ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাস্তবধর্মী শিক্ষাই হতে পারে আন্তর্জাতিক মানের

ওয়ালিয়ার রহমান
🕐 ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০১৯

প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার প্রথম স্থান অর্জনকারী এই শিক্ষক দীর্ঘ ২৫ বছর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে কাজ করেছেন। তিনি খুলনা, ব্র্যাক, নার্থসাউথ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিসহ নামকরা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়ালিয়ার রহমান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে আপনার অনুভূতি কেমন?
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম : একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য তখনই নিয়োগ দেওয়া হয় যখন কাজের পরিধি অনেক বেশি থাকে। কানাডিয়ান বিশ^বিদ্যালয়কে প্রথম শ্রেণির বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চান এখানকার বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। যেহেতু এ বিশ্ববিদ্যাললয়ের বয়স মাত্র ২.৫ বছর সেহেতু অনেক কাজ খুব দ্রুত করতে হচ্ছে, বিশেষ করে মানসম্মত শিক্ষাদান, স্থায়ী ক্যাম্পাস, নিয়মনীতির পূর্ণ প্রয়োগ, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কাজ। আমি মনে করি, একটি বিশ^বিদ্যালয়ে শুরুর দিকে যেসব সাপোর্টিং ফ্যাসিলিটিস থাকা দরকার সেগুলো কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির রয়েছে। সে কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আমি আশাবাদী।

মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন?
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম : মানসম্মত শিক্ষা বলতে যা বুঝায়, তা ক্লাসরুমের শিক্ষা থেকে শুরু হয়। এখানে যথাযথভাবে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রয়োগমুখী ক্লাস, ইউজিসির নিয়ম মেনে কোর্স প্রোফাইল তৈরি, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে আসে ও শিখে, প্রশ্ন উত্তরের ব্যবস্থা আছে, সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া এবং ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
দ্বিতীয়ত, মানসম্মত শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষক দ্বারা ইফেকটিভ টিচিং মেথডের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, সব বিষয়ে সাপোর্টিং ফ্যাসিলিটিস রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যেন ব্যবহারিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে কোনো সমস্যায় না পড়ে। এ ছাড়া, আমরা যেসব গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি, জব মার্কেটে তাদের কি অবস্থা হবে সেটাও আমরা জানার ও বুঝার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। সে অনুযায়ী, এ বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে।

গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা কেমন?
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই থেকে তিন ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য। যেমন ভর্তির সময় সব ছাত্রদের জন্য ৪০ শতাংশ স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া, এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ১০ থেকে ১০০ ভাগ টিউশন ওয়েভার দেওয়া হচ্ছে। আর যারা আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তারাও ভালো রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে মেরিট স্কলারশিপ পেয়ে থাকে। যে শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় দুটি গোল্ডেন এ প্লাস রয়েছে সে ১০০ ভাগ স্কলারশিপ পায় এবং প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার বৃত্তি (ংঃরঢ়বহফ) পেয়ে থাকে, যা বাংলাদেশে প্রথম।

জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার জন্য বরাদ্দ কেমন এবং এটা কি যথেষ্ট?
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম : বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনো কোনো জার্নাল প্রকাশিত হয়নি। তবে অদূর ভবিষ্যতে জার্নাল প্রকাশ করা হবে। ইউনিভার্সিটির সবগুলো স্কুল থেকে জার্নাল প্রকাশের ব্যাপারে আমরা এখন থেকে কাজ করছি। রিসার্চ ও জার্নাল নিয়ে এখনো কোনো প্রপ্রোজাল আসেনি, তবে কোনো প্রফেসর বা শিক্ষক রিসার্চ প্রপ্রোজাল নিয়ে এলে বিশ্ববিদ্যালয় সেটা মূল্যায়ন করবে। এ ছাড়া, শিক্ষক বা ছাত্ররা যদি কোথাও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করে থাকে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ এবং পাঠদানের ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে বাধ্যবাধকতা আছে কি? এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম : সরকারের নিয়ম হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালকে পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। আর নতুন বিশ^বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এটি সাত বছর। এ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে পূর্বাচলে তিন একর জায়গা ক্রয় করেছে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য। স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি কাজ চলছে। নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরির ব্যাপারে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম : মুক্তিযুদ্ধ একটি ইতিহাস, একটি অধ্যায়। বাংলাদেশকে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সবসময় সচেষ্ট। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ নামে একটি কোর্স আছে, যা সব শিক্ষার্থীকে পড়তে হয়। এ ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলোচনা সভা ও বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনসহ নানাবিধ সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত রাখা হয়।
শুধু তাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু নামে একটি কর্নার আছে, সেখান থেকে ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি ও মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিস্তারে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা...
প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম : একটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি সত্যিকার অর্থে জ্ঞানের সূতিকাগার হতে চায় তাহলে আধুনিক বিশ্বে সেটিকে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড একটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে। আইটি ডেভেলপমেন্টের কারণে বাংলাদেশও আজ পিছিয়ে নেই। উন্নত বিশ্বে কি শেখানো হচ্ছে তাদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি।
তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে চলতে হলে আমাদেরও সেভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা সেই ধরনের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে কর্মমুখী শিক্ষাদানের লক্ষ্যে কাজ করছেন শিক্ষকরা। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাদান ও আন্তর্জাতিক মানের গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে বেশি জোর দিচ্ছি আমরা।
দু’এক লাইনে যদি পরিকল্পনার কথা বলি তাহলে বলব, এশিয়ার মধ্যে প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ থেকে শুরু করে নানা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি।

এখানের অনেক শিক্ষক ইন্টারন্যাশনাল জার্নালের এডিটর, কেউ কেউ চিফ এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। রিসার্চ ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে গিয়ে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

 
Electronic Paper