ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে থিয়েটার করি

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ৩:২০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯

শ্যামল হাসান থিয়েটার নিয়ে ব্যস্ততা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

আপনাদের থিয়েটার চর্চা নিয়ে বলুন...
আমরা বলতে তো অনেক আগে, আমাদের দলটা ’৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত। আমি বেসিক্যালি ‘ঢাকা পদাতিক’ করছি ২০০০ সাল থেকে। তার আগে আমি আমার এলাকাতে নাট্যগোষ্ঠী ছিল সেখানে কাজ করেছি।

নাটক চর্চার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মতামত কি?
অবস্থান আসলে সবকিছুতে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে যেগুলো আমরা আগে লাইভ করতাম। একসময় যাত্রা ছিল, এখন বলতে গেলে সেটা নাই বললেই চলে। যাত্রা, সার্কাস এগুলো তো আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। সেদিক থেকে বলতে গেলে এখন কিন্তু মঞ্চনাটকের খুব ভালো সময় যাচ্ছে না। হাতেগোনা কিছু প্রোডাকশন দর্শক দেখছে, এ ছাড়া দর্শক আমরা পাই না। আর হল স্বল্পতা তো আছেই, ঢাকাতে এখন সবাই শিল্পকলাকেন্দ্রিক। আমরা যারা মোটামুটি বড় দলে কাজ করি তারা দেখা যায় যে প্রতি মাসে ২/১টা বড় হল পাই।

তাহলে নাটক নিয়মিত মঞ্চায়ন কীভাবে হচ্ছে?
অনেক দল আছে, যারা এক দেড় মাসেও হল পায় না। আগে যেমন ছিল বেইলি রোড নাটক সরণি সেখানে দুইটা হল ছিল, দুইটাই বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। মহিলা সমিতিতে নাটক ফিরেছে, কিন্তু এখন সেখানে ওই উৎসবমুখর পরিবেশটা নাই। এখন এত দর্শক হয় না, নাট্যকর্মীরাও খুব একটা আগ্রহী না মহিলা সমিতিতে। সবাই শিল্পকলাতেই করতে চায়, শিল্পকলাকেন্দ্রিকই হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঢাকাতে এত বড় একটা শহর অন্য কোথাও হলের তেমন একটা ব্যবস্থা নেই। সূত্রাপুরে জহির রায়হান নামে যে মিলনায়তন করা হয়েছে, সেখানেও সেরকম পরিবেশটা নেই। গুলিস্থানে মহানগর নাট্যমঞ্চ নাম ছিল আগে, সেটার অবস্থা রাজনৈতিক দলের জন্য ব্যবহার হয়। এ জায়গাটা আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা সমীচীনই বলা যায়। আমরা অনেকখানি হতাশার মধ্যে থাকি। আসলে পরিবেশটা থাকলে কতদূর কি এগোনো যায়, সেটা ভাবা যায়। আশার দিক বলেন, সবকিছু থেকে উত্তরণের দিকটাই ডিফিকাল্ট।

এত সংকটের মাঝেও স্বপ্নের জায়গাটা...
যখন ঢাকায় আসলাম বিভিন্ন নাট্যজন যারা আছেন তাদের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করলাম তখন দেখলাম মজা বা ভালোলাগা থেকেই এ কাজটা সবাই করে না। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে, আপনি নিশ্চয়ই জানেন শুধু আমাদের দেশেই না বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ক্রাইসিস মোমেন্টে নাট্যকর্মীরা আন্দোলন করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। এভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিন্তু ’৫২, ’৭১-এ স্বাধীনতার জন্য, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য ভূমিকা রেখেছেন। এরকম সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই এ দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ত্যাগ শিকার করে থিয়েটারটা করি। এটাকে পাগলামি বা সামাজিক দায়বদ্ধতাও বলা যায়।

থিয়েটারকে গণমানুষের আরও কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামে দেখতাম যখন নাটকগুলো দেখায়, তখন প্রচুর দর্শকের সমাগম হতো। তখন কিন্তু নাটকগুলো এত মানসম্পন্ন হতো না। তারপরও অনেক মানুষের সমাগম হওয়ায় একটা উৎসবমুখর পরিবেশ থাকত। ওই সময়টার সামাজিক অবস্থার তুলনায় মানুষের মানসিকতা এখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন মানুষের জীবনযাপন অনেক কঠিন হয়ে গেছে, যান্ত্রিক হয়ে গেছে।

এর সমাধান কি হতে পারে?
যানজট একটা ফ্যাক্ট, অনেক মানুষ এখন নাটক দেখতে চায় তখন প্রথমেই ভাবে আমি যাব কীভাবে? নাটক হবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কিন্তু রাস্তার ভেতরেই ট্রাফিক জ্যামে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে। ৪ থেকে ৫ অথবা ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হবে। এত সময় তো আমার হাতে নেই। তারপরও আমার মনে হয় হলের ব্যবস্থা যদি আমরা বিভিন্ন জায়গায় করতে পারি। সবাই কমবেশি কর্মব্যস্ত মানুষ, আমরা যারা থিয়েটার চর্চা করি আমাদের কথাই বলি। আমার অফিস মতিঝিলে হওয়ায় সেখান থেকে অফিস করে শিল্পকলায় গিয়ে আমি রিহার্সেলটা করতে পারি। কিন্তু আমার অফিস যদি বাড্ডায় বা গুলশানে হতো, আমার পক্ষে তো এটা করা সম্ভব হতো না। আর এখান থেকে তো অর্থের কোনো আউটপুট পায় না, বরং পকেট থেকে আরও দিতে হয়। জীবনধারণের জন্য অর্থ উপার্জনের কোনো ব্যবস্থা যদি করা যেত, তাহলে ভালো হতো।

 
Electronic Paper