অবরুদ্ধ কাশ্মীরে ক্ষোভ-আতঙ্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৯
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ও কেন্দ্রীয় শাসনে আনার জেরে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে রাজ্যটি। সেখানে কবরের নীরবতা বিরাজ করছে। মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন কাশ্মীরবাসী। তবে সাময়িকভাবে সেখানে ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিসেবা চালু হয়েছে। মানুষ বাইরে বেরোচ্ছে।
শুক্রবার মুসল্লিরা সমজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন, তবে সেনা প্রহরা ছিল মসজিদগুলোর গেটে। সার্বিকভাবে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতিকে মৃত্যু উপত্যকার সঙ্গে তুলনা করছেন সেখানে অবস্থানরত সাংবাদিকরা। স্থানীয় মানুষ এতটাই ক্ষুব্ধ যে, যেকোনো সময় সেখানে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
অবরুদ্ধ কাশ্মীর ঘুরে বিবিসি বাংলার সাংবাদিক শুভজ্যোতি ঘোষ জানান, রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগরে পা রাখার পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি পেরিয়ে গেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু উপত্যকায় এসে পৌঁছেছি। রাস্তাঘাটে একশো গজ পরপরই সেনা চৌকি আর কাঁটাতারের ব্যারিকেড। রাস্তায় যত না সাধারণ মানুষ, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সেনা আর আধা সেনা। কোথাও কোথাও মানুষের ছোট ছোট কিছু জটলা। ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তে তারা কতটা বিক্ষুব্ধ, সেটা তাদের চেহারাতেই স্পষ্ট।
অনেকেই জানান, দশ মিনিটের জন্য কারফিউ তুলে নেওয়ার হিম্মত দেখাক সরকার, তারপরই তারা দেখবে দলে দলে কত মানুষ রাস্তায় নামে এর প্রতিবাদ জানাতে।’
সরকার উত্তাপের আঁচ পেয়ে গোটা রাজ্য নিদ্রি নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দিয়েছে।
কাশ্মীর এখন যেন এক মৃত্যুপুরী। রাস্তাঘাটে কোনো লোকজন নেই। পুরো রাজ্যজুড়ে আছে প্রায় আড়াই লাখ ভারতীয় সেনা। টানা কারফিউ জারি রয়েছে, দোকানপাট বন্ধ। অনেকের বাড়িতেই খাবার ও রেশন ফুরিয়ে গেছে। অনেকে সাহস করে কেউ কেউ বেরুচ্ছেন, কিন্তু কিছু কেনার মতো কোনো দোকান খোলা নেই। শ্রীনগর শহরজুড়ে একটা থমথমে পরিবেশ। চারদিকে আতঙ্ক, ক্ষোভ।
গুপকার রোডে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বা মেহবুবা মুফতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকরা। কিন্তু সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
গুজবের শহর হয়ে উঠেছে শ্রীনগর। নানা জায়গায় বিক্ষোভ চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু শ্রীনগরের কোথাও বিক্ষোভ চোখে পড়েনি।
একটা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে চালকরা জানালেন, বেরামিতে দশ হাজার বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকজন পথে নেমে বিক্ষোভ করছে। কিন্তু এগুলো সব শোনা কথা, সত্যিই এরকম কিছু ঘটছে কি না, তা যাচাই করার কোনো উপায় নেই।
বিপুল সংখ্যায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকায় কেউ বিক্ষোভ করতে পারছে না। কাশ্মীরে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ একরকম রোধ করে রাখা হয়েছে।
কদিন পরেই মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, ঈদুল আজহা। ভেড়ার পাল নিয়ে এসেছিলেন বহু ব্যবসায়ী, বিক্রির জন্য। কিন্তু ভেড়া কেনার মতো কেউ নেই। কাশ্মীরের মানুষের ঈদের আনন্দ এবার মাটি, এক নিরানন্দ ঈদের অপেক্ষায় তারা।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, পাঁচ দিন পর পরিবেশ কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হচ্ছে। আংশিকভাবে ইন্টারন্টে ও টেলি-সংযোগ চালু হয়েছে। মানুষ শুক্রবারের নামাজে অংশ নিয়েছেন। তবে মসজিদের গেটে গেটে সেনা প্রহরা ছিল।
আগামী সোমবার ইদ। বৃহস্পতিবার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করেছেন বাইরে থাকা কাশ্মীরিরা যাতে ঈদের আগে ঘরে ফিরতে পারেন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। রাজ্যপাল সত্যপাল সিংহও নিরাপত্তার কড়াকড়ি শিথিলের সুপারিশ করেছেন। ৭০ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে আগ্রার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতেও দেশ দুটিকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
আমেরিকা ও চীন একই সুরে দুদেশকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি কাশ্মীর পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে তারা।
কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, বামপন্থি নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাশ্মীরে ঢুকতে দেয়নি নিরাপত্তা বাহিনী।
এর আগে গত সপ্তাহে ভারতের পার্লামেন্ট তাদের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার আইন পাস করে।