ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেড়শ মানুষ মরার আশঙ্কায় ইরানে হামলা করেননি ট্রাম্প

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৩, ২০১৯

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ইরানে আক্রমণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েই ছিল, কিন্তু তাতে দেড়শ মানুষের মৃত্যু হতে পারে শুনে শেষ মুহূর্তে তিনি হামলার সিদ্ধান্ত বদলান। তার ভাষ্যমতে, একটি মানুষবিহীন ড্রোন ভূপাতিত করার বদলায় দেড়শ মানুষের মৃত্যু ঠিক যুক্তিযুক্ত হতো না। নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তারা ইরানের তিনটি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। নির্ধারিত সময়ের মাত্র ১০ মিনিট আগে তা বাতিলের ওই নির্দেশ দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় অনুযায়ী খুব ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা ড্রোন (আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক) গুলি করে ভূপাতিত করে ইরান। ড্রোনটি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমুজগান প্রদেশে কুহমোবারকের কাছে আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল বলে অভিযোগ তেহরানের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় ছিল। ইরান বিনা উসকানিতে হামলা করেছে। ওই অঞ্চলে ট্রাম্পের সমর প্রস্তুতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এমনিতেই উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে ইরান গুলি করে ড্রোন নামানোর পর তা নতুন মাত্রা পায়।

ড্রোনটি ভূপাতিত করে ইরান ‘চরম ভুল’ করেছে বলে এক টুইটে হুঁশিয়ার করেন ট্রাম্প। গত শুক্রবার সকালে এ বিষয়ে একাধিক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরানে হামলা চালানোর জন্য তড়িঘড়ি নেই তার। আমাদের সেনাবাহিনী পুনঃসজ্জিত, নতুন এবং এগিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত, এখন পর্যন্ত বিশ্বের সেরা।

অন্যদিকে, ইরানি সেনাবাহিনী বা বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে গত শুক্রবার প্রথম প্রহরেই ওই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানায় নিউইয়র্ক টাইমস।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যগুলো বলছে, হামলার প্রস্তাব দিয়েছিল পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামনে যে প্রস্তাবগুলো তোলা হয়, তার মধ্যে একটি ছিল হামলা। তবে হামলা চালানো হলে ওই অঞ্চলে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়। পরে ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা এবং কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে ইরান নিয়ে আলোচনার পর সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়।

অপর দিকে ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলের নেতা ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো তাড়না নেই আমেরিকার। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, যুদ্ধ বাঁধলে তা কল্পনাতীত পরিণতির বিপর্যয় নিয়ে আসবে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা লেখিকা ও কলামনিস্ট ই. ডেন ক্যারল (৭৫) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। প্রায় দুই দশক আগে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত শুক্রবার নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে ক্যারলের লেখা বইয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকাশ পায়। সেখানে ১৯৯৫ সালের শেষ দিক বা ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকের ওই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়।

ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যারল বলেন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ড্রেসিংরুমে ওই সময়ের প্রভাবশালী আবাসন ব্যবসায়ী ট্রাম্প তার ওপর হামলে পড়েন। আমি কোনোমতে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে যাই।

এতদিন পর কেন এ ঘটনা প্রকাশ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ক্যারল বলেন, আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার কথা প্রকাশ করে আমি অন্য নারীদের সাহস জোগাতে পারবো বলে আশা করছি। যেন তারা অপরাধবোধে না ভোগে এবং সামনে এগিয়ে আসেন। তখন আমি ওই ঘটনার জন্য নিজেকেই দায়ী করেছিলাম। যে কারণে চুপ ছিলাম এবং অপরাধবোধে ভুগতাম।

প্রসঙ্গত, ক্যারলের বয়স এখন ৭৫ বছর। দুই দশকের বেশি সময় আগে ঘটা ওই ঘটনার কথা তিনি তার দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে জানিয়েছিলেন। তাদের একজন গত শুক্রবার ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ঘটনার পরপরই ক্যারল তাকে সব কথা বলেছিলেন। কিন্তু তখন তিনি ক্যারলকে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেননি।

এদিকে, বরাবরের মতো ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের এই অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি একে ‘মিথ্যা খবর’ উল্লেখ করে বলেন, কেন ওই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এই ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ বা সাক্ষী নেই? এই জীবনে ওই নারীর সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। তিনি তার নতুন বইয়ের বিক্রি বাড়াতে চাইছেন এটা তার ওই অপচেষ্টার কথাই বলছে। তার বই তো কল্পকাহিনী বিভাগে বিক্রি হওয়া উচিত।

ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্যারল বা নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে এ কাজ করাচ্ছে। কারো কাছে এ বিষয়ে তথ্য থাকলে সামনে আসুন। এটা অসম্মানজনক এবং যারা এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনছে তাদের ভয়ঙ্করভাবে এর মাসুল দিতে হবে।

 
Electronic Paper