বন্ধুত্বের অনন্য নজির!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
🕐 ৬:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
তারা কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। এমনকী বিপদের মুহূর্তে কখনও ছেড়ে চলে যায় না। প্রভুর জন্য এরা যেমন প্রাণ দিতে পারে তেমন কারও প্রাণ নিতেও পারে। এমন হাজারো সত্যিকারের গল্প আছে কুকুরের প্রভুভক্তি নিয়ে। সত্য তো বটেই। তা আরও একবার প্রমাণ হল ব্রাজিলের একটি ঘটনায়। এই ঘটনা শুধুই বন্ধুত্বের। এখানে প্রভুর থেকে পাওয়ার কিছুই নেই তাদের। কারণ প্রভু বড়ই গরিব, শুধুই ভবঘুরে। তার কাছে বন্ধুত্ব ছাড়া চতুষ্পদ প্রাণীদের দেওয়ার মতো খাবারও নেই। কিন্তু তাতে কী? বন্ধুত্ব তো আছে, কুকুরগুলো তাতেই খুশি। প্রিয় বন্ধুর জন্য তারা সবই করতে পারে।
ব্রাজিলের সান্তা ক্যাটারিনার হসপিটাল রিজিওন্যাল অল্টো ভ্যালেতে ভীষণ অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হন সিজার নামে এক তরুণ। দেখার কেউ নেই। তবে, ওই তরুণের ভর্তির সময় হাসপাতালের দরজার সামনে ঠায় দাঁড়িয়েছিল চারটি কুকুর। সে দরজার এক পাশে হুইলচেয়ার। ভিতরে তাদের প্রভুর চিকিৎসা চলছে। ওই হাসপাতালের নার্স ক্রিস ম্যামপ্রিম ফেসবুকে জানিয়েছেন, রাত যখন ৪টা বাজে, ওই জায়গা থেকে এক চুলও সরেনি কুকুরগুলো। ক্রিস বলেন, প্রত্যেকের বিষন্ন মুখ। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তারা। কুকুরগুলোর এমন শিষ্ঠাচার দেখে অবাক হয়েছেন হাসাপতালের কর্মীরাও।
হাসপাতালের সামনে চারটি কুকুরের দাঁড়িয়ে থাকার ছবি মন ভরিয়ে দিয়েছে নেট দুনিয়ার। ছবিটি দিন কয়েক আগে শেয়ার করেছেন ওই হাসপাতালের ক্রিস ম্যামপ্রিম।
ওই কুকুরগুলোর সঙ্গে সিজারের কী সম্পর্ক? নিশ্চয়ই এমন কৌতুহল জাগছে। ভবঘুরে সিজারের জীবন কাটে ফুটপাথেই। সে পথেই তার কার্মকাণ্ড। আর সেই পথেই বন্ধু হয়ে গিয়েছিল চার কুকুর। ভবঘুরে মানুষটার বিপদে আপদে তারাই ছিল ভরসা। নিজের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে গিয়েই নাস্তানাবুদ হতে হয় ভবঘুরে সিজারকে। তবে নিজের খাবার জুটুক আর না জুটুক, নিজের কুকুর বন্ধুদের জন্য রোজ নিয়ম করে খাবারের বন্দোবস্ত করেন সিজার। ব্রাজিলের সেই হাসপাতালের নার্স ক্রিস মামপ্রিম বলছেন, 'প্রত্যেকটা কুকুরেরই খুব যত্ন করা হয়। ওদের চেহারাই সে কথাটা বলে দিচ্ছে। আর ওদের দেখে আর একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ওরা কতটা প্রভুকে ভালবাসে।' সুখে-দুঃখে সবসময়ের সঙ্গী ওই কুকুরগুলো। সিজার যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, কুকুরগুলোর তৎপরতায় পথচারীরা হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় তাকে।
ক্রিস মামপ্রিম ফেসবুকে লিখছেন, 'আমি যে হাসপাতালে কাজ করি, দেখি রাত তিনটের সময় সেখানে চারটে কুকুর দাঁড়িয়ে আছে। ওদের প্রভু অসুস্থতার কারণে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। আর ওরা সারাক্ষণ প্রভুর অপেক্ষায় হাসপাতালের দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।'
৮০ হাজারেরও বেশি ইউজার ফেসবুকে এই পোস্টটিকে শেয়ার করেছেন। ক্রিস জানিয়েছেন, ভবঘুরে ওই ব্যক্তির নাম সিজার। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, 'পথেই দিন গুজরান হয় সাধারণ ছাপোষা ওই মানুষটার। ক্ষুধা, ঠাণ্ডা, ব্যথা সব কিছু তাড়াতেই অন্য মানুষের সাহায্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় মানুষটাকে। তারই সব সময়ের সঙ্গী এই চার কুকুর।'
ক্রিস জানিয়েছেন, সিজারের বন্ধুদের এমন ভালবাসা দেখে হাসপাতালের সকলেরই মন জুড়িয়ে গিয়েছে। ভোরে কিছুটা সুস্থ হন সিজার। এরপর তার কাছে কুকুরগুলোকে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়। ক্রিসের কথায়, ওই কুকুরগুলোর ভদ্রতা দেখে অবাক তিনি। যতক্ষণ না তাদের ভেতরে ঢুকতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ‘বন্ধুর’ অপেক্ষায় বাইরে চুপটি করে বসেছিল তারা। পরে, হাসপাতল কর্তৃপক্ষ থেকে সিজার এবং ৪ কুকুরকে খাবার দেওয়া হয়।