ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তাজমহলের বানরের তান্ডবে অসহায় ট্রাম্পের সফর!  

খোলা কাগজ ডেক্স
🕐 ৯:০০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০

আগামী সপ্তাহে (২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি) ভারত সফরে আসছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সফরেই আগ্রার তাজমহল পরিদর্শন করবেন সস্ত্রীক ট্রাম্প। তাই নতুন সাজে সেজে উঠছে তাজমহল চত্বর। তাজ সংলগ্ন রাস্তা, দেওয়ালে লাগানো হচ্ছে নতুন রঙের প্রলেপ। যমুনায় ছাড়া হয়েছে পানি। তবে তাজমহলের চারপাশে যে কয়েক শতাধিক বাঁদর রয়েছে তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে আনার কোন পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত জানা নেই জেলা প্রশাসনের। বাঁদরের পাশাপাশি ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো কিছু গবাদিপশুকেও তাজের আশপাশে ঘুরতে দেখা যায়। তাজ ভ্রমণে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বাঁদরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ও আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ। 

তবে সম্প্রতি বাঁদরের বাঁদরামি থামাতে, তাদের ভয় দেখাতে সিআইএসএফ’এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে হাতে তৈরি গুলতি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে ইউনাইটেড স্টেটস সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরাই। তাই সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে বাঁদরের আগমন হলে তা কিভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে ঘাম ছুটেছে প্রশাসনের। 

তাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সিআইএসএফ সদস্য আবার জানান, ‘একটি বা একজোড়া বাঁদরকে গুলতি দিয়ে ভয় দেখানো সহজ। কিন্ত দল বেধে আসলে সেক্ষেত্রে গুলতি কোন কাজে আসে না।’ 

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘বাঁদরের উৎপাতে এলাকার নারী ও শিশুরা তাদের বাড়ির ছাদে যেতে ভয় পায়। কারণ অধিকাংশ বাড়ির ছাদই বাঁদরের দখলে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাড়িবহর যাওয়ার পথে হঠাৎ করে এক দল বাঁদর চলে আসলে তা সত্যিই অস্বস্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তিনি আরও জানান, ‘বাঁদরের জন্মনিয়ন্ত্রণ আয়ত্তে রাখতে আগ্রা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ইতিমধ্যেই দুই কোটি রুপি ব্যায় করেছে। কিন্তু বাঁদরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।’ 

আগামী সোমাবার গুজরাটের আমেদাবাদে পৌঁছবেন ডোনাল্ড ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। এই শহরেরই মোতেরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘নমস্তে ট্রাম্প’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তারা। নতুন করে সেজে উঠেছে ওই স্টেডিয়াম। ইতিমধ্যেই প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। ট্রাম্পের সাথেই থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশিষ্ট অতিথিরা। ওই অনুষ্ঠানের পরই তাজমহল পরিদর্শনে আসবেন ট্রাম্প দম্পতি। আমেদাবাদ থেকে বিমানে করে আগ্রা বিমানবন্দরে নামবেন তারা। এরপর সেখান থেকে সড়ক পথে তাজমহল। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আগ্রায় পৌঁছে সূর্যাস্তের দৃশ্য স্বচক্ষে দেখতে চান সস্ত্রীক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।  

তাজমহল পরিদর্শন শেষে ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা চলে যাবেন রাজধানী দিল্লিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা গত সোমবারই তাজমহলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে যান। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্পের সফর ঘিরে সর্বোচ্চ নিরপত্তা ব্যবস্থা দিতে প্রস্তুত। 

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিশেষ গাড়ি ‘বিস্ট’ কে তাজমহলের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে কি না বা তাজমহলের পূর্ব প্রান্তের গেট থেকে ব্যাটারি চালিত গল্ফ-কার্টে করে ট্রাম্প ভ্রমণ করতে পারবেন কি না এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুয়ায়ী, তাজমহলের ৫০০ মিটারের মধ্যে কোন তেল-চালিত গাড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর এই কারণে ২০১৫ সালে একেবারে শেষ মুহূর্তে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তাজ পরিদর্শন বাতিল করতে হয়। 

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে তাজমহল চত্বরের ভিতরে একটি ফোয়ারা পরিষ্কার করা হয়। পুরোনো পানি ফেলে দিয়ে সেখানে নতুন পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা রোহন প্রমোদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘মার্কিন রাষ্ট্রপতি যে সড়ক দিয়ে আসবেন সেখানকার বাড়ি, দোকান, রেস্তোরা, হোটেল এবং তাজমহলের কাছের অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাচাইকরণ প্রক্রিয়া শেষের পথে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যাতে কোন ত্রুটি না থেকে যায় সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। 

অন্যদিকে, গত কয়েকদিনে ৫০০ কিউসেকেরও বেশি পানি ছাড়া হয়েছে যমুনায়। উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা ও দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে এই নদী। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দূষণের কবলে পড়েছে দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের লাইফলাইন বলে খ্যাত এই নদী। 

উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সহকারী প্রকৌশলী অরবিন্দ কুমার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এভাবে নদীতে পানি ছাড়ার ফলে নদী থেকে ভেসা আসা পচা দুর্গন্ধের তীব্রতা কিছুটা কমবে। পাশাপাশি আগ্রাতে নদীর অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়বে।’ 

তবে ট্রাম্পের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আগ্রা প্রশাসনের চিন্তা বাঁদরের বাঁদরামি। মর্কিন প্রেসিডেন্ট আগ্রায় পৌঁছনের আগে থেকেই ওই শহরের নিরাপত্তার ভার চলে যাবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। আগ্রা বিমানবন্দর থেকে তাজমহলের রাস্তায় ওই সময় কোন মানুষকেই ওই সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। ট্রাম্পের আগ্রায় থাকাকালীন সময়ে মোবাইল পরিষেবাতেও বিধিনিষেধ চাপানো হতে পারে। 

 

 
Electronic Paper