জাতীয় টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া উচিত
তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ২:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
শহীদুল আলম সাচ্চু টিভিসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে।
নাটক এখন টিভির পাশাপাশি ইউটিউব ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে মুক্তি পাচ্ছে। নাটকের এ অবস্থানকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ইউটিউব চ্যানেল একটি নতুন কাজের ক্ষেত্র। মোবাইল বর্তমানে মানুষের নতুন বন্ধু হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। মোবাইলের সঙ্গে মানুষের যতখানি বন্ধুত্ব, তার ফলে এ সময়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নাটক হওয়াকে আমি ভালোভাবেই দেখি।
এখন গুণগত মান কে কি করছে না করছে, সেটা পরের বিষয়। কিন্তু এখন যেটা বলা যায়, নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আমি এটাকে খুবই ভালো চোখে দেখি। শিল্পীদের জন্য একটা নতুন জায়গা তো এলো। একটা বিষয় হয়তো বলা যায়, যারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নাটক করছে তারা একটু গ্ল্যামারাস কন্টেন্টের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেটা আলাদা বিষয়, হতেই পারে। কিন্তু টেলিভিশন নাটক আমরা ড্রয়িং রুমে ছেলেমেয়ে পরিবারসহ দেখি।
আর মোবাইলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নাটক আমরা একা একা দেখি। একা একটি জিনিস দেখলে সেটা তার মতো করে বানানো হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে রুচির বিষয়টি আগে দেখতে হবে। সে জন্য ডিরেক্টররা একটি গ্ল্যামারাস সিকোয়েন্স দেখাতে গেলে সুন্দর করে দেখাবে। যারা রুচিহীন, তারা রুচিহীনদেরটা দেখবে। আর যারা রুচিপূর্ণ মানুষ তারা বান্নাহরগুলোই দেখবে। এটা নতুন প্ল্যাটফর্ম সারা পৃথিবীতেই হচ্ছে, বাংলাদেশেও শুরু হচ্ছে। একটা ভালো রকমের প্র্যাকটিস।
টিভি নাটকের ক্ষেত্রে এত টিভি চ্যানেলের ভিড়ে নাটকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নাটকের মান বজায় থাকছে বলে কি মনে করেন?
আগের তো কোনো কিছু নেই এখন আর আগের মতো। কারণ আগে যেটা হতো পারিবারিক বন্ধনে আমরা নাটক দেখতাম।
বাবা-মা, ভাইবোন, ফুপু এগুলো তো এখন বদলে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত বা জয়েন্ট ফ্যামিলির কালচারটা আমরা এখন টেলিভিশন নাটকেও দেখি না। কিন্তু মানুষ পছন্দ করে সেগুলোই, যে কারণে বিটিভির পুরনো নাটকই কিন্তু মানুষ অনেক বেশি দেখে। এখন ইউটিউবের কল্যাণেই মানুষ পুরনো নাটক দেখে, আমরাও দেখি। সো, যেটা মানুষের জীবন থেকে নেওয়া এবং যেটা বাস্তবিক মানুষ আসলে সেটাই দেখবে। আমার নামে যদি অন্য কিছু দেখান, সেটা মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে দেখবে। কিন্তু স্থায়ী হবে সেগুলোই যেটা জীবন থেকে নেওয়া।
চ্যানেল আইয়ে আপনি কোন দিকটি দেখেন?
আমাকে অনেক দিকই দেখতে হয়। প্রোগ্রাম, ইভেন্ট।
এত চ্যানেলের ভিড়ে চ্যানেল আই যে তাদের প্রোগ্রামে বৈচিত্র্য ও স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে, এটার রহস্যটা কি বলবেন?
অন্যান্য চ্যানেলের মালিকদের তুলনায় চ্যানেল আইয়ের মালিকরা একদমই আলাদা। এখানকার মালিকরাই সাহিত্যিক, মালিকরাই কৃষি নিয়ে গবেষণা করে, বড় বড় গার্মেন্টের মালিক। উনাদের রুচি এবং শিক্ষাদীক্ষা, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সবকিছুই আলাদা। এ জন্যই যে কোনো চ্যানেলের তুলনায় চ্যানেল আইয়ের প্রোগ্রাম আলাদা হয়। স্লোগানটাই তো আলাদা, তাই না? ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’।
পূজা-পার্বণ, ঈদ ও বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক প্রায়ই তুলে ধরে। তার পাশাপাশি শিল্পীদের জন্মদিন, দিবসের বিষয়গুলো চ্যানেল আই ভেবে থাকে। বাংলাবিদের পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা করেছিল দেশব্যাপী।
গীত নিয়ে গীতি কবিতা ও সবকিছুর শাখা যারা গান করে, সুর করে, মিউজিক ডিরেক্টর, কণ্ঠশিল্পী। এসব কিছু মিলেই চ্যানেল আই প্রোগ্রাম করে। প্রতিটি বিষয় চ্যানেল আই মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করে সাজায়। এ চ্যানেলের মালিকরা চান এবং যেসব স্টাফরা আছেন তারাও অন্যরকম। আমাদের সিনিয়র জিএম যিনি আমীরুল ইসলাম। তিনি কিন্তু শিশুসাহিত্যিক, মূলত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষগুলোই চ্যানেল আইতে কাজ করে সে কারণে চ্যানেল আই দর্শকদের কাছে আলাদা স্থান করে আছে।
নতুনদের মিডিয়াতে আসার দিকটি এখন বেড়ে গেছে। এটা সম্পর্কে আপনার মতামত?
নতুনদের স্বাগত জানাই আমি, নতুনদের খুবই পছন্দ করি। নতুনদের জন্য জায়গাটা সবসময়ই থাকবে ও নতুনদের জায়গাটা ছিল।
তবে বিষয়টা হচ্ছে, মঞ্চ থেকে যারা আসবে তাদের জন্য এটা স্থায়ী জায়গা। এটা কনফার্মড, এ ছাড়া নতুন যারা আসছে তারা অনেক ভালো করছে তাদের সবাই পছন্দও করছে। তবে তাদের প্রমাণ করতে হবে, তারা স্থায়ী হওয়ার যোগ্যতা রাখে। সেটা ১২ বছর পরই বোঝা যাবে। নতুনদের আহ্বান আমরা সবসময়ই করি এবং নতুনরা ভালো করে এবং করছে। তবে নাট্যকার, নির্মাতা, অভিনেতা যারা চর্চার মধ্য দিয়ে আসছে তাদের জায়গাটা আলাদা। তাদের আসন আলাদা হবেই।
চলচ্চিত্র এখন ভালো সময় পার করছে, কিন্তু আরও ভালো করার জন্য আমাদের কি করণীয়?
কিছু ডিরেক্টর আছেন যারা ভালো, তারা অনেক ভালো আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে।
এই যে অমর একুশে নিয়ে একটা দুটো গান হয়েছে, কিন্তু এই যে ‘ফাগুন হাওয়া’ সিনেমায় পুরোটা একুশে নিয়েই করা হয়েছে। তরুণ নির্মাতারাই তো ভালো করছে। স্ক্রিন প্লের জায়গায় যদি আমরা মনোযোগী হতে পারি, গল্পটা বলা এবং স্ক্রিনপ্লের জায়গায় দুর্বলতা আছে বলে আমার মনে হয়।
সরকারের কাছে প্রত্যাশা...
এ সরকার সংস্কৃতিবান্ধব সরকার, আমরা এ সরকারকে আরও চাই। আমি চাইব, নাচ, গান, অভিনয়, ক্যামেরার মতোই যদি বিটিভিসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর জন্য জাতীয় টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড প্রণয়ন করা হয় তাহলে প্রতিযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।