ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উপসাগরে উত্তেজনা বাড়ছেই

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৯

হরমুজ প্রণালিতে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ ব্রিটেনের পতাকাবাহী ট্যাঙ্কার স্টেনা ইমপেরিওর আটকের ঘটনায় ইরানের সঙ্গে ইঙ্গো-মার্কিন জোটের উত্তেজনা নতুন মাত্রায় উঠেছে। এ ঘটনাকে ‘শত্রুতামূলক কর্মকা-’ এমন অভিযোগ তুলেছে ব্রিটেন। তারা বলেছে, ওমানের জলসীমায় জাহাজটিকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে যা চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্য। এ ঘটনায় লন্ডনে নিযুক্ত ইরানি দূতকে তলবও করা হয়েছে। এদিকে জাহাজ ও ক্রুদের না ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থার কথা জানিয়েছে ইরান।

গতকাল ইরানের সংসদ সদস্যরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত কিছু দিন ধরেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় সন্দেহজনক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েকটি তেল ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ও নাশকতা, ব্রিটিশদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইরানের একটি তেল ট্যাঙ্কার আটক এবং হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচলের নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে। এসব ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে পশ্চিমারা পারস্য উপসাগরের জলপথকে জ্বালানি আনা-নেওয়ার জন্য অনিরাপদ হিসেবে তুলে ধরার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রিটিশ জাহাজ আটকের ঘটনায় পারস্য উপসাগরের এ অঞ্চলটিতে চলমান অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেবে। পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সামরিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। এ সময়ে পারস্য উপসাগরের এ অঞ্চল দিয়ে চলাচলরত বেশ কয়েকটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পারস্য উপসাগরে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ মাসের গোড়াতেই চলমান ইরান-মার্কিন উত্তেজনায় যুক্ত হয় যুক্তরাজ্য। জিব্রাল্টার প্রণালি থেকে ইরানের পতাকাবাহী একটি জাহাজ আটক করে ব্রিটিশ সেনারা। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের দাবি ইউরোপের ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তেল রপ্তানি করছিল ইরান। তবে এ ঘটনার উচিত জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল ইরান। শুক্রবারের এ জাহাজ আটকের ঘটনাটিকে তাই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

গতকাল ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী ব্রিটিশ ট্যাঙ্কার আটকের ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে কয়েকটি ইরানি স্পিডবোটের পাশে স্টেনা ইমপেরিওকে চলতে দেখা যায়। ফুটেজে নৌযানটির নামও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। উপরে থাকা একটি হেলিকপ্টার থেকে স্কি মাস্ক পরিহিত সৈন্যদের ওই ট্যাঙ্কারের ডেক বরাবর বন্দুক ধরে রাখার দৃশ্যও ভিডিওতে ছিল। একই কৌশলে দুই সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ রাজকীয় মেরিন বাহিনীর সদস্যরাও জিব্রাল্টার প্রণালি থেকে ইরানি সুপার ট্যাঙ্কার গ্রেস ১-কে আটক করেছিল।

তেলবাহী ট্যাঙ্কার আটকের পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, তারা এ পরিস্থিতিকে ইরানের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেস-১’-কে আটক করা হয়েছিল সম্পূর্ণ বৈধভাবে। আর স্টিনা ইম্পারোকে আটক করা হয়েছে ওমানের জলসীমা থেকে। যা স্পষ্টত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আটকের পর জাহাজটিকে ইরানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি পুরোপুরি ও একেবারে অগ্রহণযোগ্য। জার্মানি এবং ফ্রান্স ট্যাঙ্কারটি ছেড়ে দিতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি যা বলেছি ইরান তাই করে দেখাচ্ছে, দেশটি কেবলই সমস্যা তৈরি করছে। আর কিছু নয়।’

তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদ জারিফ বলেছেন, তাদের এ পদক্ষেপের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক নৌ আইন সমুন্নত রাখা। তিনি বলেন, ব্রিটেনকে আমেরিকার ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের’ সঙ্গী হওয়ার পথ ছাড়তে হবে। ব্রিটেন জিব্রাল্টারে যা করেছে তা ‘জলদস্যুতা’।

ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামেজান শরীফ বলেছেন, ট্যাংকার স্টেনা ইমপেরিওর পাহারায় একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজও ছিল। বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী ওই যুদ্ধজাহাজের ‘প্রতিরোধ ও হস্তক্ষেপ’ সত্ত্বেও ট্যাংকার জব্দে সক্ষম হয়েছে। ইরানি বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, ইরানি একটি মাছধরার নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষের পর সৈন্যরা স্টেনা ইমপেরিওর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়। সংঘর্ষের আগে মাছধরার নৌকাটি ব্রিটিশ ট্যাংকারটিকে সরে যেতে বললেও তারা তাতে গা করেনি। নৌযানটিকে পরে বন্দর আব্বাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাহাজ ও এর ২৩ ক্রু সেখানেই অবস্থান করবেন।

জাহাজ আটকের ঘটনায় জাতিসংঘকে নালিশ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য। তাদের দাবি, নৌযানটিকে আটক করার সময় সেটি ওমানের জলসীমায় ছিল এবং সব নিয়ম মেনেই প্রণালিটি পার হচ্ছিল। আমরা সংঘাত চাই না, কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি ট্রানজিট করিডর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে বৈধ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের হুমকি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও উসকানিমূলক।

এদিকে নতুন সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ইরানের শত্রুরাষ্ট্র সৌদি আরবে ৫০০ সেনা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

 
Electronic Paper