ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া

আরিফুল ইসলাম
🕐 ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২১

দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া

এ বছর বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। বাড়ছে ম্যালেরিয়াও। এর মধ্যে ডেঙ্গু বাড়ছে রাজধানী ঢাকায়। আর ম্যালেরিয়া বান্দরবানে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার আগের দিন ২১ জন ভর্তি ছিলেন। শুধু মে মাসেই ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে ৩২৩ জনের। চলতি বছরে ম্যালেরিয়ায় মারা গেছেন দুজন।

করোনার মধ্যে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ায় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। ডেঙ্গু পরীক্ষার ইতিমধ্যে দেশের সব সিভিল সার্জনের কাছে পর্যাপ্ত কিট পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ভর্তি এবং দৈনিক প্রতিবেদন, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় যা হয়েছে, একটা নির্ধারিত ছক মোতাবেক ছুটির দিনসহ প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৩৭ জন।

এর মধ্যে ২৭৩ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। বর্তমানে ৬৪ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৩১১ জনই ঢাকার। বাকি ২৬ জনের মধ্যে ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা বিভাগে ১০ জন, ময়মনসিংহে দুজন এবং খুলনা বিভাগে ১৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমীন বলেন, গতবছর আমরা অসংখ্য ডেঙ্গু কেইস পাইনি। এবার কিন্তু কিছু কিছু ডেঙ্গু কেস পাচ্ছি। ঢাকা শহরের মধ্যে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যে হাসপাতাল আছে, কাকরাইলে ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে আমরা বেশ কিছু রোগী ভর্তি হতে দেখেছি।

উত্তর সিটি কপোরেশনে যে হাসপাতাল আছে, এর মধ্যে এভার কেয়ার হাসপাতালে আটজন এবং সিএমএইচে পাঁচজন রোগী ভর্তি পেয়েছি। খুশির খবর হচ্ছে এই বছরে আমরা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পাইনি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, বাসার ভেতরে এবং আশপাশে জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। ফুলের টবে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসা ও বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। আপনি যদি তিন দিনের বেশির জন্য বাসা বাইরে যান, তাহলে অবশ্যই কোথাও পানি জমার মতো থাকলে তাতে যাতে পানি না জমে সেই ব্যবস্থা করে যেতে হবে।

দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময়ে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, মশার কামড় থেকে বাঁচতে শরীর ঢেকে রাখতে পারে এমন কাপড় পরতে হবে। চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোভিড ১৯-এর পাশাপাশি খেয়াল করতে হবে রোগীর ডেঙ্গু কিনা। রোগীর ডেঙ্গু জ্বরের টেস্ট করাও প্রয়োজন হতে পারে। কোভিড-১৯-এর পাশাপাশি চিকিৎসকরা যেন ওই সব রোগ চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন সেই আহ্বান জানাচ্ছি। ডেঙ্গু জ্বর দেশের সকল সিভিল সার্জন বরাবর পর্যাপ্ত এনএসওয়ান কিট সরবরাহ করা হয়েছে। জ্বরের রোগী হাসপাতালে আসলে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো পরীক্ষা করা আহ্বান জানান তিনি। রোবেদ আমীন বলেন, মনে রাখবেন- তিন দিনে একদিন, জমা পানি ফেলে দিন। এডিস নির্মূলে প্রয়োজন জনজনের অংশগ্রহণ।

ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে জানিয়ে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, মে মাসে আমরা দেখতে পেয়েছি ম্যালেরিয়া রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে। এর মধ্যে শুধু বান্দরবানে মে মাসে ২৬০ জনের আমরা ডায়াগনসিস করতে পেরেছি। বান্দরবানে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৫৬৫ জন রোগী ডায়াগনসিস হয়েছে। মে মাসে মোট ৩২৩ জনের ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে। যার মধ্যে শুধু ২৬০ জনই বান্দরবানে।

রাঙ্গামাটিতে ৪১, খাগড়াছড়িতে ৫ জন, চট্টগ্রামে ৩ জন এবং কক্সবাজারে ১৪ জন। তিনি বলেন, গত বছরের হিসাব করলে আমরা হয়তো দেখতে পাই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ গত বছর বা তার আগের বছরের তুলনায় কম। কিন্তু এই মে মাসটা যদি আমরা হিসাব করি, তাহলে এই মাসে গত বছর যা ছিল তার চেয়ে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরে যতগুলো কেস ডায়াগনসিস হয়ে তার ৭৫ শতাংশের বেশি বান্দরবানে।

রোবেদ আমীন বলেন, এই স্থানে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন, যারা থাকেন, তার বাইরেও ভ্রমণের জন্য দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অনেকেই যান বান্দরবান। সফর করার আগে এই সময়ে অত্যন্ত কেয়ারফুলি পর্যাবেক্ষণ করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। কেননা, আমরা জেনেছি তীব্র ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে এ বছর দুজন মারা গেছে। গত বছর আমরা একজনের মৃত্যু পেয়েছি। এবার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে আমরা এই মৃত্যু দেখতে পেলাম।

 
Electronic Paper