ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টালমাটাল পাকিস্তান

ভাগ্য ফিরছে ইমরান খানের

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০১৮

আর মাত্র ৬ দিন পর ২৫ জুলাই পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন। সেখানে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ থাকার কথা ছিল, কিন্তু তার বদলে দেশটি এখন পার করছে ইতিহাসের এক কঠিন সময়। মুহুর্মুহু বোমা হামলা, গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ, সেনাবাহিনীর পরোক্ষভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা, মেয়েজামাইসহ নওয়াজ শরিফের কারাবাস; সব মিলিয়ে দেশটিতে এক টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে।

নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই দেশটিতে সংকট কেন্দ্রীভুত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনী সভায় তিনটি বোমা হামলায় একাধিক প্রার্থীসহ দেড়শ’র বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যম বিশেষ করে সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ডন নিউজ’-উধাও হয়ে গেছে বাজার থেকে। পত্রিকাটি প্রকাশ হলেও সেটি হকারদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হয়রানি করা হচ্ছে পত্রিকাটির সংবাদকর্মীদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্লগে যারা লেখালেখি করেন তাদের ওপরও নেমে আসছে নানা নিপীড়নের খড়গ। আর এ সবই হচ্ছে সরাসরি সেনাবাহিনীর লোকজনের মাধ্যমে।  নিপীড়ন থেকে নির্বাচনের প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতারাও বাদ যাচ্ছেন না।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, যার ফলে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন সময়মতো আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তিনটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল কাউন্টার টেরোরিজম অথরিটি সম্প্রতি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনেট প্যানেলে ছয় রাজনীতিকের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে জানায়। তাদের তালিকা অনুসারে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান, এএনপির প্রধান আফসানদিয়ার ওয়ালি, কওমি ওয়াটান পার্টির আফতাব আহমেদ খান শেরপাও এবং কয়েকজন পিএমএল-এন নেতা হুমকির মধ্যে রয়েছেন।
তালেবান, আইএস ও আল কায়েদা জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে বলে মত দিয়েছেন সেখানকার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবিও তোলা হয়েছে।
এদিকে নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরে এলেও সেদেশের ‘পাকিস্তান মুসলিম লীগের’ (পিএমএল-এন) জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে তার দৃশ্যমান কোনো প্রভাব চোখে পড়ছে না। বরং বিগত সংসদে পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর আনুকূল্য পেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে মুসলিম লীগ ও পিপিপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান সম্প্রতি বলেছেন, পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি কয়েক দফা শাসনভার হাতে পেয়েছে। কিন্তু তারা পাকিস্তানকে ঋণের দায়ে ডুবিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করেনি।
এদিকে সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান সরকারি অর্থে হেলিকপ্টারে ঘুরে বেড়ান; এমন অভিযোগ করেছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর সভাপতি শাহবাজ শরিফ। এর আগে ইমরান দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নওয়াজের ‘লুটকৃত’ অর্থ দেশে ফেরাতে সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন। এরপর নওয়াজের ভাই শাহবাজ ইমরানের দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের সমালোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শাহবাজ।
কিন্তু পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর চেয়ারপার্সন ইমরান খান দাবি করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জেলে যাওয়ায় তার ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ খুশি হয়েছেন। শাহবাজ নওয়াজকে খেলনা বানিয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। নওয়াজকে দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারী উল্লেখ করে ইমরান আরও অভিযোগ করেন, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী এখন নিজেকে অবদমনের শিকার হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
এদিকে ২৫ জুলাইর সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে পাকিস্তানে ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের গ্রেপ্তারের পর নির্বাচন পরিচালনার গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার দলের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ রাখছে না বলে অভিযোগ করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাওয়াল বলেছেন, ‘সংবাদমাধ্যম সেন্সরশিপের মুখে পড়েছে, রাজনৈতিক কর্মীদের আটক করা হচ্ছে আর এসব শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয় বরং প্রাক নির্বাচনী কারচুপি।’
এদিকে নওয়াজ শরিফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধের কারণেই জেলে যেতে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে তাকে জেলে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্পর্কের টানাপড়েন আজকের নয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফকে বরখাস্ত করার মধ্য দিয়ে এই টানাপড়েন স্পষ্ট হয়। মার্চে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রিত্বের অযোগ্য ঘোষণা করার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও সেনাবাহিনীর নওয়াজবিরোধী অবস্থানের কথা উঠে আসে।
সব মিলিয়ে এত অরাজকতার মাঝে সেনাবাহিনী এখন পাকিস্তানে ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি হিসেবে অবস্থান করছে। এমতাবস্থায় দেশটির সার্বিক পরিস্থিতিতে টালমাটাল অবস্থাই বিরাজ করছে বলা যায়।

 
Electronic Paper