ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রথম শূন্য হাতে বামরা

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২৪, ২০১৯

২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মসনদ দখলে নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। ওই সময় পশ্চিমবেঙ্গর ৪২ আসনের মধ্যে বামফ্রন্টের দখলে ছিল ১৫ আসন। কিন্তু সে শক্তি দ্রুতই ক্ষয়ে গেলে মমতার তৃণমূল রাজ্য জয় করার পর থেকে। লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের বামদের সর্বশেষ আসন ছিল মাত্র দুটি। তার একটি হলো, রায়গঞ্জ আর অপরটি মুর্শিদাবাদ। এ নির্বাচনে সে দুটি আসনও হারাতে হলো তাদের। দীর্ঘ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে এবারই প্রথম নির্বাচনের মাঠ থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে বাংলার বামদের।

শুধু বাংলায় নয় বামদুর্গ ‘ধস’, ‘পতন’, ‘অস্তিত্ব সংকট’ ইত্যাদি শব্দবন্ধনী দ্বারা চিহ্নিত হচ্ছে এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ত্রিপুরা, কেরলের মতো বাম দুর্গগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন। পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরার বামপন্থীরাও এবার তাদের জোড়া আসন হাতছাড়া করেছে। এক খ- দ্বীপের মতো আশার বাতি জ্বলছিল শুধু কেরলে। কিন্তু সেখানেও এবার হানা দিয়েছে গেরুয়া হাওয়া।

বিহারের বেগুসরাইয়ে এবার নজর ছিল তরুণ বামপন্থী নেতা সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমারের দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানহাইয়াও আনতে পারেনি কোনো সুখবর। সারা দেশের বামেদের অবস্থা যখন এই তখন রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে বের করছেন বামদের এমন পরাজয়ের কারণ কী? বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে কেন এই অবস্থা? কেন এভাবে অপ্রাসঙ্গিকতার অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে বামরা?

বামপন্থী বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, তীব্র মেরুকরণের ভোটে তারা এবার পায়ের তলায় জমিই খুঁজে পাননি। সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘুর ধর্মীয় বিভাজনে এবারের ভোট ভাগ হয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসাব বলছে, বিজেপির ভোট এবার বেড়ে হয়েছে ৩৮.৫%। আর বামেদের ভোট নেমে এসেছে প্রায় ৬%-এ! তিন বছর আগের লোকসভা ভোটে বামফ্রন্ট পেয়েছিল প্রায় ২৬% ভোট। বিজেপির ভোট তখন ছিল ১০.১৬%। অনেকেই মনে করছেন, বামেদের যে ২০% ভোট ক্ষয় হয়েছে, তার পুরোটাই যোগ হয়েছে বিজেপির লাভের খাতায়! যে কারণে ভোটের আগে থেকে সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে থাকা স্লোগান এখন বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব ‘বামের ভোট রামে’!

বিধানসভার পরে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম ভোট কমে এসেছিল প্রায় ১৬%-এ। বামেদের ছাপিয়ে রাজ্যের নানা জায়গায় তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপিই। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে স্থানীয় নানা সমীকরণ কাজ করে, কোনো দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরই সেখানে চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ থাকে না। লোকসভা নির্বাচনে বামেদের এমন রক্তক্ষরণ রাজনৈতিক শিবিরে প্রবল বিস্ময় তৈরি করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার বলছে, রাজ্য রাজনীতির সমীকরণে বামফ্রন্ট এবং বিজেপি, দুপক্ষেরই অবস্থান তৃণমূলবিরোধী। বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে এই দুপক্ষের ভোট কেন মিশে গেল, তার তিন দফা কারণ উঠে আসছে রাজনৈতিক শিবিরের প্রাথমিক পর্যালোচনায়। প্রথমত, দেশে নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রত্যাবর্তনকে ঠেকানোর চেয়েও রাজ্যে তৃণমূলের হাত থেকে ‘নিস্তার’ পাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যাওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছিল বাম শিবিরের বড় অংশে। কংগ্রেসের সঙ্গে থাকলে কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গড়ার যে বার্তা দেওয়া যেত, তা সম্ভব হয়নি। এই হতাশাই বহু বাম সমর্থকে পদ্মমুখী করে তুলেছে।

আর তৃতীয়ত, পরের পর নির্বাচনে ব্যর্থ বাম নেতৃত্বের কোনো নিয়ন্ত্রণ কর্মী-সমর্থকদের ওপরে কাজ করেনি। তারাই এবার তৃণমূলকে শিক্ষা দেবেন, বিজেপি নেতৃত্বের এই প্রচারে বরং বাম কর্মী-সমর্থকেরা বেশি ভরসা রেখেছেন! ভাঙা সংগঠন নিয়েও যতটুকু কাজ করা যায়, তার বেশির ভাগটাই তলে তলে গেরুয়া শিবিরের পক্ষে গেছে।

 
Electronic Paper