত আছে। খুব ছোটবেলায় মওলানা ভাসানী নাকি আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। এটা আমি আমার বইতেও লিখেছি। তখন আমার বয়স ছয়-সাত মাস বা এক বছর। উনি কোলে নিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। আমার দাদা রাজনীতি করতেন, তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর কাছে। তাছাড়া আমার জন্য বাবা-মায়ের আশীর্বাদ আছে, মানুষের আশীর্বাদ আছে।

আপনি কি আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করেন?
খুবই বিশ্বাস করি। আমি যেটা করতে চাই, মনে হয় ওটা হয়ে যাবে। আমার মনে হয় আমি আগে থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারি। এখন যেমন অ্যাস্ট্রোলজি নিয়ে পড়াশোনা করছি। এটা আমার পছন্দের একটা সাবজেক্ট।

এরশাদের সঙ্গে আপনার পরিচয় বা সম্পর্ক...
ওগুলো তো মিরাকেলি হয়েছে, কোনো প্ল্যান করে আসেনি। আমার জন্ম হয়েছে একটা সাধারণ পরিবারে, শিক্ষকের ঘরে। সো আর দশটা বন্ধু-বান্ধবী যেভাবে বড় হয়েছে আমিও তেমনিই বড় হয়েছি। তবে বন্ধু-বান্ধবীরা বলে, আমি নাকি একটু স্পেশাল ছিলাম, একটু ডিফরেন্ট ছিলাম। তো সেটাই আল্টিমেটলি প্রমাণ হলো।

এরশাদের সঙ্গে বিয়েটাও আপনি মিরাকেলের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, নাকি অঙ্ক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
না। অঙ্ক করার কি আছে। আমার বয়সই বা কতটুকু ছিল। ওটা পিওর প্রেম ছিল। সঙ্গে মিরাকল তো ছিলই। না হয় বাবা সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে লন্ডনে পাঠাল আমাকে, আর আমি ওখান থেকে সব ছেড়েছুড়ে চলে এলাম এরশাদের প্রেমে পাগল হয়ে। যাই হোক, আমি এটাকে নেগেটিভভাবে দেখি না। আমি আমার অতীত থেকে শিক্ষা নিতে চাই।

কেউ প্রেম করে কেউ প্রেমে পড়ে...। একজন পড়ে, আরেকজনকে পড়াতে বাধ্য করে। আপনাদের মধ্যে কে পড়েছিল?
এরশাদ সাহেব আমাকে বাধ্য করেছিলেন। উনার প্রেমের কাছে পৃথিবীর কেউ না করতে পারবে বলে মনে হয় না। উনিই বিয়ে করেছিলেন, উনাকে আমি জোর করে বিয়ে করিনি। নিশ্চয়ই আমার ভেতর তিনি ওই কোয়ালিটি পেয়েছিলেন।

আপনাকে বাধ্য করেছিলেন!
নিশ্চয়ই। তার প্রেম এত স্ট্রং ছিল যে, প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব ছিল না। এটা আমি কেন, যে যে নারী তার প্রেমে পড়েছে, সবাই একই কথা বলবে। পরিবেশ, পরিস্থিতি, সমাজের কারণে এখন তারা শিকার করবে না হয়তো। কিন্তু আমি তো স্বীকৃত, বিবাহিত, তার সন্তানের মা। আমার তো লুকোচুরির কিছু নেই। উনি আমাকে নিয়ে রংপুরে প্রচুর ঘুরেছেন। আমি দেখেছি উনার কী পপুলারিটি! ব্রেকাপ হওয়ার পর আমি উনার নাম থেকে বাবার নামে ফেরত যাই। চাইছিলাম, বিদিশা সিদ্দিক নামেই সবাই চিনুক। পাসপোর্টে নাম চেঞ্জ করলাম কিন্তু মানুষ চেঞ্জ হতে দেবে না। দেশের যেখানেই যাই, সবাই বলে- ওই যে এরশাদের বউ, তকমা গায়ের মধ্যে লাগানো থাকবেই। আমি বলি, উনার সঙ্গে আমি এখন আর নেই। তারা বলে, আপা আপনারা ঠিক হয়ে যান। মানুষ ধরেই নিয়েছে, এই গিঁট খুলতে হবে। বিদিশার সঙ্গে এরশাদই যায়, আর কিছু যায় না। উনাকে ভালোবেসেই এমনটা করে, আমাকে না।

জনগণের যে চাওয়াটা, এটাকে অনার করা যায় না?
কীভাবে আমি অনার করব? উনার বয়সের কথা চিন্তা করেন। উনি তো এখন মৃত্যুপথযাত্রী, হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। আমার কষ্ট লাগে, মায়া লাগে কিন্তু আমি তো উনাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে পারব না। উনি আমার সন্তানের পিতা।

শেষ মুহূর্তেও উনি জেনে গেল, আপনি সঙ্গে আছেন...
সেটা নিশ্চয়ই জানেন। আমি তো একাই আছি, অন্য কাউকে তো সঙ্গী করিনি। সেটা কি উনি বোঝেন না? নিশ্চয়ই বোঝেন। না বুঝলে উনি আমার সন্তানকে এত প্রায়োরিটি দেবেন কেন? উনি তো আমার সন্তান বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। উনার সমস্ত পৃথিবী তো এই দিকে, আর তো কিছু দেখছি না!

আপনার প্রতি যে প্রেম-ভালোবাসা ছিল, সেটা কখনই দুর্বল হয়নি তাহলে?
না, হয়নি। উনি নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন। উনাকে ব্যবহার করা হয়েছিল, ট্র্যাপ্টড হয়েছিলেন। খারাপ রাজনীতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। উনি ইচ্ছে করে সবকিছু করেছেন, আমি মনে করি না। এরশাদ সাহেবের প্রচুর ভালো দিক আছে।

উনি কি কখনো ভুল স্বীকার করেছিলেন?
মুখের ভাষা বা কথায় কি সব হয়? প্রেম কি কাগজে সিগনেচার দিয়ে বাতিল করে দেওয়া যায়? সব ডিভোর্স কি কাগজ দিয়ে হয়ে যায়? হয় না। একটা বন্ধন তো আছে আমার আর উনার মধ্যে। সেটা এরিক।

আপনার সঙ্গে তো মাঝে মাঝেই দেখা হয়?
এটা তো পুরনো কথা। দেখা হতেই পারে, কেন হবে না? সন্তানের ভালোর জন্য, ভবিষ্যতের জন্য বহুবার দেখা হয়েছে। উনার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য দেখা হয়। এটা তো স্বাভাবিক। বাচ্চার পড়াশোনা নিয়ে কথা হয়। একবার হজে গিয়ে ফোন দিলাম, খুব খুশি হয়েছেন। ঈদের পাঞ্জাবি পাঠাচ্ছি। সোশ্যাল সম্পর্ক বা সন্তানকে ঘিরে যেটুকু দরকার, সেটুকু তো আছেই।

এরিক আপনার কাছে আসে?
অবশ্যই আসে। তবে রাতে বাবার সঙ্গে থাকে। এটা নিয়ে কোনো সময়ই আমি দ্বিমত করিনি। সে বাবা-মা উভয়ের প্রতিই দায়িত্ব পালন করে। এখন ওর বাবার অবস্থা খুবই খারাপ, সেটা আপনারাও জানেন। দোয়া করি, উনি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকুন। কিন্তু উনাকে তো মানুষই মেরে ফেলছে।

কী রকম?
সবাই আসে সিগনেচার নিতে। সিগনেচার বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, তারপরও উনাকে ছাড়ছে না। সবকিছুই স্বার্থের জন্য। কিন্তু উনার খোঁজখবর নেওয়ার কেউ নেই। দলের লোকজনও আসে না। পরিবারের মধ্যে ভাইরা খোঁজখবর নেন। তবে ভাইও তো এখন পলিটিক্স নিয়ে ব্যস্ত। যেহেতু কাদের ভাই এখন জাতীয় পার্টির দায়িত্বে আছেন।

সবাই বলে, কাদের ভাইয়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক চমৎকার...
রাজনীতির ঊর্ধ্বে পরিবার। উনার পরিবারের কারও সঙ্গে আমার কোনো দিন ঝগড়াঝাটি হয়নি। আর কাদের সাহেব একজন মার্জিত, শিক্ষিত, পরিশীলিত মানুষ। উনি কোনোদিন আমাকে নিয়ে, আমাদের নিয়ে কটু কথা বলেননি। কোথাও কোনো প্রোগ্রামে দেখা হলে বলেছেন, কেমন আছেন? আমিও একইভাবে কথা বলি। উনার পরিবার এমনকি এরশাদ সাহেবের সঙ্গেও কোনোদিন কোনো ঝগড়াঝাটি, হইচই, উচ্চবাচ্য হয়নি। উনার ছোটবোনকে আমি মা ডাকতাম। একবার ভাবেন, সম্পর্কে আমার ননদ কিন্তু আমি ডাকতাম মা। সম্পর্কটা ছিল এ রকম।

অনেকে বলে, জাতীয় পার্টির দায়িত্ব...
আমি তো স্পষ্ট বলে দিয়েছি, জাতীয় পার্টি সন্তানের মতো। জাতীয় পার্টিকে নষ্ট করা যাবে না। জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। রংপুরকে দেওয়ার এখনো অনেক কিছু আছে। এরশাদ সাহেব চেষ্টা করেছেন। যদি এরশাদ সাহেব না দিয়ে থাকেন, আমি শিওর কাদের সাহেব দেবেন। আমরা তো সঙ্গে আছি।

আপনার থাকাটা আরো প্রত্যক্ষ হলে ভালো হতো না?
যদি উনারা চান। আমি তো নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারি না। যদি তৃণমূল আমাকে চায়, যদি রংপুরের মানুষ আমাকে চায়, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের সম্মান করব। আমি বারবার বলেছি এ কথা। কিন্তু একজন দুজনের কথায় কান দিয়ে লাফালাফি করব কিছুদিন পর আবার পিছলে পড়ব-এসবের মধ্যে আমি নেই। আমি মনে করি সংগঠনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এরশাদ জীবিত অবস্থায় সেরকম কিছু করে যেতে পারেন না?
আমি কখনো চাইনি। উনি তো উনার কাজ ভালোভাবেই করেছেন এতদিন। আমার হয়তো প্রয়োজন হয়নি। তাছাড়া অনেকেই তো আছে। আগে মানুষ লুকিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করত, এখন ওপেন। আমার ফেসবুকে যান, দেখবেন জাতীয় পার্টির অমুক থানা, অমুক নেতা, অমুক কর্মী ওপেন কথা বলছে।

প্রেসিডিয়াম মেম্বারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় আপনার?
অবশ্যই, কেন হবে না। কিন্তু আমি তো নাম বলব না। কাউকে বিব্রত করব না আমি।

তারা কি আপনাকে রাজনীতিতে আসতে বলে?
বলে। কিন্তু তারা চাইলেই তো হবে না। আমি তো বলছি, গুটিকতক রাজনীতিকের জন্য রাজনীতি করব না আমি। একটা সময় রাজনীতি করেছি এরশাদ সাহেবের হাত ধরে, চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে দিয়েছে, ব্যাস। ফরেন সাইড ভালো বুঝতাম, ওইটাই করতাম। কিন্তু রাজনীতির মূল ফাউন্ডেশনটা হচ্ছে আপনার এলাকা, আপনার জনগণ, তৃণমূল শক্তি। আমি চাই তৃণমূল থেকে সেই ডাকটা আসুক। তারা যদি আমাকে চায় তাহলে রাজনীতিটা আবার করব।

তৃণমূলকে তো সংগঠিত করতে হয়, সংগঠিত হয়ে যায় না...
নিশ্চয়ই তৃণমূলকে সংগঠিত করা হবে। তৃণমূলের একটা শক্তি এমনিতেই থাকে। যেমন জিএম কাদেরকে একবার চেয়ারম্যান করে আবার বাতিল করে দেওয়া হলো। তারপর দেখলাম, রংপুরের মানুষ এসে চেপে ধরছে, উনাকে আনতেই হবে। এটাই তো উনার শক্তি যে তৃণমূল চাচ্ছে।

দেশের রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে?
সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা দুটোই আছে। কিছু কিছু ইস্যুতে সরকার ভালো কিছু করতে পারেনি। যেমন কৃষকদের ব্যাপারটা। তাদের সম্মান করতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে। দেশটা তো কৃষিপ্রধান দেশ। জঙ্গি ইস্যুতে সরকার সফল। আবার দেখেন তারা কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ করতে পারছে না। আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হলে তিনদিনের মধ্যে ধর্ষণ বন্ধ করে দিতাম। স্ট্রেট ফাঁসি দিয়ে দিতাম। শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বসে থাকলে হবে না, কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবে কৃষক নিয়েও ভাবতে হবে। ক্ষমতায় গেলে আমি আগে রংপুর থেকে ‘মঙ্গা’ শব্দটা বাদ দিতাম। মঙ্গা তো অনেকখানি চলেও গেছে কিন্তু মোটেও রাখতাম না।

দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কেমন ভূমিকা পালন করছে?
লিমিটেশন তো আপনিও জানেন, আলাদা করে বলার তেমন কিছু নেই। আরও জোরালো ভূমিকা পালন করা উচিত। সরকারের ভালো-মন্দ দুটো নিয়েই পার্লামেন্টে আলোচনা করতে হবে। গৃহপালিত দল হয়ে থাকলে তো চলবে না। সরকারকেও বুঝতে হবে, তারা যদি আগামীতেও ক্ষমতায় থাকতে চায় তাহলে তাদের কর্মকা-ের মাধ্যমেই তা প্রমাণ করতে হবে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিও যদি দালালিটা বন্ধ করে নিজের পায়ে দাঁড়ায় তাহলে তো ভালো। কাদের সাহেবরা তো আছেন, উনারা ভালো বুঝবেন।

এখন জাপার যে রাজনীতি তাতে দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে না?
যা নষ্ট হওয়ার তাতো হয়েছেই। এখন ইয়াং জেনারেশনকে সামনে আনতে হবে। নতুন মুখ তৈরি করতে হবে। শুধু জাতীয় পার্টি নয়, সব দলকেই এটা করতে হবে।

বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আপনার কী মতামত?
এ নিয়ে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি বিএনপি নিয়ে স্টাডিও করি না। আমর সব ভাবনা জাতীয় পার্টি নিয়ে। বিএনপি অনেক বড় দল, তাদের নিয়ে ভাববার জন্য তাদের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট। তবে তারা তাদের ভুলের মাশুল দিচ্ছে, এটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছে। এখন তারা যদি ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, তাহলে তো ভালো। তাদেরকেও ইয়াং জেনারেশন নিয়ে আসতে হবে। আগের জেনারেশনকে তো খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপি হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের একটা দল। তাই তারা নিঃশেষ হয়ে যাবে এটা ভাবা ভুল হবে। যারা বিএনপি করে, তারা তো কোর্ট কাছারির মধ্য দিয়ে গত দশ বছর কাটালো। স্বাভাবিকভাবে তারা অনেকখানি দুর্বল হয়ে গেছে, অনেক নেতাকর্মী মারা গেছে, কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মালয়েশিয়াতে এমন একটা ঘটনার সাক্ষী আমি। জুতা কিনতে গিয়েছি, একটা ছেলে জুতাটা পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বললাম, তুমি কি বাঙালি? বলল, হ্যাঁ। বললাম, পায়ে হাত দিও না, তুমি আমার ছেলের মতোন। কথায় কথায় সে বলল, আমি বিএনপি করতাম। এখানে এসেছি বিপদে পড়ে। সবকিছু বিক্রি করে জীবনের ভয়ে চলে এসেছি। এগুলো দেখলে তো খারাপ লাগে।

অনেক দিন জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেছেন, আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমি তো পজেটিভই দেখি। এতদিন হয়ে গেল আমার নামে কেউ বদনাম দিতে পারেনি। তখন অবশ্য এত চাঁদাবাজিও ছিল না। পদের বেচাবিক্রি হতো না। এরশাদ সাহেবের হাত ধরে রাজনীতি শিখেছি। প্রোগ্রামগুলোতে আমাকে ইনট্রোডিউস করেছেন। সারা বাংলাদেশে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। দুঃখের স্মৃতিও আছে, ওরা আমাকে চোর উপাধি দিয়ে বের করে দিল। এটা কোনোদিনও ভুলব না। এ জন্য নিজের নির্বুদ্ধিতাকেও দোষ দিই, আমি তো খুব ক্লেভার পলিটিশিয়ান ছিলাম না। তবে এখন আমি অনেকখানি মেচিউরড। এখন আমাকে নিয়ে খেলতে হলে বুঝেশুনে খেলতে হবে, পর্দার আড়ালে আমাকে নিয়ে খেলতে দেব না। গত চৌদ্দ বছর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি, সংবিধান মুখস্থ করেছি, দেশ-বিদেশের পলিটিকস নিয়ে পড়াশোনা করেছি।

আপনার অভিপ্রায় এরশাদ সাহেবকে জানাতে সমস্যা কোথায়?
উনার নিজের অবস্থাই তো ভালো না। যে ডিসিশনগুলো উনি নিচ্ছেন, সেগুলো ঠিক উনি নিচ্ছেন না। উনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া কোনো ডিসিশন নিয়ে উনি স্থির থাকতেও পারছেন না। আর আমি আমার কথা বলতে যাব কেন, সময় হলে, পরিস্থিতি তৈরি হলে আমিই আমার কাজ করব।

জাতীয় পার্টির বাইরে গিয়ে কখনো রাজনীতি করবেন?
প্রশ্নই আসে না। আমি কেন বিএনপি করতে যাব, কেন আওয়ামী লীগ করতে যাব। আর নিজে কোনো দল প্রতিষ্ঠা করার মতো স্টুপিড আমি নই। করলে অনেক আগেই করতে পারতাম। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির বাইরে কোনো দল হবে না। যারা আসে তারা টিকবে না। আজকে বিএনপির কাছে যাবে তো কাল আওয়ামী লীগের কাছে।

(চলবে)

 
Electronic Paper