ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রমেক হাসপাতালে নেই সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

রংপুর অফিস
🕐 ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২১

রমেক হাসপাতালে নেই সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে অধিকাংশ শৌচাগার বর্তমানে ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শৌচাগার ব্যবহার করতে। এদিকে দিনের পর দিন নোংরা শৌচাগার ব্যবহার করায় রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি-শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু প্রতিদিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া এবং ময়লা আবর্জনা ফেলায় শৌচাগারগুলো অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে।

রমেক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছরেও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় জরুরি বিভাগে প্রবেশের (সাইকেল গ্যারেজের দিক) এলাকায় অস্বাস্থ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে হাসপাতাল ভবনের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ময়লা আবর্জনা জমে থাকছে দীর্ঘসময় ধরে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ অস্বস্তিতে পড়ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারের বিপরীতে ৬৫ একর জমিতে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রমেক হাসপাতাল। পাঁচতলা ভবন বিশিষ্ট এক হাজার বেডের হাসপাতালটি ১০টি ব্লকে বিভক্ত এবং প্রতিটি ব্লকে ওয়ার্ড আছে চারটি। হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন সহস্রাধিক। পাশাপাশি বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নেওয়াসহ প্রতিদিন পাঁচ-সাত হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে আসেন। রমেক হাসপাতালের ৬নং (সার্জারি) ওয়ার্ড হচ্ছে মডেল ওয়ার্ড। কিন্তু এর শৌচাগারটিতে ময়লা আবর্জনা জমে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন থাকতে হবে তাই পরবর্তী হয়রানির আশঙ্কায় নাম ঠিকানা গোপন রেখে একাধিক রোগী জানান, বিষয়টি ওয়ার্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

৪নং ওয়ার্ড (কার্ডিওলজি বিভাগ) এবং ৭নং ওয়ার্ডসহ (পুরুষ) একাধিক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, শৌচাগারগুলোর করুণ চিত্র। অনেক শৌচাগারের প্রবেশ মুখে নিত্যদিনের খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা হচ্ছে। কোথাও মলমূত্র জমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করছে। অনেকটা নিরূপায় হয়ে রোগীরা প্রকৃতির কাজ সারছেন। এমনকি কোথাও ওয়ার্ড এবং শৌচাগার বিভক্তকারী মূল দরজায় ছোট ছোট একাধিক ভাঙা থাকায় চলমান ঠান্ডায় বেডে থাকা রোগীরা অসহনীয় কষ্ট সহ্য করছেন। শুধু তাই নয়, কখনো কখনো বিড়াল আর কুকুরও ওয়ার্ডে প্রবেশ করছে।

এদিকে দীর্ঘদিন ময়লা জমে থাকায় শৌচাগারগুলোতে রোগজীবাণু সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

রমেক হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শাহ মো. রফিকুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন কোথাও ময়লা আবর্জনা জমে থাকলে সেখানে রোগজীবাণু সৃষ্টি হবে, এটাই নিয়ম। তাই শৌচাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু রমেক হাসপাতালের শৌচাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সত্যি দুরূহ।

দীর্ঘদিনের চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, রমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর শৌচাগারগুলো মূলত অধিক ব্যবহারের ফলে এই করুণ দশার সৃষ্টি হয়েছে। খাতা-কলমে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রোগী থাকে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারের মতো। একেকজন রোগীর জন্য আবার তার সহযোগী থাকেন ২ থেকে ৩ জন। অথচ এই বিশাল মানুষের চাপ নিতে পারছে না বিদ্যমান শৌচাগারগুলো। তাই তিনি মনে করেন, নতুন রুম তৈরি করে ওয়ার্ডের রোগীর চাপ কমিয়ে এবং শৌচাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এ সমস্যার প্রকৃত সমাধান করা সম্ভব।

রমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. রোস্তম আলী বলেন, মূলত ৬শ বেডের অবকাঠামো দিয়ে বর্তমানে ১ হাজার বেডের সেবা দিতে হচ্ছে। যে লোকবল এবং অবকাঠামো বৃদ্ধি করা দরকার তা করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে শেষ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ হয়েছিল। তারপরও বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ১৮৫টি পদ শূন্য। অথচ প্রতিদিন প্রায় ২ হাজারের মতো রোগী থাকছে। পাশাপাশি একেকজন রোগীর সাথে আরও ২ থেকে ৩ জন করে থাকছেন। স্বাভাবিকভাবে ওয়ার্ডগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিদ্যমান শৌচাগারগুলোতে।

ইতোমধ্যে হাসপাতালের সামনে একদিকে গ্রিনজোন করার উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেখানে রোগীরা রিফ্রেশ হতে পারবেন। এছাড়াও ওয়ার্ডের শৌচাগারগুলো দীর্ঘসময় কীভাবে কার্যকর রাখা যায় তা নিয়ে গণপূর্তের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

 

 
Electronic Paper