ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রতিটা মানুষের ভেতরেই পাগলামো থাকে

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ২:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯

সোনিয়া হাসান সুবর্না ম্যাড থেটারের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

থিয়েটারের শুরুটা নিয়ে বলুন...
আমি বেসিক্যালি ’৯৮ সাল থেকে সুবচন নাট্য সংসদে কাজ করি। এখনো নিয়মিতই করি। আমার স্বামী আসাদ একজন ডিরেক্টর, নাট্যকার এবং সুবচনের অভিনেতাও। আমরা একই সঙ্গে কাজ করি এবং আমাদের বাচ্চা ছোট থেকে আমাদের সঙ্গেই সুবচনে যাওয়া-আসা এবং অফিসের পর ওটাই আসলে আমাদের থাকার জায়গা। দুই-তিন ঘণ্টা তো ওখানেই থাকতে হয়। বাচ্চাও অনেক বেশি ইন্টারেস্টেড ছিল।

ম্যাড থেটারের জন্মটা কীভাবে হলো?
সে সময় হুমায়ূন আহমেদ আমরা প্রতিদিন রাতে পাঠ করতাম। আর্য মেঘদূতের বাবা পাঠ করে শুনাতো আর আমরা শুনতাম। একটা অদ্ভুত ভালোলাগা আছে এবং সবসময় ছিল হুমায়ূন আহমেদের প্রতি। আমার কন্যা মেঘদূতই ২০১৪ সালের দিকে বলা শুরু করল চলো আমরা হুমায়ূন আহমেদের একটা নাটক করি। সেটা থেকেই মাথায় আসা।

প্রযোজনা প্রসঙ্গে...
হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাস থেকে আমরা ভাবলাম এটা দিয়ে নাটক করা যায় কি না। আসাদুল ইসলাম আমার হাজবেন্ডের পুরো নাম, ও এটাকে নাট্যরূপ দিল। বড় দলগুলোয় যে অসুবিধা। এটা তো আসলে খুব কম পারফরমার নিয়ে (তিনজন)। উপন্যাসে অনেক অনেক চরিত্র আছে, কিন্তু আমরা নাটকটাকে অনেক ছোট করে আনতে চেয়েছিলাম এবং পারফরমার আমরা তিনজনই। আমি, আসাদ এবং মেঘদূত। মেঘদূত ‘কমল’ চরিত্রে অভিনয় করে একজন অটিস্টিক শিশু। আসাদ হচ্ছে মতিন উদ্দিন, যেটা উল্টো করে আমাদের নাটকের নামই ‘নদ্দিউ নতিম’ আর আমি মুনা ব্যারিস্টার সালেহ ইমরানের স্ত্রী এবং ‘কমলের মা’ চরিত্রে অভিনয় করি। পুরো উপন্যাসটাকে মঞ্চে উপস্থাপন করি।

আপনাদের বিশেষত্বটা বলুন...
আসলে ছোট ক্যারেক্টারের এ নাটকে বড় দলগুলো সেভাবে ইন্টারেস্টেড হয় না। কারণ ওখানকার পারফরমাররা ডিপ্রেসড হয়। এটা আমি সুবচনকে দেখাই, নাটকটা পড়ে শোনানো হয়; সেখানে নানা রকম জটিলতার কারণে সুবচন থেকেই বলি আমরা তাহলে তিনজন মিলে নাটকটা করে ফেলি। সেটা রেপার্টরি করে এখান থেকে পারফরমার নিয়ে, আমরা ম্যাড থেটার ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবরে প্রথম শো করি ‘নদ্দিউ নতিম’। আপাতত আমাদের একটিই প্রযোজনা।

ভিনদেশে উড়াল...
আমরা ২০১৭-তে লন্ডনের সিজন অব বাংলা ড্রামাতে যাই। বাংলাদেশ থেকে তখন একটি নাটকই মনোনীত হয়। নদ্দিউ নতিম সেখানে পারফর্ম করি এবং তিনটা শো-ই আমরা করেছি। এ ছাড়া আমরা দেশের বাইরে ভারতের গৌহাটিতে ও আগরতলায় শো করেছি অনেক। এই হচ্ছে মূলত ম্যাড থেটারের গল্পটা। আমরা পরিবারের মধ্যে থিয়েটারকে কীভাবে চর্চা করা যায় এটাই বেসিক্যালি, পুরো পরিবারটাই থিয়েটারের একটা থিম। এটাতেই অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে, হয়। এটাও একটা ভালো লাগার ব্যাপার। আমরা এভাবেই আসলে ছোট ছোট করে কাজ করতে চাই। নিজেরা নিজেরা ম্যাড থেটার-এর হয়ে। আমাদের এ বছরই দুুুটি নাটক করার প্ল্যান। দেখা যাক, কতটুকু কী করতে পারি।

ম্যাড থেটার নামকরণের রহস্যটা...
রহস্য হচ্ছে আসলে প্রতিটা মানুষের ভেতরেই তো একটা পাগলামো থাকেই। আমাকে সবাই যা দেখছে, এর বাইরেও আমার নিজস্ব একটা জায়গা আছে। আমার ভেতরটা অনেক বেশি পাগল, যেটা আপনি নিজেও ফিল করে থাকবেন। কিন্তু আমরা সব পাগলামি দেখাতে পারি না। আমরা মনে করি, এই পাগলামি ক্রিয়েটিভিটির যা কিছু ভালো, সেটা পাগলামি থেকে নিয়ে অনেক কিছু করতে পারি। সেটা থেকেই ম্যাড থেটার। মানুষের ভেতরের পাগলামিটাকে কাজে লাগাতে চাই আমরা।

থিয়েটারকে থেটার বলার কারণ?
আমাদের দেশে আগে থেটারই বলা হতো। মানে ওই যে কিনু পাহাড়ের থেটার, গ্রাম বাংলায় কিন্তু থেটার উচ্চারণই করা হতো আগে।

আপনাদের স্বপ্ন নিয়ে...
আমাদের সংগঠনটা ছোট, কিন্তু এখানে যারাই ব্যাকস্টেজে কাজ করে লাইট, সেটে, দর্শক বসানো, আবহ সংগীতসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককেই আমরা চেষ্টা করি একটা করে খাম ধরিয়ে দিতে। থিয়েটারকে কীভাবে প্রফেশনাল করা যায় সে ভাবনাটা আমাদের মধ্যে আছে। আমাদের নদ্দিউ নতিম নাটকটা কিন্তু একটা অন্যরকম গল্পের, গতানুগতিক গল্পের মতো না। এ ধরনের স্ক্রিপ্ট নিয়ে আমরা ভবিষ্যতেও কাজ করতে চাই। স্ক্রিপ্ট তৈরির কাজ চলছে, এ বছরই হয়তো নতুন কিছু আসবে মঞ্চে।

থিয়েটার করার আগ্রহ কেন হলো?
মানুষ যেমন বলে থিয়েটার সমাজ পরিবর্তন করে। সমাজ পরিবর্তনের সে প্রতিবাদ এবং মানুষকে সচেতন করে তুলবার প্রয়াস থেকেই থিয়েটার করে। সেটা একসময় হয়ে ওঠে, কিন্তু আমার শুরুর গল্পটা হচ্ছে আমি থিয়েটারে এসেছি ভালোলাগা থেকে। সে সময় থিয়েটারের মানুষকে আমার অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন, অনেক বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। আমি তখন স্টুডেন্ট ছিলাম এবং আমি সুবচনে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এটা একটি পরিবারের মতো। ওই সময় আমি দেখেছি একজন আরেকজনের জন্য সবকিছু করতে পারে। একজন আরেকজনের বিপদে কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, একজনের আনন্দে একজন কীভাবে আনন্দিত হয়; এ আন্তরিকতাটা আমার খুব অন্যরকম লেগেছে। সে টপিকেই থিয়েটারে থেকে যাওয়া। এবং থিয়েটার আসলে মানুষকে সহনশীল হতে শেখায়। আমি আমার জীবন দিয়ে তা দেখেছি।

 

 
Electronic Paper