জ্বর হলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ
আরিফুল ইসলাম
🕐 ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২১
ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এবং ডেঙ্গুর লক্ষণই প্রায় সমান। জ্বর ও মাথাব্যথা হয়। তাই জ্বর হলে অবহেলা নয়; করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত বেশি করে তরল খাবার, সালাইন, প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নির্মূলে ১০ দিনে চিরুনি অভিযানে নেমেছে সিটি করপোরেশন। অভিযানের প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার সাত লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ ঘণ্টায় অন্তত ৬ জন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ১৪৩ জনের মধ্যে ১৪২ জনই রাজধানী ঢাকায়। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১২৭ জন ভর্তি হয়েছিলেন। প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। জুলাই মাসের ২৭ দিনে ১৫৫৩ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৫৭ জনের বেশি লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
চলতি বছরে মোট ১৯৪৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪৩৩ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাসায় ফিরেছেন। বর্তমানে ৫০৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ৫০০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯ জন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, যে সময় করোনা বাড়ছে ঠিক সেই সময়ে ডেঙ্গুও খুব বাড়তে শুরু করেছে। করোনা এবং ডেঙ্গু দুটিরই লক্ষণ-উপসর্গ জ্বর।
বাড়ছে ঠিক সেই সময়ে ডেঙ্গুও খুব বাড়তে শুরু করেছে। করোনা এবং ডেঙ্গু দুটিরই লক্ষণ-উপসর্গ জ্বর। মাথাব্যথা হয়, শরীর ব্যথা হয়। তাই আমরা পরামর্শ দিচ্ছি কারো জ্বর হলে তিনি যেন করোনা এবং ডেঙ্গু দুটিই পরীক্ষা করান। পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত বেশি করে তরল খাবার, স্যালাইন এবং প্যারসিটামল জাতীয় ওষুধ খাবেন। তবে নিজে নিজে না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো।
অবহেলা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কখন হঠাৎ করে প্লাটিলেট কমে যাবে তা বোঝা মুশকিল। রোগী বুঝতেই পারবেন না, প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। আর প্লাটিলেট এবেবারেই নেমে গেলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই অবহেলা করা যাবে না। জ্বর হলেই এখন সতর্ক থাকতে হবে। নিজে নিজের চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে।
তিনি বলেন, জ্বর হলে বাষ্প আকারে শরীরের পানি কমে যায়। এজন্য আমরা বেশি করে পানি খাওয়া পরামর্শ দেই। পেঁপে বা অ্যালাভেরায় প্লাটিলেট বাড়ে এমন নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। বাসায় বসে দিয়ে নিজে নিজে চিকিৎসা করা যাবে না। তাহলে বিপদ হয়ে যেতে পারে। অবশ্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ চলতে হবে।
এদিকে এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ২৭ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিনের চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। উদ্বোধনের পর ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, অভিযানের মূল উদ্দেশ্য জরিমানা করা নয়; নগরবাসীকে সচেতন করা এবং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। তবে আগে সতর্ক করে দেওয়ার পরও কেউ সচেতন না হলে জরিমানা করা হচ্ছে।
ডিএনসিসিতে অভিযানের প্রথম দিনে ১৫টি মামলায় ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে মোটা দাগে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন তিনটি ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মালিকদের যথাক্রমে একলাখ এবং ৫০ হাজার, ৫০ হাজার করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ সময় মাইকিং করে জনসচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হয় এবং সবাইকে এডিস মশা এবং ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ডিএনসিসি মেয়রের আহ্বান ‘তিন দিনে একদিন, জমাপানি ফেলে দিন’ মানার পাশাপাশি ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধিসমূহ যথাযথভাবে মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অপরদিকে মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটির ১১ ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩৯৪টি নির্মাণাধীন ভবন বাসাবাড়ি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। এ সময় বম্বে সুইটসসহ মোট ২৩টি প্রতিষ্ঠান, নির্মাণাধীন ভবন ও বাসা বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়ায় ২৩টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে।
ঢাকা দক্ষিণের অঞ্চল-১০ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া বলেন, আজকের অভিযানে আমরা বোম্বে সুইটসের কারখানার বেজমেন্টে মশার লার্ভা পেয়েছি। তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।