প্রতি বছরই করোনার টিকা নিতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:০৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
মানুষের আগামী বহু বছর ধরে প্রতি বছর কোভিডের টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের প্রধান।
বিবিসিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. আলবার্ট বুর্লা বলেছেন যে, খুবই উঁচু মাত্রার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর টিকা নেয়ার প্রয়োজন হবে।
ফাইজারের প্রধান নির্বাহী বিবিসিকে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আগে।
ড. বুর্লা বলেন, করোনাভাইরাসের বেটা ভ্যারিয়েন্ট- যেটিও প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল- এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, যা প্রথম ধরা পড়ে ভারতে, সেগুলো মোকাবিলায় ফাইজারের টিকা কার্যকর করার পদক্ষেপ তারা ইতোমধ্যেই নিয়েছেন।
যদিও তিনি বলেছেন, ওই দুটি ধরন মোকাবিলায় তাদের টিকায় তেমন কোন বদল ঘটাতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর করার কাজ এখন তারা করছেন এবং আগামী ১০০ দিনের মধ্যে তাদের টিকা হালানাগাদ করার কাজ শেষ হবে।
টিকা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে’
ড. বুর্লা মনে করেন যে মহামারির সময় টিকা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, এবং এই টিকা না হলে আমাদের সমাজের মূল কাঠামোই ঝুঁকির মুখে পড়ত।
ফাইজার আশা করছে যে এ বছর শেষ হবার আগেই তারা তাদের এমআরএনএ টিকার তিনশো কোটি ডোজ সরবরাহ করতে পারবে এবং আগামী বছর তাদের পরিকল্পনা রয়েছে চারশো কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী বলেন, মানুষেকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবার জন্য বিশ্ব জুড়ে একটা প্রতিযোগিতা চলছে, তবে ২০২২ সালে দেশগুলো যত প্রয়োজন তত ডোজ টিকা পাবে।
শেয়ারের দাম
বিশ্বে স্বাস্থ্য বিষয়ক যেসব দাতব্য সংস্থা আছে, তারা বলছে যে ফাইজার, বায়োএনটেক এবং মডার্না এই মহামারির সময় যে পরিমাণ অর্থ বানিয়েছে তা অনৈতিক।
এ বছর কোভিডের টিকা বিক্রি থেকে ফাইজার আয় করবে ৩৫ বিলিয়ন বা সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার। তাদের শেয়ারের দামও এখন আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে।
এরপরেও পৃথিবীর অনেক দেশে বেশিরভাগ মানুষ অন্তত কোভিডের এক ডোজ টিকা পেলেও আফ্রিকার অনেক দেশের মানুষ টিকা প্রায় পায়ইনি - এসব দেশে প্রতি বিশ জনে একজনেরও কম মানুষ টিকা পেয়েছে।
মুনাফা লাভের প্রশ্নে কোনরকম দুঃখ প্রকাশ করেননি ড. বুর্লা। তিনি বলেছেন, মূল কথা হল, লাখো লাখো জীবন রক্ষা পেয়েছে।
ট্রিলিয়ন ডলারের বিশ্ব অর্থনীতিকে আমরা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছি। আগামী মহামারি রুখতে উদ্ভাবনের কাজে এটা জোরালো অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করবে, এই মন্তব্য করেন তিনি।
মহামারিকে কাজে লাগিয়ে লাভ করার অভিযোগ তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ধনী দেশগুলোর জন্য এই ব্যয় সস্তার খাবার কেনার খরচের সমান, তবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে টিকা বিক্রি করা হয়েছে কোন মুনাফা না রেখে।
তিনি বলেন, ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মজুত রাখার বিষয়টা অনেক দেশের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, বিশেষ করে সেযব দেশে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফাইজার এক মাস বা তার কাছাকাছি সময়ের মধ্যে নতুন ফর্মূলার টিকা বাজারে ছাড়বে, যা তিন মাস পর্যন্ত সাধারণ ফ্রিজে মজুত রাখা যাবে। বিশেষ করে আফ্রিকায় সাহারার দক্ষিণের দেশগুলোর জন্য এটা বিরাট একটা পরিবর্তন আনবে।
ফাইজার প্যাক্সলোভিড নামে মুখে খাবার একটি অ্যান্টিভাইরাল বড়িও বের করেছে, যার ব্যবহার হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর হার প্রায় ৯০ শতাংশ কমায় বলে ট্রায়ালে দেখা গেছে।
সঠিক পদক্ষেপ
যারা এখনও টিকা নেননি, তাদের উদ্দেশ্যে জোরালো বার্তা দিয়েছেন ড. আলবার্ট বুর্লা।
তিনি বলেন, যারা এখন ভয় পাচ্ছেন তাদের বলি, মানুষের মধ্যে যে আবেগটা বেশি জোরালো সেটা ভয় নয়, ভালবাসা।
ভুয়া খবর
সম্প্রতি বেশ কিছু ভুয়া এবং উদ্ভট খবরের শিকার হয়েছেন ফাইজারের প্রধান নির্বাহী ড. আলবার্ট বুর্লা।
এসব খবরের মধ্যে রয়েছে, জালিয়াতির দায়ে ড. বুর্লাকে গ্রেপ্তার করেছে আমেরিকার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা এফবিআই এমন অভিযোগ।
রয়েছে ফাইজারের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার স্ত্রী মারা গেছেন- এমন খবরও।
ড. বুর্লা বলেছেন দুটো খবরই ভুয়া।
আমার গ্রেপ্তারের খবর শুনে আমি হেসেছিলাম, কিন্তু আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলার খবরে আমি খুবই ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম।
আমার ছেলেমেয়েদের ফোন করে জানাতে চেয়েছিলাম খবরটা মিথ্যা। ছেলেকে ফোনে ধরতে পারিনি। কী উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্যে যে সময় কেটেছে!