ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড টেস্টে যাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১২:৫৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৮, ২০২০

করোনাভাইরাস শনাক্তে শিগগিরই র‌্যাপিড টেস্ট শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেনের অনুমোদনের একটি প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই বা মতামতের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এর কার্যক্রম শুরু হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন সম্পর্কিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলেই ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সে অনুযায়ী অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেন কিট কেনার জন্য স্পেসিফিকেশন দেবে। 

যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেছেন, অধিদফতর থেকে যে ফাইল পাঠানো হয়েছে, সেটা আমার কাছে আসেনি এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কারও সঙ্গে আলাপও হয়নি। এখন সেটা কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বলতে পারব না। তারা কী পাঠিয়েছে সেটাও বলতে পারবে না। র‌্যাপিড টেস্ট হলে তো সেটা ন্যাশনাল পলিসি, এটা তো কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই করবে না। তারা যদি পাঠিয়ে থাকে, তাহলে আমাদের সেটা আরও উপরে পাঠাতে হবে।

তবে নাম প্রকাশ না করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কোভিডের নতুন এ প্রেক্ষাপটে কী কী করা উচিত, কী কী টেস্ট অ্যাভেইলেবল তার একটা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় যদি অনুমোদন দেয় তাহলে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। আশা করছি, তারা অনুমোদন দিয়ে দেবে, মন্তব্য করে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি সরকারিভাবে জেলা পর্যায়ে এমনকি যেসব পরীক্ষা উপজেলা পর্যায়েও করা যায়- এ ধরনের প্রস্তাবসহ নীতিমালার একটা খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই অধিদফতর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে।

এর আগে গত ৩ জুন করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড টেস্টের জন্য সুপারিশ করে কোভিড-১৯বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এছাড়া করোনা শনাক্তে এতদিন ধরে চলা আরটি পিসিআর পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার পক্ষেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি কমিউনিটিতে কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে কতজনের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং যে কারণে তাদের পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় শূন্য- সেটা নির্ণয় করা যাবে। রোগীর উপকার এবং এপিডেমিওক্যাল গবেষণা- এ দুই ক্ষেত্রেই র‌্যাপিড টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে লকডাউন লিফটিং, পোশাক কারখানাসহ নানা অফিস আদালত খুলে দেওয়ার জন্য, স্বাস্থ্যকর্মীদের কী অবস্থা সেটা বোঝার জন্য, এমনকি ভ্যাকসিন টেস্ট করার জন্যও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা- এসবের জন্যই র‌্যাপিড টেস্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ন্যাজাল সোয়াবের মাধ্যমে করা অ্যান্টিজেন টেস্টে আর্লি পজিটিভ বা আর্লি ডিটেকশন করা যায়। তাই পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা থাকলে রোগী শনাক্ত করা সহজ হয়। তিনি জানান, পিসিআর পরীক্ষায় যেসব ডিফিকাল্টিজ রয়েছে, অ্যান্টিজেনে সেসব নেই। এ পরীক্ষা যেমন সহজে করা যায়, তেমনই মেশিনের দরকার হয়। আলাদা ল্যাবরেটরি বা যে কোথাও করা যায়, এ জন্য বায়োসেফটির দরকার নেই। প্রয়োজন হয় না তেমন দক্ষ নমুনা সংগ্রহকারীরও। দেশের ৪৯১টি উপজেলায় এ পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।

ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুরুতর রোগী এলে, তার কোভিড টেস্ট না থাকায় চিকিৎসা না দেওয়া, এমনকি এ অবস্থায় ওই রোগীর মৃত্যুর খবর পর্যন্ত আমরা পেয়েছি। অথচ মাত্র ১৫ মিনিটে র‌্যাপিড টেস্ট করা গেলে, পজিটিভ-নেগেটিভ যাই হোক না কেন, রোগীকে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া যাবে। তিনি বলেন, একইসঙ্গে এখন যে লাল-সবুজ কার্যক্রম চলছে, তাতে করে খুব দ্রুত অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি টেস্ট করা দরকার। কারণ এটা দিয়ে ঘরে ঘরে টেস্ট করা যায়। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে সেখানেই তার পরীক্ষা করে তাকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া যায়, কিন্তু সেটা যদি আরটি পিসিআরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আর সহজে যদি রোগী শনাক্ত করা যায়, তাহলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো যায়, তার কন্টাক্ট প্রেসিং দ্রুত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

এতগুলো সুবিধা রয়েছে র‌্যাপিড টেস্টে। একইসঙ্গে পিসিআরের তুলনায় খরচও খুব কম। সবমিলিয়ে র‌্যাপিড টেস্ট খুব দ্রুত চালু করা দরকার। এটা যদি আগে করা যেত তাহলে অনেক নেগেটিভ কেস- যেগুলো আসলে করোনা আক্রান্ত ছিল, সেগুলো পজিটিভ পেতে পারতাম। আর এটা না পাওয়ার ফলে পজিটিভ হলেও নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার কারণে তারা ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যকে সংক্রমিত করেছে এবং কেউ কেউ যথসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মারাও গেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ ?মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকেই এ কথা বলে এসেছি, এতদিন পরে এসেও সেটা করা হচ্ছে- এটা ভালো খবর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, বাংলাদেশের সব জায়গায় এখন করোনা শনাক্ত করা খুব প্রয়োজন। যদিও সব জায়গাতে পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন করা বাংলাদেশের মতো দেশে কঠিন। তাই অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি কম্বাইন্ড করে যদি উপজেলা পর্যন্ত পরীক্ষা সুবিধাকে সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে এর আওতায় নিয়ে আসা যাবে। কোভিড রোগীকে দ্রুত শনাক্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 
Electronic Paper