এক রূপকথার নায়ক
তুষার রায়
🕐 ১১:০০ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০১৯
দাঙ্গার কলঙ্ক আর তীব্র সমালোচনার তীর উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। প্রায় সব বিরোধী দল বিজেপি নয় মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু ভারতীয় ভোটাররা তাকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ভূমিধস বিজয় উপহার দিয়েছেন। যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন। গুজরাটের অনগ্রসর মেহসেনা জেলা থেকে দিল্লি দখলের রূপকথা কীভাবে বাস্তব হলো তা নিয়ে এখনো ধন্দে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
জন্ম ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় মোদি স্কুলজীবনে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন। কৈশোরে বাবাকে সাহায্য করতে রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেছেন মোদি। পরে কাজ করেছেন ক্যান্টিন বয় হিসেবে।
১৭ বছর বয়সেই যশোদাবেন নামের এক বালিকার সঙ্গে বিয়ে হয় মোদির। তবে সেই সংসার ছিল মাত্র তিন বছরের। তিনি চলে যান হিমালয়ে তপস্যা করতে।
আট বছর বয়স থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোদি। ১৯৮৫ সালে আরএসএসের হয়ে বিজেপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে শুরু করেন তিনি।
১৯৯৫ সালের গুজরাট রাজ্যসভা নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বে সাফল্য পায় দলটি। ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। এরপর আরো তিন দফা তিনি ওই পদে ছিলেন। গুজরাটকে পরিণত করেছেন উন্নয়নের মডেলে।
২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দুত্ববাদীদের টানা কয়েক দিনের দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মুসলিম নাগরিকের মৃত্যু হয়। মোদির বিরুদ্ধে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে তা কখনো আদালতে প্রমাণিত হয়নি। এরপর মোদি কার্যত হিন্দুত্ববাদের ধুয়া তুলে ছিনিয়ে নিয়েছেন একের পর এক জয়।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ জয় পায় বিজেপি। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর থেকে মোদি ম্যাজিক চলছে। ২০১৯ রেকর্ড আসন নিয়ে ফের দিল্লির তখতে নরেন্দ্র মোদি।
মোদির এই উত্থানের নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ সাংগঠনিক দক্ষতা, সম্মোহনী বাগ্মিতা, সাহসী মনোভাব, উন্নয়নের মানসিকতা ও অবশ্যই ঈশ^র প্রদত্ত বিচক্ষণতা। ২০১৪ সালে মোদি বিপুল উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তরুণদের উজ্জীবিত করেছিলেন। কিন্তু সেসব বুলি পূরণ না হওয়ায় বিচক্ষণ মোদি এবার জাতিগত ও ধর্মীয় মেরুকরণের নীলনকশা প্রস্তুত করেন। যে রাজ্যে যে ভেদ নীতি দরকার সেই রাজ্যে তাই উসকে দিয়েছেন তিনি।
একই সঙ্গে ‘পুলওয়ামা হামলা’ তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এ হামলার জেরে পাকিস্তানে গিয়ে বিমান হামলা করে ফিরে আসার পর থেকে মোদির একটা ‘হিরো’ ইমেজ দৃঢ়তর হয়েছে। মোদি এই ফাঁকে উন্নয়নের সঙেগ জাতীয়তাবাদ ও ধর্মের জিকির শুরু করেন। তাতেই কেল্লা ফতে।