ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সৌদি যুবরাজের বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দেহ!

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৩৭ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৮

দীর্ঘদিন ধরে জনসমক্ষে ‘অনুপস্থিত’ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইরানের গণমাধ্যমগুলো। গত ২১ এপ্রিল রিয়াদে রাজপ্রাসাদে এক ‘অভ্যুত্থানচেষ্টায়’ গুলিবিদ্ধ হয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান মারা গেছেন বলেও ধারণা তাদের।

ইরানের পত্রিকা কায়হান এক আরব রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে বলেছে, রাজপ্রাসাদে হওয়া ওইদিনের অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনায় সৌদি যুবরাজের গায়ে অন্তত দুটি গুলি লেগেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও এ বিষয়টি তুলে ধরে বলে, ওই দিনের পর বিন সালমানের নতুন কোনো ছবি, ভিডিও প্রকাশ হয়নি। এমনকি এপ্রিলের শেষদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পের রিয়াদ সফরের সময়ও যুবরাজকে দেখা যায়নি। ইরানি দৈনিক কায়হানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলের ২১ তারিখ রিয়াদের রাজপ্রাসাদে হওয়া অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের গায়ে অন্তত দুটি গুলি লেগেছে। এর পর থেকে মোহাম্মদকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ওই গুলির ঘটনায় তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা তেহরানের শাসক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সংবাদমাধ্যমটির। এক আরব রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে রক্ষণশীল পত্রিকাটি এ খবর প্রকাশ করে।
এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে সৌদি যুবরাজের নতুন কোনো আলোকচিত্রী কিংবা ভিডিও প্রকাশিত হয়নি জানিয়ে একই শঙ্কা প্রকাশ করেছে প্রেস টিভিও। নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে রিয়াদ সফরের সময়ও মোহাম্মদকে দেখা না যাওয়ায় সন্দেহের মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে বলেও দাবি তাদের।
ইরানি বার্তা সংস্থা ফারস বলছে, সালমান এমন একজন ব্যক্তি যাকে প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখা যেত, কিন্তু রিয়াদের ওই গোলাগুলির পর ২৭ দিন ধরে অনুপস্থিতি তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
এপ্রিলের ২১ তারিখ রিয়াদের রাজপ্রাসাদ থেকে তুমুল গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। সম্ভাব্য কোনো অভ্যুত্থানচেষ্টার ফল ওই গোলাগুলি, এমনটাও ধারণা করেছিলেন অনেকেই। রিয়াদের দাবি, প্রাসাদের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি ড্রোন ভূপাতিত করতেই রক্ষীরা গুলি ছুড়েছিল।
ঘটনার সময় সৌদি বাদশা সালমান প্রাসাদ ছেড়ে কাছাকাছি একটি সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিল স্থানীয় বেশকটি গণমাধ্যম। বাদশা সে সময় কিং খালিদ ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন বলে সৌদি বিশেষজ্ঞ আলি আল-আহাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে স্পুটনিক। ইরানি গণমাধ্যমগুলোর সন্দেহ, সেদিনের গোলাগুলিতেই বিপদে পড়েন ক্রাউন প্রিন্স।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। গোলাগুলির ঘটনার পরেও মোহাম্মদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বলে দাবি অনেকের। প্রমাণ হিসেবে নানান ছবিও হাজির করছেন কেউ কেউ। অভ্যুত্থানচেষ্টার সপ্তাহ খানেক পরে কয়েকশ কোটি ডলারের একটি এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্ট কিদিয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সালমানের পাশে মোহাম্মদকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্পুটনিকও।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্সকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইরানি গণমাধ্যমগুলোর উদ্বেগের মধ্যেই গত শুক্রবার মোহাম্মদের ব্যক্তিগত দপ্তরের পরিচালক বাদের আল-আসাকের টুইটারে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, বাহরাইনের বাদশা বিন ইসা ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির একটি গ্রুপ ছবি পোস্ট করেছেন।
‘কয়েক দিন আগে দুই ভাইয়ের এক বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি,’ ছবির সঙ্গে এ মন্তব্য করলেও, ছবিটি কত তারিখের তা জানাননি তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বাড়ানোকে কেন্দ্র করে সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবের সঙ্গে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের দ্বৈততা কয়েক দশকের। ইয়েমেন ও সিরিয়া যুদ্ধেও তাদের অবস্থান প্রতিপক্ষ শিবিরে।
এ বছরের মার্চে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদও ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন। সংঘর্ষ এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

 
Electronic Paper