ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চলচ্চিত্র হলে গিয়ে দেখতে হয়

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৪, ২০১৯

রাইসুল ইসলাম আসাদ দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গন এখন ঠিক কোন অবস্থানে আছে? এ ক্ষেত্রে উন্নতির জায়গাগুলো ও সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?
আমি বুঝি না যে কোনো কিছু হলেই সরকার সরকার করি কেন? সবকিছুই সরকারের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে কেন? আমাদের কি কিছু দায়দায়িত্ব নেই? আমাদের নিজেদের কি কোনো চিন্তাভাবনা নেই? আমরা কিছু করতে পারি না? কিছু হলেই সরকার করবে, এটা কেন বলবো বা সে প্রেসারটা রাখবো? সরকারের তো প্রচুর কাজ আছে, প্রচুর দায়িত্ব আছে। সেগুলো তারা পালন করবে। আমরা যে মিডিয়াতে কাজ করি, এগুলো কি সরকারি কাজ? সব চ্যানেলগুলো প্রাইভেট সেক্টরের। সরকারের শুধু একটা চ্যানেল আছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। এর বাইরে যে ৩০-৩৫টি বা তারও বেশি চ্যানেল এখন সেগুলো সরকারি না। তাহলে সরকার সরকার করি কেন? সরকার কি করে দেবে? আমাদের যারা চ্যানেল করেছে, তাদের কি রেসপনসিবিলিটি নাই?

চলচ্চিত্র নির্মাণে বাজেটের বিষয় চলে আসে...
এগুলো কি সরকারি সেক্টর? আমরা যে ফিল্ম করি এটা কি সরকারি কাজ? তাহলে? সরকার তো যেটা দেওয়ার দিচ্ছে। বছরে এতগুলো ফিল্ম তৈরি করার জন্য অনুদান দিচ্ছে।
সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে, এসব চলচ্চিত্রের কাজগুলো সেখানে করার জন্য। এসব ইনফ্রাস্ট্রাকচার তো সরকার করে দিয়েছে। বাকি দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের। এসব কাজকর্ম যারা করছে তাদের। কোনো কিছু হলেই সবকিছুতে সরকার সরকার বলে আমরা চিৎকার করি। এ বোধ থেকে আমাদের বের হতে হবে।

এত কিছুর মাঝেও আমাদের চলচ্চিত্র অনেক ভালো করছে। বিদেশে উৎসবে যাচ্ছে...
সেটা তো মুখ্য ব্যাপার না, সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে আমাদের দেশ থেকে সিনেমা হল বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ১৩০০/১৪০০ সিনেমা হল ছিল, সেটা এখন ২০০ কততে এসে থেকেছে। সেটা হচ্ছে সমস্যা, আমাদের দেশের জনগণ টেলিভিশনের পর্দায় অথবা ল্যাপটপে বসে বা এখন মোবাইল ফোনে নাটক ও ছবি দেখে। সেটাকেই ছবি দেখা মনে করছে। চলচ্চিত্র হলে গিয়ে দেখতে হয়।
এ অভ্যাসটা আমাদের এতদিনে নষ্ট হয়ে গেছে। এটার জন্য কি সরকার দায়ী? দায়ী তো আমরা। আমরা চলচ্চিত্রকে যেভাবে তৈরি করতে করতে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেলাম। যেখানে বিভিন্ন রকমের ন্যক্কারজনক ছবি হওয়া তৈরি হলো।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র দেখার বিষয়টি...
আগে ছবি দেখত কারা? পরিবারের লোকজন। একটা সময় ছিল বিয়ের পরে জামাই যখন শ্বশুরবাড়িতে আসতো তখন শ্যালক-শালিকা সবাইকে নিয়ে ছবি দেখতে যেত। সেসব এখন উঠে গেছে। হলগুলোর অবস্থা খারাপ হতে হতে এমন অবস্থায় গেছে, যেসব ছবি তৈরি হওয়া শুরু হয়েছিল সেগুলো পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বসে দেখা সম্ভব হচ্ছিল না। অনেক কারণ আছে। যে কারণে আস্তে আস্তে আমাদের চলচ্চিত্র মোটামুটি খুব খারাপ একটা অবস্থানে পড়ে গেছে। মূলধারার যে চলচ্চিত্র, আর মূলধারার চলচ্চিত্র না চললে বিকল্পধারার চলচ্চিত্র দিয়ে আমাদের দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। এগুলো আমরা নিজেরা ধ্বংস করেছি। ধ্বংস করে এ অবস্থায় এসেছি।

ব্যক্তি রাইসুল ইসলাম আসাদের কাছে আসি...
আরে এই যে ব্যক্তি ব্যক্তি করেই তো সমস্যা হয়ে যায়। আমরা তো ইনডিভিজুয়ালিজমে বিশ্বাস করি।
আমি আমি ছাড়া কথা বলি না। এটা কিন্তু ইনডিভিজুয়াল আর্ট না। তুমি লেখক হও, একা একা লেখা যায়। পেইন্টিং করো, একা একা করা যায়। গান করলেও মোটামুটি একা একা করা যায়। কিন্তু এই যে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন বা ছবিতে অভিনয় এককভাবে করা যায় না এগুলো কালেক্টিভ আর্ট। আমি আমি করতে করতে তো এ অবস্থা হয়েছে। সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রের মানচিত্রে আমরা কোথায়? খামোখা কুয়োর ব্যাঙ হয়ে আমি আমি করে হারিয়ে ফেললাম। আমি আমি থেকে বের হতে হবে। আমরাতে আসতে হবে।

নতুন যারা আসছে অভিনয় করতে, তাদের উদ্দেশে কি বলবেন?
নতুনদের জন্য বলার যে কাজটা করতে আসছে, কেন আসছে কি কারণে আসছে সেটা পরিষ্কার হয়ে আসা দরকার। আসলে এটা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, অর্থ তো একটা ফ্যাক্টর। যে কাজটা করবে, সে কাজটা সৎভাবে, সত্যভাবে, শিখে জেনেবুঝে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে হবে। রাতারাতি এটা হয় না।
রাতারাতি আসলাম, দেখলাম আর জয় করলাম। ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট। চর্চার ভেতর দিয়ে গিয়ে, শিখে জেনে বুঝে তারপর শিখতে হবে। এটা প্রথম কথা, আর প্রথম এসে যদি মনে হয় আমি এ কাজ করব, অনেক টাকা কামাবো, স্টার হয়ে যাব। সেটা হলে তো ভালো, তবে রাতারাতি তো হবে না। যে কাজটা করছে, সেটা বুঝতে হবে। সততা, নিষ্ঠা, চর্চা এ জিনিসগুলো লাগে।

দর্শকদের উদ্দেশে...
আপনারা ছবি দেখতে আসুন। সিনেমা হলে ছবি দেখুন। চলচ্চিত্র যেটা তৈরি হয়, সেটা সিনেমা হলে না দেখলে বোঝা যায় না।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

 
Electronic Paper