ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

৪০ দেশে ওমিক্রনের থাবা

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১২:০৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২১

৪০ দেশে ওমিক্রনের থাবা

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন এরই মধ্যে ৪০ দেশে বসিয়েছে থাবা। ভারতে শেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বিশ্বকে এ ভাইরাসটি ঠেকাতে প্রস্তুত থাকতে বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

 

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে হু-এর বিজ্ঞানী সৌমিয়া স্বামীনাথন প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেন। হু-এর বিজ্ঞানী সৌমিয়া বলেন, এক বছর আগের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। বিভিন্ন তথ্যের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশে ইতিমধ্যে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

গত ৮ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার শনাক্ত হয় ওমিক্রন। পরে ওই মাসের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর ঘোষণা দেয় দেশটি। এরই মধ্যে দ্রুত গতিতে ওমিক্রন বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি ভারত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। সীমান্তে কড়াকড়ি করেও ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার ঘটনা ঠেকাতে পারেনি জাপান। করোনার এ ধরন কতটা দ্রুত গতিতে ছড়ায় এবং এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কতটুকু কার্যকর-তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওমিক্রন হয়তো কিছুটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরাস্ত করতে সক্ষম হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্তদের তেমন গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়নি। হু-এর বিজ্ঞানী ড. সৌমিয়া স্বামীনাথন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাওয়া নথির ভিত্তিতে বলেন, ‘ধরনটি (ওমিক্রন) উচ্চ সংক্রমণশীল।’ তিনি জানান, এটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী করোনার ধরন হয়ে উঠতে পারে। তবে এক্ষুণি এ ভবিষ্যদ্বাণী করাটা কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ড. সৌমিয়া স্বামীনাথন বলেন, বিশ্বে এখনও মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৯৯ শতাংশই ঘটেছে ডেল্টার কারণে। তিনি বলেন, ‘আমাদের উচিত প্রস্তুতি নেওয়া ও সতর্ক হওয়া- আতঙ্কিত হওয়া নয়। কারণ, এক বছর আগের চেয়ে আমরা এখন ভিন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছি।’ ইতোমধ্যে হু এর জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইক রাইয়ান বলেন, বর্তমানে বিশ্ব করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ‘উচ্চ কার্যকরিতার ভ্যাকসিন’ পেয়েছে। এখন এ ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে বিশ্বব্যাপী বণ্টনের ওপর গুরুত্ব দেয়া জরুরি।

ওমিক্রনে ‘ঠাণ্ডার ভাইরাসের যোগ’
করোনাভাইরাসের একেবারে নতুন যে ধরনটি সারা বিশ্বে মানুষকে আতঙ্কে রাখছে, তার নাম ওমিক্রন। গত মাসে এ ধরন প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। নানা কারণে এটিকে নিয়ে আলোচনা ও গবেষণার শেষ নেই। তবে একটা বিষয় জানা গেছে যে, করোনার অন্য ধরনগুলো থেকে ওমিক্রন বেশি সংক্রামক। ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের জেরে জোর গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে। এ ছাড়া ওমিক্রন বিশ্বের নানা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

ওমিক্রনকে শুরু থেকে করোনার অন্য ধরনগুলো থেকে আলাদা বলছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, করোনার আদি যে ধরন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি থেকে ওমিক্রন অনেকটাই ভিন্ন। এবার নতুন এক তথ্য দিলেন গবেষকরা, যা চোখ কপালে ওঠার মতো। তাদের ধারণা, করোনা ভাইরাসের কোনো ধরন যা করেনি, সেই কাজটিই করেছে ওমিক্রন। সে অন্য গোত্রের ভাইরাসের সঙ্গে ‘আত্মীয়তা’ করেছে। কার্যত মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তনের বিচারে ওমিক্রন অন্যদের চেয়ে বেশ আলাদা। এটির স্পাইক প্রোটিনও অন্য ধরনগুলো থেকে বেশি।

গত শুক্রবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকরা দেখেছেন যে, ওমিক্রন অন্য গোত্রের একটি ভাইরাস থেকে অন্তত একটি মিউটেশন নিয়ে থাকতে পারে। এটি ‘কমন কোল্ড’ বা ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশির ভাইরাস। গবেষকরা বলছেন, অন্য গোত্রের ভাইরাস থেকে ‘জেনেটিক মেটেরিয়াল’ গ্রহণের মাধ্যমে এ কাজটি করেছে ওমিক্রন।

করোনাভাইরাসের আগের কোনো ধরন এ রকম কোনো আচরণ করেনি। তারা নিজ গোত্রে থেকেই মিউটেশন বা জিনগত আচরণ পরিবর্তন করেছে। তবে ওমিক্রনের এ ঘটনাকে ইতিবাচকই বলছেন গবেষকরা। ম্যাসাচুসেটস ভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভ্যাঙ্কি সৌন্দরারাজন বলেন, নিজের মধ্যে বিশেষ এ মিউটেশন গ্রহণের মাধ্যমে ওমিক্রন আরও বেশি ‘মানবিক’ (এখানে মানবদেহের জন্য সহনীয় অর্থে) হয়ে উঠল।

এ কারণে ওই ভাইরাস মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিকতর কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি। এ ভাইরাস কেনো এত দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং এটির লক্ষণও কেনো মৃদু- তার বিশ্লেষণ হয়তো এতে রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হয়ে জানেন না যে, ওমিক্রন অন্য ধরনগুলো থেকে কতটুকু বেশি সংক্রমক, এটা কতখানি গুরুতর অসুস্থতা এনে দিতে পারে, অথবা এটা করোনার ডেল্টা ধরনের স্থান দখল করে নেবে কিনা। এসব বিষয় নিশ্চিত হতে হয়তো কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

 

 
Electronic Paper