চেতনার যুগসন্ধিক্ষণ চেয়েছি
শামসুজ্জামান খান
শিমুল জাবালি
🕐 ১২:২৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
বাঙালির প্রাণের মেলা ‘একুশে বইমেলা’। পাঠক-লেখক-প্রকাশকের মিলনমেলা। বইমেলার আয়োজন বাংলা একাডেমির ওপর ন্যস্ত থাকে। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। যিনি লোকসংস্কৃতি ও লোকসাহিত্য গবেষক। তিনি কথা বলেছেন শিমুল জাবালির সঙ্গে।
মেলা তো চলে এলো। একসময়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে। বিশেষ করে মেলাকেন্দ্রিক।
হ্যাঁ। আগের ব্যস্ত সময় খুব মনে পড়ে।
আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে বইমেলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বলা চলে স্মরণীয় বইমেলাগুলো আপনার হাতেই সৃষ্টি
চেষ্টা করেছি। আগে তো রাস্তায় হকার-টকার ছিল। সবকিছু দ্ব্যর্থ অবস্থায় ছিল। আমি বলেছি এসবে একটুও পিছপা হব না। আমার ইচ্ছা ছিল, একটি পরিচ্ছন্ন আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করা। সে জন্যই পরিসর বড় করতে হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত।
উদ্যান পর্যন্ত মেলা টেনে নেওয়া অনেকেই মেনে নেননি, বিরোধিতাও করেছেন
হ্যাঁ, প্রচ- বাধার মুখে পড়েছি। তারা ভেবেছিলেন বইমেলা যদি এই বাংলা একাডেমি থেকে সরে যায়, তাহলে সেটা আর বইমেলা থাকবে না, টিকবে না, ভেঙে যাবে। তখন তাদের বোঝালাম, একুশে ফেব্রুয়ারিতেই বাঙালি জাতির ইতিহাস শেষ হয়ে যায়নি। একুশের পর ধাপে ধাপে আমরা অনেক সংগ্রাম করেছি। এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর এ স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের বিজয়ের স্তম্ভ।
১৯৪৮ সাল থেকেই তো শুরু
১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এই উদ্যানেই এক ভাষণে ‘Urdu and Urdu shall be state language of Pakistan.’ বলেছিলেন। সেখানেই ছাত্ররা এর প্রতিবাদে ‘নো নো’ সমস্বরে বলে প্রতিবাদ জানায়। সেখান থেকেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূত্রপাত। এর ধারাবাহিকতায় এখানেই বঙ্গবন্ধু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পান। ’৭১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিশাল অর্জনের পরে এখানেই এমপিরা শপথ নেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখানেই আত্মসমর্পণ করেন। গৌরবের ইতিহাসের তীর্থভূমিই হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আমি এখানেই বইমেলাটা নেব। তারপরও তারা রাজি হলো না। এবং তখন আমাকে একটা কৌশল অবলম্বন করতে হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, বইমেলার উদ্ভাবক হিসেবে। তারপর সেখানে আমি আগের কথাগুলো বলি। প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হই ‘এখানে বইমেলা হলে আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে সমান্তরাল হবে।’ প্রধানমন্ত্রী সে মিটিংয়ে আমাকে সমর্থন দিলেন। তারপর বিরোধীরা চুপসে গিয়েছিল।
রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সংগঠন দ্বারা বাধার সম্মুখীন হননি?
যেহেতু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে ভেতরে, তাই ছাত্ররা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা স্টল চাওয়াসহ নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব আমি শক্ত হাতেই দমন করেছি। ছাত্রলীগকে বলে দিয়েছি, আমি যা বলবো তাই হবে, এর বাইরে কিছু হলে, আমি ব্যবস্থা নেব, প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো। এরপর ওরা আর কোনো রকম অসুবিধা করেনি। আরেকটা ভয় ছিল এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব নিয়ে। সেটাও শক্ত হাতে দমন করেছি। আমার কথা হলো, আমি যা করব, ভালো করব এবং কাউন্সিলরের অনুমতি নিয়েই করব, সংগত কিছু হলে বলবেন তা না হলে, না। এরপর তারা আর ঝামেলা করেনি। আরও দু’একজন (নাম বলছি না) ছিল, তারা খুবই সমস্যা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করত।
মেলায় নিয়মবহির্ভূত স্টল পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠত সবসময়। এর ভেতর কি কোনো লেনদেনের ব্যাপার-স্যাপার ছিল?
হ্যাঁ, কোনো একটি স্টল যদি কেউ নিয়ে দিতে পারত, তাহলে ত্রিশ থেকে ষাট হাজার টাকা পেত। এটাও ছিল অনেকের লোভের এবং লালসার জায়গা। সে জায়গায় কাউকে কোনো রকম সুযোগ দেইনি।
বইমেলাকে বৃহৎভাবে চিন্তা করার অন্য কোনো কারণ ছিল?
বইয়ের শুধু বাণ্যিজিক প্রসার চিন্তা করিনি। আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে সংস্কৃতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সঙ্গে মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সম্পর্ক আছে। আমাকে সে জায়গায় যেতে হবে। আমাদের বইমেলা কলকাতা বইমেলার মতো হবে না, এমনকি ফ্র্যাঙ্কফুট বইমেলার মতোও হবে না। এর সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রবীন্দ্র-নজরুল এবং চেতনার যুগসন্ধিক্ষণ ঘটাতে চেয়েছি।
রবীন্দ্র-নজরুল কেন?
রবীন্দ্র-নজরুল আমাদের জাগরণের অংশ। এদের আধুনিক গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা আমাদের প্রয়োজন। এখানকার মুসলিমরা রবীন্দ্রনাথকে তো মেনে নিত না আর নজরুলকে মানুষ না বলে শয়তান বলত। এসব কিছুর মেলবন্ধন যাতে মেলায় প্রতিফলিত হয়, সে চেষ্টাটা ছিল। সবার সহযোগিতাতেই সম্ভব হয়েছে।
বইমেলার ধারণা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
বইমেলার ইতিহাস শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। তখন বাংলা একাডেমির ১০ বছর বয়স। ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল ওয়ালর্ডস অব বুকস’ বইটি থেকে এর সূত্রপাত। এ বইটি বাংলা একাডেমির লাইব্রেরিতে আসে তখন। সরদার জয়েন উদ্দিন (পরবর্তীতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন) বইটি হাতে পেলেন। সে বইয়ের একটা প্রবন্ধ পড়ে তিনি ভাবলেন, বইয়েরও তো মেলা করা যায়! তখন একটা কাজ করছিলেন তিনি, ইউনেস্কো থেকে শিশুদের জন্য রিডিং ম্যাটারিয়াল মানে পাঠ উপকরণের। তখন তার মনে হলো, এই পাঠ উপকরণের একটা প্রদর্শনী করা যায়। বই কেমন হবে, টাইপ কেমন হবে, কালার হবে কি হবে না, সাইজ কেমন হবে এসব ঠিক করে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি ভাবলেন বইয়ের যেহেতু মেলা হয় প্রদর্শনী হয়, তবে তাই করি। তখন পাবলিক লাইব্রেরিতে আয়োজন করার চিন্তা করলেন। এই হলো বইমেলার বীজ রোপণ। এবং ওইটা করে তিনি বেশ সফলই হলেন। সবাই পছন্দ করলেন। পরে চিন্তা করলেন এটা তো শিশুদের নিয়ে করলাম, এবার বইমেলাই করি। সে উদ্যোগে পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল সহযোগী হলো। আয়োজন হলো এখনকার শিল্পকলায়। ওখানে পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিলের একটা ভবন ছিল, এখন নেই, তোমরাও দেখনি। সেটাও সবার পছন্দ হলো। তারপর ১৯৭০ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জে একটা বইমেলা করলেন। সেই বইমেলাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আমাদের শিক্ষক আবদুল হাই সাহেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী এবং সরদার ফজলুল করিমকে নিয়ে গেলেন বক্তা হিসেবে। ওখানে গিয়ে ওনারা একটা মজার দৃশ্য দেখলেন, বইমেলার গেটের বাইরে কালো একটা গরু বাঁধা। এবং তার পিঠে কাগজের একটি স্টিকার লাগানো, তাতে লেখা ‘আমি বই পড়ি না।’...হাঁ হাঁ...মানে যে মানুষ গরুর মতো, সে বই পড়ে না। ওনারা ওটার খুব প্রশংসা করলেন। এরপর তো মুক্তিযুদ্ধ। সব ওলট-পালট।
আর চিত্তরঞ্জন?
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক নিজেদের মধ্যে বইকেন্দ্রিক, মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষাকেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাববিনিময় শুরু করেন। সেখানে শ্রীযুক্ত বাবু চিত্তরঞ্জন সাহা ‘মুক্তধারা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এবং আবদুল হাফিজ, আসাদ চৌধুরী, গাফ্ফার চৌধুরীর লেখাসহ একটা বই ‘রক্তাক্ত বাংলা’ নামে প্রকাশ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বইমেলার সম্পর্ক সেখান থেকে শুরু হয়।
নতুন বাংলাদেশে কীভাবে এলো সেটা?
১৯৭২ সালে সরদার জয়েন উদ্দিন চিন্তা করলেন, এখানে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করবেন। সেই গ্রন্থকেন্দ্রের বইমেলা তিনি আয়োজন করলেন বাংলা একাডেমিতে। সেটির উদ্বোধন করলেন তৎকালীর রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সেখানে অন্নদাশংকর রায়ের মতো বিখ্যাত ব্যক্তি এসেছিলেন। সেটিও একটি সফল বইমেলা হলো। এবং ’৭৩ সাল থেকে চিত্তরঞ্জন সাহা, ‘বর্ণমিছিল’ নামে একটা প্রেস যার মালিক তাজুল ইসলাম, স্টেডিয়াম মার্কেটে একটা বইয়ের দোকান ছিল ‘স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স’ রুহুল আমিন নিজামীর এরা একাডেমির গেটের বাইরে অল্প অল্প বই নিয়ে বসতেন। এভাবেই বইমেলার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আপনি কবে থেকে যুক্ত হলেন?
১৯৭৪ সালে যখন আমি সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্ব পাই (আমার আগে ছিলেন সরদার ফজলুল করিম) তখন আমরা চিন্তা করলাম দেশ তো স্বাধীন হলো এবার একটা সাহিত্য সম্মেলন এবং বইমেলা করা যায়। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে যাই।
আমরা বলতে কারা কারা
ওখানে আমি, নাজমুল হুসাইন সাহেব, রাহাত খান, এবং সন্তোষ গুপ্ত ছিলাম।
সন্তোষ গুপ্ত...পুরান ঢাকার? বিখ্যাত সাংবাদিক?
হ্যাঁ
তারপর বঙ্গবন্ধু কি বললেন?
বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তোমরা বইমেলা করবে, তো আমার কাছে কেন এসেছো? আমি তো রাজনীতিবীদ, সাহিত্যিক না। আর বইমেলায় দেখেছি একজন বড় লেখক মেলার উদ্ভাবক হন, আর অন্যান্য লেখকরা মানে শিশুসাহিত্য নিয়ে যিনি কাজ করেন তিনি শিশুসাহিত্য বিভাগে থাকেন, উপন্যাস নিয়ে যিনি কাজ করেন তিনি উপন্যাস বিভাগে থাকেন এভাবেই তো। আমার কাছে কেন এসেছো? আমরা একটু ভড়কে গেলাম, এর উত্তর কি দেব! সন্তোষ দা খুব সুন্দর করে উত্তর দেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘আমাদের একটি নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। এবং এ উপমহাদেশে এ রকম রাষ্ট্র একটিও হয়নি। ভারত ভাগ হয়েছে টেবিলে বসে। তার চেয়ে এ রাষ্ট্রের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ রাষ্ট্রের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। অতএব এ রাষ্ট্রের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নীতি কি হবে সেটা তো কোনো বিখ্যাত সাহিত্যিক বলতে পারে না। সেটা আপনাকেই বলতে হবে। আপনার সারা জীবনের সাধনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আপনাকেই তা বলতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু একটু চুপ থেকে ধীরে ধীরে বললেন, ‘সন্তোষ বাবু আপনি তো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।’ এ বলেই তিনি পাইপে টান দিলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে আমি রাজি, উদ্বোধন করব, কিন্তু মূল সভাপতি আগের মতোই একজন বড় সাহিত্যিক থাকবে। আর সেটা হলো, আমার বন্ধু কবি জসীম উদ্দীন।’ আমরা রাজি হলাম। সেভাবেই আমরা আয়োজন করলাম। ৭৫ জনের একটা প্রতিনিধিদল কলকাতা থেকে এলেন। অন্নদাশংকর রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুনীল, শক্তিসহ গানের শিল্পী, নাট্যকার সবাই এলেন। বিভাষ দত্তের নাটকের দল এলো। তাদের নাটক এতটাই দর্শকপ্রিয়তা পেল, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, চিফ হুইফের পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দেখতে হলো। একটা নাটকের অভিনয় দুবার করে হলো। ৬টি দেশ থেকেও প্রতিনিধি এসেছেন। এমন সফল অনুষ্ঠান আর হয়নি।
কিন্তু মূল যে বইমেলা মানে এখন যে পদ্ধতিতে হচ্ছে, সেটা কখন থেকে?
এখন যে ধরনের মেলা হয় সেটা অনেক পরে এসেছে। ’৭৪-এর সাহিত্য সম্মেলনের পর ছোট-খাটো অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে, সেগুলোর আয়োজক ছিল শুধুই একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগ। আমরা ৯ জন ছিলাম। আর সেলিনা হোসেন, রশীদ হায়দার, জিললুর রহমান ওনারা মতামত দিতেন, সাব-কমিটিতে থাকতেন। ১৯৮৩ সালে সর্বজনীনভাবে উদ্যোগ নেই। মোটামুটি সব রেডি হয়, কিন্তু করতে পারিনি। কারণ তখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলছিল। শিক্ষা ভবনের দিকে একটা মিছিলে ট্রাক তুলে দিয়ে দুজন ছাত্রকে মেরে ফেলা হলো। সে বছর আর হলো না। ’৮৪ সালে শুরু করতে পারি।
তাহলে ওই যে বাঙালি চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। তখনো তো আমাদের মধ্যে বাঙালি চেতনা আসেনি। এরশাদ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। রাজনীতিতে ইসলামিস্টের জোয়ার চলছিল।
হ্যাঁ, তখনো বাঙালি চেতনা গড়ে ওঠেনি। আমাদের পরিচয় ইসলামিক রাষ্ট্র। তাই একটু কৌশলী হতে হলো। স্লোগান দিলাম ‘একুশ আমার পরিচয়’। মানে আমরা বাঙালি একথা বলতে পারছি না। তাই একটু ঘুরিয়ে বলতে হলো। এবং সেই থেকে শুরু।
মহাপরিচালক হওয়ার পর বইমেলার স্বপ্ন কতটুকু পূরণ করতে পারলেন?
পেরেছি তো অবশ্যই। একটি আন্তর্জাতিক বইমেলায় রূপান্তর করতে পেরেছি। মেলায় আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন করতে পেরেছি। আমি মনে করি, একটি পরিপূর্ণ মেলার আয়োজন করতে পেরেছি।
কিন্তু আপনার মনে হয়নি? গত কয়েক বছর মৌলবাদীদের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতির অভিযোগে স্টল বন্ধ করে দেওয়া, স্টল না দেওয়া কিংবা লেখক-প্রকাশকদের হয়রানি করা...
এসব তো আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। হার মানিনি। মেলার স্বার্থে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কৌশলী হয়েই এগিয়েছি। তাহলে তো মেলা বন্ধ হয়ে যেত! বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বলে কিছুটা সুবিধা পেয়েছি। ছাত্রদের মৌলবাদীরা ভয় পায়। এত কিছুর পরেও তো তারা আক্রমণ করে গেছে। হুমায়ূন আজাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, আবার অভিজিৎকে তো ওরা মেরেই ফেললো!
মেলা নিয়ে আর কি আশা করেন?
এ মেলার চরিত্র রক্ষা করতে হবে। এবং আমাদের ভেতর যাতে লোভ-লালসা না জাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টাকার লেনদেন না হোক। এ মেলার মধ্যে দিয়েই আধুনিক প্রগতিশীলতার শুরু হোক। দর্শন, বিজ্ঞান, রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং ডিজিটাইলেজশন নিয়ে বইমেলার নতুন করে ভাবনার সময় এসে গেছে।