ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এখনো ধোঁয়াশায় ঢাকা ৯/১১

তুষার রায়
🕐 ১০:১৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ভয়াবহ বিমান হামলায় প্রায় তিন হাজার লোক নিহত হন। চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ওয়াশিংটনের পেন্টাগনে হামলা চালানো হয়। পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে অপর বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সবাই আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের পরিকল্পনায় এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে বিশ্বের অনেক জাঁদরেল ভূ-কৌশল বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ হামলার পেছনে অন্য কিছু আছে।

এ যুক্তির পক্ষে তারা বিভিন্ন সময়ে নানা তথ্য-প্রমাণও তারা হাজির করেন। অনেকে মনে করেন, খোদ মার্কিন সরকার এর নেপথ্যে রয়েছে। একদল বলেন, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা এ হামলা করেছে। আবার কারও কারও বিশ্বাস আসলে কোন বিমান টুইন টাওয়ারে বা পেন্টাগনে আঘাত করেনি। একটা অংশের ভাষ্য, বিমানের আঘাতে নয়, বরং ট্রেড সেন্টারের ভেতরে বিস্ফোরক বসিয়ে তা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এভাবে গত দেড় দশকে অনেক তত্ত্ব অনলাইনে সয়লাব হয়েছে।

ভূ-কৌশল বিশ্লেষকদের বড় একটা অংশ মনে করে, ভবিষ্যৎ পুরো মধ্যপ্রাচ্য হাতে এনে জ্বালানির মজুদ অটুট রাখা, অস্ত্রের বাজার সৃষ্টি, নিরঙ্কুশ বিশ্ব মোড়ল সাজাসহ বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এ হামলা করে। এর অংশ হিসেবে আল কায়েদা নির্মূলের অজুহাতে সোভিয়েতদের ছেড়ে যাওয়া আফগানিস্তান ও ইরাক দখল করে মার্কিনিরা। যদিও আজ এত বছর পরও এসব তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক শেষ হয়নি।

টুইন টাওয়ারে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইন্টারনেটে ডেভিড রস্টচেক নামে এক ব্যক্তি লেখেন ‘যেভাবে টাওয়ার দুটি ভেঙে পড়েছে তার জন্য এর ভেতরে সঠিক জায়গায় বিস্ফোরক বসাতে হতো। এ কাজটা করতে হলে কাউকে অনেক সময় নিয়ে করতে হবে।’

পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র তদন্ত করে জানায়, বিমানের আঘাতের পর আগুনে টাওয়ার দুটির কাঠামো দুর্বল হয়ে ওপরের তলাগুলো ভেঙে পড়ে। তার চাপে পুরো ভবনটিই ভেঙে পড়ে যায়।

এখনো অনেক ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করেন না। ওই হামলায় রয়টার্সের সাংবাদিক জেফ ক্যাম্পবেল নিহত হন। ২০০২ সালে ধ্বংসস্তূপে তার কাঁধের হাড়ের একটি অংশ পাওয়া যায়। তবে ওই ঘটনার তদন্ত শেষ হয় ২০১৩ সাল নাগাদ। কিন্তু এর মধ্যেই ম্যাটের মনে ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার সরকারি ভাষ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। নিহত জেফের ভাই ম্যাট নিশ্চিত হলেন, ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে বহু তথ্য ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে, অনেক প্রশ্নের তিনি উত্তর পাচ্ছেন না। তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েও বিস্তারিত সরকারি তথ্য পাননি। এরকম অনেক ব্যক্তি সঠিক ব্যাখ্যা পাননি।

ক্যালিফোর্নিয়ার চ্যাপম্যান বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালে এক জরিপ চালিয়ে বলেছে, অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান বিশ্বাস করে যে সরকার ৯/১১-র ঘটনা সম্পর্কে তথ্য গোপন করছে।

টুইন টাওয়ারে হামলার পরপরই ছড়িয়ে পড়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এসব তত্ত্বের কোনটায় বলা হয়েছে, মার্কিন সরকার নিজেই ওই ঘটনায় জড়িত ছিল। কেউ বলেন, বুশ আক্রমণটি ঘটতে দিয়েছেন। অনেকে বলেন, ঘটনার পরিকল্পনাতেই সরকার জড়িত ছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সোভিয়েত যুগের পতনের পর বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার হতে মরিয়া হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ভূ-কৌশলভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানের দিকে নজর দেয়। সেখানে থাকা সোভিয়েতদের হটাতে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার পৃষ্ঠপোষকতা করে। অর্থ, পরিকাঠামো, অস্ত্র, প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহায়তা পেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে আল কায়েদা। একপর্যায়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করে সোভিয়েতরা। যুক্তরাষ্ট্র আফগাননিস্তানে যাওয়ার নিখুঁত প্লান কষে। এছাড়া তাদের নজর ছিল তেলসমৃদ্ধ ইরাকের দিকে। এর আগে থেকেই দেশটির শাসক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে একনায়কত্ব ও জীবাণু অস্ত্রের মজুদ গড়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়। পাশাপাশি আরেক তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ার গাদ্দাফিকেও টার্গেট করে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে ঘাঁটি গড়ার মাধ্যমে বিশ্বের জ্বালানি ভাণ্ডার মধ্যপ্রাচ্য করায়ত্ত করার পাশাপাশি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের বাজারের হিসাব ছিল মার্কিন প্রশাসনের মাথায়। সঙ্গে ছিল বিশ্বের একক সুপার পাওয়ার হওয়ার হাতছানি।

এ সব বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে শত্রু হয়ে যাওয়া লাদেনকে টার্গেট করা হয়। এসব কিছুর যোগফল হলো ৯/ ইলেভেন হামলা।

এসব যুক্তি পোক্ত করেছে যখন খবর প্রকাশিত হয়, হামলার ঠিক আগে আগেই বড় হামলার বিষয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (জুনিয়র) প্রশাসনকে জানানো হয়। কিন্তু বুশ তাতে পাত্তা দেননি। খোদ ডেমোক্রেট সেনেটর গ্যারি হার্ট বলেন, ‘আমরা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে শিগগিরই একটা হামলা হতে চলেছে। কিন্তু বুশ এমনকি সংবাদ মাধ্যমও ওই তদন্ত রিপোর্টকে গুরুত্ব দেয়নি।

এরকম অনেক ঘটনার উদাহরণ টেনে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন এ হামলা ঘটতে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করে। তারা মনে করেন, যদিও এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আংশিক সফল হয়েছে। কারণ এ ঘটনার এক দশকের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে শুরু করে চীন। তা ছাড়া আফগানিস্তানে মার্কিনিদের হাল রুশদের মতো হয়েছে। তারা এখন বিপাকে পড়ে তালেবানের মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কাবুলের ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা করছে। ইরাকে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনার জেরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে চরম অস্থিরতা চলছে। ফলে দিন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন কতটা তা নিয়ে সন্দিহান ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্ববাসীরা।

 
Electronic Paper