উত্তপ্ত কাশ্মীর
ভূস্বর্গে অগ্নিতাপ
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৯, ২০১৯
বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া এবং ভেঙে দুভাগ করার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অধিবাসীরা ফুঁসছে ক্ষোভে। কয়েক লাখ সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির পরও পৃথিবীর ভূস্বর্গ হিসেবে খ্যাত কাশ্মীরে থামানো যাচ্ছে বিক্ষোভ। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। রাস্তায় রাস্তায় সেনা চৌকি ও টহল, ইন্টারনেট, মোবাইল, টেলিফোনসহ সার্বিক যোগাযোগ বন্ধ, ৩০০-ও বেশি রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার, নিষেধাজ্ঞা ও কারফিউ চলছে সেখানে। সার্বিক পরিস্থিতিকে কারাগারের সঙ্গে তুলনা করছেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা। যে ৩৭০ ধারা এতদিন তাদের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করেছিল সেটি হঠাৎ করেই রদ হয়ে যাওয়ায় উপত্যকার সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ। বিধিনিষেধ উঠে গেলেই মানুষ তাদের ক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নামবে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রতিবাদকারীদের পাথরের জবাব দিতে গিয়ে কোথাও কোথাও গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। পাকিস্তানের গণমাধ্যমের বরাতে দাবি করা হয় এ পর্যন্ত ৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ৬০০ বিক্ষোভকারী। এদিকে ইন্টারনেট সংযোগ, স্থানীয় টেলিফোন ব্যবস্থা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখায় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একপ্রকার বিচ্ছিন্ন। ফলে সেখানে দেখা দিয়েছে এক অরাজক পরিবেশ। আসন্ন ঈদে এই পরিস্থিতির উত্তরণের সম্ভাবনা করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার কতটুকু শিথিল করবে তা নিয়েও থেকে যাচ্ছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।
নিষেধাজ্ঞা এবং কারফিউ জারির পর কার্যত বন্দী হয়ে আছেন কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দারা। একদিকে তাদের দাবির তোয়াক্কা করছে না কেন্দ্রীয় সরকার, অন্যদিকে মানছেন না বিদ্রোহীরা। ৩৭০ নং ধারা বাতিলের আগে ৮ লাখ এবং বাতিল পরবর্তী আরও পাঁচ লাখ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। আর সেনা মোতায়েনের পর থেকে নিজেদের ‘বিশেষ’ মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে নিহত-গ্রেফতারের পরও সক্রিয় আছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদকারীরা।
গতকাল এক রাতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে কমপক্ষে ৫৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহসহ অনেক রাজনীতিক। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যখনই কাশ্মীর থেকে কারফিউ ও বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে বা শিথিল করা হবে, তখনই ভারত সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে পারে এই উপত্যকায়। আগামী সোমবার মুসলিমদের ত্যাগের উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এ সময়ে কারফিউ ও বিধিনিষেধ শিথিল করা হতে পারে। এই সুযোগেই সেই ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠতে পারে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গবেষকরা কাশ্মীরে জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা করছে। বিবিসি বলছে, পাকিস্তান সংলগ্ন ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ায় সেখানে জঙ্গিবাদের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন সিনিয়র মুসলিম নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আসন্ন ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত সৈন্য এবং নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসবে। কাশ্মীরিরা ঘটনার আকস্মিকতায় এখনো খানিকটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। খুব শিগগিরই উপত্যকা ক্ষোভে ফেটে পড়বে বলে মনে হচ্ছে। এতে করে জঙ্গিবাদেরও উত্থান হতে পারে।’
এদিকে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বিলোপসহ কঠোরতা আরোপের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলেছে, এর ফলে অঞ্চলটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র কাশ্মীরজুড়ে ইন্টারনেটসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ, সব ধরনের রাজনৈতিক সভা নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্বিচারে আটকের বিষয়গুলো নিয়ে এক ভিডিওবার্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘ভারত সরকার ভিন্নমত ধারণ করে দফায় দফায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে এসেছে। রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মতাবলম্বী নেতাদের শাস্তি দিতে নির্বিচার আটক-গ্রেফতার চালিয়েছে এবং কাশ্মীরে বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। এর ফলেই বহু বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা- ও আহতের ঘটনা ঘটেছে।’
এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় দূতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, কাশ্মীরে যুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কাশ্মীরের দিকে নজর রাখছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কাশ্মীর ইস্যুর বাইরে নেই। কিন্তু যতক্ষণ না ভারত সরকার কাশ্মীর নিয়ে চূড়ান্ত বার্তা দিচ্ছে ততক্ষণ ধারণার বাইরেই থাকছে ভূস্বর্গ কাশ্মীরে অগ্নিপাতের চিত্র।