কোরীয় প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে কোরিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের পর কোরীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের উদ্দেশে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন তার চার দেশ সফরের প্রথমভাগে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি ১৩ থেকে ২১ জুলাই এই সফর করবেন। বাংলাদেশের পর তিনি তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান ও কাতার সফরে যাবেন।

কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা নতুন পণ্য উৎপাদন করার জন্য তাদের (কোরিয়ান) বিনিয়োগের সন্ধান করব, কারণ বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদনে তাদের রয়েছে যথেষ্ট উদ্ভাবনী শক্তি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেডের (কেইপিজেড) পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করে কোরিয়ান প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকায় আরও বিনিয়োগ আহ্বান করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আরও কোরিয়ান কোম্পানিকে আকৃষ্ট করার জন্য সেখানে বিশাল জমি বরাদ্দ করেছি (কেইপিজেড)। বাংলাদেশ আইসিটি খাতে আরও উন্নতির জন্য কোরিয়ান প্রযুক্তিগত সহায়তাও চাওয়া হবে। বাণিজ্য খাতের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও বাংলাদেশ কোরিয়ান সমর্থন চাইবে।’

কোরীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘সিউলের বহুমুখী কূটনৈতিক কৌশলের আওতায় মধ্য ও দক্ষিণপশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে দক্ষিণ কোরীয় প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন এই সফর করছেন।’

গতকাল শনিবার রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকায় অবস্থানরত কোরীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন এই হোটেলেই থাকবেন।

আজ সকালে সাভারে জাতীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবকের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার এই সরকারি সফরের কার্যক্রম শুরু হতে চলেছে। স্মৃতিসৌধ থেকে তিনি সাভার ইপিজেড এ ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টস ওয়্যার ও ঢাকার মুগদাপাড়ায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডভান্স নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ পরিদর্শন করবেন। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন দক্ষিণ কোরীয় প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে দুপুরে লি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এফবিসিসিআই ও কেআইটিএ আয়োজিত বাংলাদেশ-কোরিয়া বিজনেস ফোরামে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন লি নাক-ইয়ন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর কোরীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করবেন। সন্ধ্যায় তিনি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন।

পরদিন সোমবার ঢাকা ছাড়ার আগে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাজাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।