ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যুক্তরাষ্ট্রে টানা বিক্ষোভ নবম দিবসে, মোট নিহত ১১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক 
🕐 ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৫, ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে মাঝবয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকা-ের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ-সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে রাশিয়ার একটি বার্তা সংস্থা এই খবর জানিয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে বরখাস্ত হওয়া চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই। লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক কেটিএলএ টিভির বরাতে রুশ বার্তাসংস্থা তাস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) হত্যার পর শুরু বিক্ষোভে নিহতদের মধ্যে শিকাগো, ডেট্রয়েট, ওমাহা, ডেভেনপোর্ট, ওকল্যান্ড, ল্যুইভিলের বাসিন্দারা রয়েছেন। যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই আফ্রিকান-আমেরিকান।

কেটিএলএ টিভির অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওকল্যান্ডে ফেডারেল প্রোটেকটিভ সার্ভিস অফিসার ৫৩ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ ডেভ প্যাট্রিক আন্ডারউড গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এসময় আরেকজন অফিসার গুরুতর আহত হন। এছাড়া ওমাহায় ২২ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জেমস স্কারলক নিহত হয়েছেন। তিনি ও তার দল একজন শে^তাঙ্গ ব্যক্তিকে মারধর করছিলেন। এই সময় ওই ব্যক্তি স্কারলককে লক্ষ্য করে গুলি করলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া, বিক্ষোভে সহিংসতায় কয়েকশ মানুষ আহত হলেও তাদের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, টানা নয়দিন ধরে চলা বিক্ষোভে গোটা দেশে প্রায় দশ হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে দুই হাজার ৭০০ এবং নিউইয়র্কের দেড় হাজার বিক্ষোভকারীও রয়েছেন। আটককৃতদের বিরুদ্ধে লুট, কারফিউ ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে।

টানা নবম দিনের মতো এই বিক্ষোভ চলছে দেশজুড়ে। সহস্রাধিক শহরের বাসিন্দা রাস্তায় নেমে যুক্তরাষ্ট্রে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তবে বিক্ষোভ মাঝখানে সহিংস রুপ ধারণ করলে অর্ধশতাধিক শহরে কারফিউ জারি হয়। অবশ্য বিক্ষোভে এখন সহিংসতা কমেছে। প্রথমে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হলেও এখন তা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ রুপ নিয়েছে। বিক্ষোভ দমনে ২০ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের?‘গুন্ডা’ অভিহিত করে সামরিক বাহিনীকে মাঠে নামানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে বরখাস্ত হওয়া চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই। আগে থেকেই গ্রেপ্তার পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি থার্ড ডিগ্রি থেকে সেকেন্ড ডিগ্রিতে উন্নীত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গত বুধবার তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। অপর যে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- থমাস লে, আলেক্সেন্ডার কুয়েং এবং তৌ থাও। তাদের বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারে সহযোগিতা ও পরিস্থিতির দাবি ছাড়াই মানব হত্যায় সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত ২৫ মে মিনিয়াপোলিসে ৪৬ বছর বয়সী ফ্লয়েডকে গ্রেপ্তারের পর রাস্তায় ফেলে ৯ মিনিট ঘাড়ে হাঁটু চাপা দিয়ে রাখেন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে দম বন্ধ হয়ে মারা যান ফ্লয়েড। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে পুলিশি নিপীড়ন ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। পরে দেখা যায় ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু চেপে ধরে রেখেছিলেন চাওভিন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত বাকি তিন পুলিশ কর্মকর্তা।

ঘটনার পরদিনই তাদের বরখাস্ত করা হয়। চাওভিনকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ফ্লয়েড হত্যার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বাকি পুলিশ কর্মকর্তাদেরও গ্রেফতারের দাবি তুলতে থাকেন। বুধবার তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়।

ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী বেঞ্জামিন ক্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জর্জ ফ্লয়েডের দেহ সমাহিত করার আগেই এ পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।

 

 
Electronic Paper