‘ব্রেক্সিট’র পরও টিকল মে সরকার
ভরসা প্ল্যান-বি
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯
আস্থা ভোটে টিকে যাওয়ার পর এবার ব্রেক্সিট চুক্তির ‘প্ল্যান-বি’ নিয়ে এগুচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। আগামী ২৯ জানুয়ারি পার্লামেন্টে নতুন এ পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক ও ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদের জন্য প্ল্যান-বি ধরেই এখন কর্মকৌশল আঁটছেন মাত্র ১৯ ভোটে উতরে যাওয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এরই মধ্যে বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের দ্বারস্থ হতে শুরু করেছেন তিনি। বিরোধী বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের মধ্যে যারা ‘চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের’ বিপক্ষে তদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনায় শিগগিরই বসবেন তিনি। তবে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি এ বৈঠকে অংশ নেয়নি।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় আস্থা ভোটে জেতার পর থেরেসা মে লিবারেল ডেমোক্রেট, এসএনপি ও প্লাইড ক্যামরি পার্টির আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে লেবার এমপিরা অংশ না নেওয়ায় থেরেসা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি অত্যন্ত হতাশ যে লেবার পার্টির নেতা এখন পর্যন্ত অংশ নিতে চাননি। কিন্তু আমাদের দরজা সব সময় খোলা।’ যদিও জেরেমি করবিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনো ‘ইতিবাচক আলোচনা’ হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট’ এই চিন্তা বাদ দিতে হবে।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে টালমাটাল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এত বড় সাংবিধানিক সংকটে আগে কখনই পড়েনি দেশটি। বিপুল ভোটে থেরেসা মের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন। অল্পের জন্য রক্ষাও পান তিনি। আস্থা ভোটে তার পক্ষে ছিলেন ৩২৫ জন এমপি। বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৩০৬টি। অর্থাৎ মাত্র ১৯টি ভোট এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছে থেরেসার গদি।
এর আগের দিন থেরেসার চুক্তির পক্ষে ভোট দেন মাত্র ২০২ জন এমপি। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৪৩২টি। ব্রিটিশ সংসদীয় ইতিহাসে এত বড় হারের আর কোনো নজির নেই। অনাস্থার বাধা পার হতে পারলেও থেরেসার ওপর চাপ কাটছে না। কারণ আগের চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ২৯ মার্চে বেরিয়ে যেতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে। কিন্তু এখন যা বাস্তবতা তাতে মাত্র ৭০ দিনে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে ব্রেক্সিটপন্থীরা বলতে বাধ্য হচ্ছেন, পিছিয়ে দেওয়া হোক ব্রেক্সিট।
বুধবার সন্ধ্যায় পার্লামেন্টে দ্বিতীয় গণভোটের দাবি তোলেন লেবার এমপিরা। তাদের বক্তব্য, ব্রিটেনের মানুষকে আর একবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। তবে এ ক্ষেত্রেও একটা অসুবিধা রয়েছে। লেবার নেতা জেরেমি করবিন নিজে দ্বিতীয় গণভোটের পক্ষে নন।
তবে লেবার এমপি ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ‘আমরা চাই এখনই সাধারণ নির্বাচন হোক। কিন্তু তা যদি না হয়, আমাদের দলের অধিকাংশ এমপি-ই দ্বিতীয় গণভোটের পক্ষে রায় দেবেন। তখন করবিনকেও তা মেনে নিতে হবে।’ দ্বিতীয় গণভোটের পক্ষে কথা বলেছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান-ও। তার মত, ‘মানুষ এখন পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোদস্তুর ওয়াকিবহাল হয়েছেন। তাদের আর একবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’
তবে কনজারভেটিভ শিবিরে গণভোট নয়, ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষেই বেশিরভাগ আইনপ্রণেতা। তারা বলছেন, ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে সামনে এগুচ্ছে। এখনি সেটা বন্ধ করা দরকার।
এদিকে ব্রিটিশ সংসদে কী হচ্ছে-সেদিকে নজর ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও। দ্বিতীয় গণভোটের ভাবনা তাদের মাথাতেও ঘুরপাক খাচ্ছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক টুইটে বলেই ফেলেছেন, ‘দ্বিতীয় গণভোট নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু একথা বলার সাহস কার আছে!’