ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আদালতের বাধার মুখে রুয়ান্ডার আশ্রয়প্রার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
🕐 ১:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২২

আদালতের বাধার মুখে রুয়ান্ডার আশ্রয়প্রার্থীরা

আদালতের রায়ের পর আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর প্রথম ফ্লাইট বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। তবে নতুন ফ্লাইটের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে রুয়ান্ডাও।

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের একটি দলকে রুয়ান্ডা পাঠানোর প্রথম ফ্লাইট গত মঙ্গলবার বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসের এক রায়ের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রথম ফ্লাইটের অন্তত ৩০ জন আশ্রয়প্রার্থী গত কয়েকদিনে মানবিক বা স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। যুক্তরাজ্যের আদালতে করা তাদের বেশ কয়েকটি আবেদন...খারিজ হলেও শেষ মুহূর্তে এক ইরাকির আবেদন আমলে নিয়েছে ইউরোপীয় কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর)।

আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, জুলাইতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে বিতাড়িত করা যাবে না। এই রায়ের প্রেক্ষিতে বাকি আশ্রয়প্রার্থীরাও ইসিএইচআর-এ একই ধরনের আবেদন করতে সক্ষম হন। ইউরোপীয় কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস স্বাক্ষরকারী ৪৬টি দেশের মধ্যে একটি যুক্তরাজ্য। যে কারণে এই আদলতের রায় মানতে বাধ্য দেশটি।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?
আদালতের রায়ে প্রথম ফ্লাইট বাতিল হলেও পরবর্তী ফ্লাইটের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। তবে সেটি কবে হতে পারে সেই দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করেনি তারা।

বিপদজনক উপায়ে ইংলিশ চ্যানেল হয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় কোন দেশে পাঠানোর এই নীতির অন্যতম স্থপতি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। বার্তাসংস্থা এপি তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘পরবর্তী ফ্লাইটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে”।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও বলেছেন তাদের পরিকল্পনা বৈধ এবং সেটি তারা বাস্তবায়ন করবেন। সরকারের আরেক মন্ত্রী থেরেসে কফি স্কাই নিউজকে বলেছেন, আদালতের রায়ে তিনি ‘বিস্মিত ও হতাশ’ হয়েছেন।

এদিকে, ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের অন্য সদস্যরা ইসিএইচআর থেকে যুক্তরাজ্যকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন, যাতে ভবিষ্যতে আর যুক্তরাজ্যের আইনগত সিদ্ধান্তের বৈধতাকে ইউরোপীয় এই আদালত চ্যালেঞ্জ জানাতে না পারে।

রুয়ান্ডা জানিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্য থেকে আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না। মঙ্গলবার দেশটির সরকারের মুখপাত্র ইয়োলান্তে মাকোলো বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “গত এপ্রিলে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে করা এ সংক্রান্ত চুক্তির ব্যাপারে তারা পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন।’’ মাকোলো বলেন, ‘‘যখনই আশ্রয়প্রার্থীরা আসুক তাদের গ্রহণ, নিরাপত্তা প্রদান এবং দেশটিতে সুযোগ দানে রুয়ান্ডা প্রস্তুত রয়েছে।”

এই নীতি কতটা লাভজনক
রুয়ান্ডায় পাঠাতে যাওয়া এক আশ্রয়প্রার্থীর আইনজীবী ফ্রান্সিস সোয়াইন বার্তাসংস্থা এপিকে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নতুন ফ্লাইটের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত সেটি পুনর্বিবেচনা করা।

আর্থিক বা আইনগত দৃষ্টিকোন থেকে আরেকটি ফ্লাইট লাভজনক কিনা সেটি ভেবে দেখতে বলেছেন তিনি। কেননা এই ধরনের ফ্লাইটের আয়োজন করা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। আইনগত কারণে আবারও শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিল হলে এই টাকা গুণতে হবে সরকারকে। ১৪ জুনের বাতিল হওয়া বোয়িং-৭৬৭ এর মতো একটি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্তরাজ্যের খরচ পড়বে প্রায় ছয় লাখ ছয় হাজার ডলার।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনগণের করের টাকা থেকে এরিমধ্যে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। তবে আইনি খরচ হিসেবে কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে এবং রুয়ান্ডায় প্রত্যেককে পাঠাতে, থাকা ও জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহে ভবিষ্যতে কত টাকা খরচ হবে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংবাদ মাধ্যমটি।

রুয়ান্ডার সঙ্গে করা সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকার দেশটিকে প্রাথমিকভাবে এককালীন ১২ কোটি পাউন্ড বা সাড়ে ১৪ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ঠিক কতজনকে রুয়ান্ডায় পাঠানো হতে পারে এই বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনও খোলাসা করে বলা হয়নি। তবে এপ্রিলে জানানো হয়েছিল, কয়েক হাজার জন...এই প্রত্যাবর্তনের শিকার হতে পারেন। আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে সংখ্যাটি কয়েকশতে নেমে আসতে পারে বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

উল্লেখ্য, প্রথম ফ্লাইটে প্রাথমিকভাবে ১৩০ জনকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল সরকার। আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে প্রথমে ৩১ জনে, পরবর্তীতে সাতজনে এবং শেষে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয় সরকার।

 
Electronic Paper