রমেকে কক্সকি ভাইরাস আক্রান্ত শিশু বাড়ছে
রংপুর অফিস
🕐 ১২:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
উত্তর জনপদের অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়ারিয়ার পাশাপাশি হ্যান্ড, ফুট এবং মাউথ নামে নতুন রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই রোগে শিশুদের হাতে পায়ে এবং মুখে ফোসকা দেখা দেয়।
বাচ্চারা খাবার খাওয়া কমে দেয়। তবে অভিভাবকদের এই রোগে আতঙ্কিত না হয়ে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
গত সোমবার সকালে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাব কমে আসায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বেড়েছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোতে ১১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি ওয়ার্ডগুলোর যাতায়াতের রাস্তায় শিশুর অভিভাবকরা অবস্থান নেওয়ায় ওয়ার্ডগুলোতে প্রবেশ করাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশকিছু অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জন্মের পর তাদের সন্তানের নিউমোনিয়া, খিঁচুনিসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেওয়ায় শিশু ওয়ার্ডে এসেছেন।
মিঠাপুকর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, তার শিশুপুত্র সাপাহান হ্যান্ড, ফুট ও মাউথ রোগ আক্রান্ত হলে গত সপ্তাহে তাকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। বর্তমানে সাপাহান ভালো আছে বলে জানান রফিকুল।
পীরগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম গত রোববার একদিন বয়সের নাতিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। তার নাতির শারীরিক অবস্থা ভালো নেই বলে তিনি জানান।
শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. আ ন ম তানভীর চৌধুরী বলেন, মূলত এই সময়ে শিশু ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন নতুন শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে এ বছরই প্রথম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্যান্ড, ফুট এবং মাউথ নামে নতুন রোগে আক্রান্ত শিশুরাও চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছে। গত ২ মাস ধরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ জন শিশু এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। মূলত কক্সকি ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এই রোগে হাত ও পায়ে ফোসকা পড়ে এবং মুখে লাল হয়ে ঘা হয়। শিশুদের খেতে অসুবিধা হয়। প্রসাবের পরিমাণ কমে যায়।
তিনি বলেন, তবে ভয়ের কিছু নেই। এই রোগে শিশুদের পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি পানি এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া আক্রান্ত শিশুদের কাছে অন্য শিশুরা যাতে না আসে তা খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত দেড় বছর থেকে শুরু করে ৬ বছরের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে এই রোগকে সাধারণ পক্স মনে করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসককে না দেখিয়ে কোনো ওষুধ সেবন না করানোই ভালো।
রমেক হাসাপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. অতনু বসাক বলেন, বর্তমানে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিদিন যে সংখ্যার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এর শতকরা ৫০ ভাগ নবজাতক। খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, ওজন স্বল্পতাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছে শিশুরা। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে।
এ বছরে বেশি হ্যান্ড, ফুট ও মাউথ রোগ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই রোগে অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হয়ে বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।