ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উত্তপ্ত দিল্লিতে কারফিউ, নিহত বেড়ে ২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
🕐 ১১:১০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০

ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করেছে। গত তিন দিনের দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা ২০ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তিন দিন ধরে নজিরবিহীন সংঘাতের পর দিল্লি পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর প্রচুর সদস্য নগরীর দাঙ্গা কবলিত এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবাগ ও কারাবাল নগরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

দিল্লির চার জায়গায় জারি হওয়া কারফিউ এর মধ্যেই এসএন শ্রীবাস্তবকে স্পেশাল কমিশনার (আইন-শৃঙ্খলা) নিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সাংবাদিকও। আহতের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। তাঁদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ।

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়েই মুলত আইনের বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাগুলো ঘটছে।

এদিকে বুধবার এনডিটিভি জানিয়েছে, গত তিন দিনের দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই রয়েছে।

টেলিভিশন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, বুধবার সকালে নগরীর চান্দবাগ এলাকায় সিএএ-র সমর্থক ও বিরোধীদের পরস্পরের দিকে পাথর নিক্ষেপের মধ্যেই আএএফ, সিআরপিএফ ও দিল্লি পুলিশের বহু সদস্য সেখানে অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে দোতলা বাড়ির একতলায় জামাকাপড়ের দোকানে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তারপর সেখানে একটি গ্যারাজে আগুন লাগায় জনতা। স্লোগান দেয় ‘হিন্দুয়োঁ কা হিন্দুস্তান’, ‘জয় শ্রীরাম’।

এ সময় ঘটনাস্থলে হাজির হন বিজেপির স্থানীয় পুরপিতা প্রমোদ গুপ্ত। তিনিই বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়ান, গ্যারাজের মালিক শাহিদের বাড়িতে আগুন লাগানো যাবে না। শাহিদরা প্রমোদের দীর্ঘদিনের পরিচিত। তাদের কোনও ক্ষতি হতে দেননি প্রমোদ।

অবশ্য শাহিদের মতো সৌভাগ্য হয়নি সবার। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল চার। মঙ্গলবার রাত শেষে ২০-এ দাঁড়িয়েছে। আহত ১৫০-এর বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সফরের মধ্যে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল, তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

মঙ্গলবার রাতে নগরে সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি করা হলে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনের দাবি উঠেছিল। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, যথেষ্ট সিআরপি নামানো হয়েছে। এখনই সেনা ডাকার দরকার নেই।

এছাড়া পরিস্থিতি সামলাতে গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। দিল্লি-সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদেও ১৪৪ ধারা জারি হয়। নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয় গাজিয়াবাদ-দিল্লির সীমানায় যাতায়াতের ওপর। টানা বন্ধ দু’দিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির পাঁচটি মেট্রোস্টেশন।

উত্তর-পূর্ব দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে গুরুতর আহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে মৃত্যুও বাড়ার আশঙ্কা। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহতদের প্রায় অর্ধেক গুলিবিদ্ধ। সোমবার দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল রতন লালের মৃত্যু হয়। প্রথমে জানা গিয়েছিল, মাথায় পাথরের চোট লেগে মার যান রতন। ময়নাতদন্তে জানা গেল, তার বাম কাঁধ দিয়ে গুলি ঢোকে। ডান কাঁধ থেকে সেই গুলি উদ্ধার হয়েছে।

ডিসি (শাহদরা) অমিত শর্মাও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি। হিংস্র জনতা তার ওপরে লাঠি নিয়ে চড়াও হয়েছিল। তার মাথার খুলিতে চোট লেগেছে। পুলিশ বাহিনীর অন্তত ৫০ জন আহত। ছাড় পাননি সাংবাদিকরাও।

 
Electronic Paper