ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আয়োডিনে করোনা সারাতে পর্যবেক্ষণ
রাইয়ান পূণ্য
🕐 ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২০
মাউথ ওয়াসে ভাইরাস মরে। কিন্তু করোনাভাইরাস মরে কি-না তা জানতে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) কয়েকজন চিকিৎসক। ঢামেকের ভাইরোলজি ও ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরা যৌথভাবে মাসখানেক আগে এ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন। শেষ হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। যে মাউথ ওয়াস দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সেটির নাম পভিডোন আয়োডিন। পভিডোন ০.৪ %, ০.৫%, ০.৬% ব্যবহার করে দেখছেন, কোনটায় ভালো কাজ করে।
জানা গেছে, ঢামেকের বিশেষজ্ঞরা প্রথমে দেখতে চাচ্ছেন এতে করোনাভাইরাস মরে কি-না। যদি মরে তাহলে এই মাউথ ওয়াস কতক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর থাকে বা ভাইরাস মুক্ত রাখে তা পর্যবেক্ষণ করবেন। ২ থেকে ৩ চামচ পভিডোন সমপরিমাণ পানিতে মিশিয়ে ঢামেকের করোনা ইউনিটে ভর্তি পজিটিভ রোগীদের গার্গল করানো এবং দুই তিন ফোঁটা পানির সঙ্গে দুই তিন ফোঁটা পভিডোন মিশিয়ে ড্রপারে করে নাকে দেওয়ার আগে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৩০ সেকেন্ড গার্গল করার পর ৫ মিনিটের মধ্যে ফের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটি ব্যবহারের আগে এবং পরে কী অবস্থা হয় তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। ৯৬টি স্যাম্পল সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ শেষে সুনির্দিষ্ট ফলাফল জানাবেন এই চিকিৎসক দল। তবে এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, আয়োডিন সল্যুশন ১৯৫৫ সাল থেকে মানুষের গলার সংক্রমণে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলও ভালো। ইনফেকশন কন্ট্রোলে তখন থেকেই এটা ব্যবহার হয়ে আসছে।
এই মাউথ ওয়াস নিয়ে এ ধরনের পর্যবেক্ষণ আগে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটা করছি এটা কখনো করা হয়নি। এখন দেখা হচ্ছে নোবেল করোনাভাইরাসে পভিডোন আয়োডিন ০.৪%, ০.৫%, ০.৬% কাজ করে কি-না?
করোনাভাইরাস অর্থাৎ একবারে নতুন এই ভাইরাসের উপরে এটা নিয়ে হিউম্যান স্টাডি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া এবং কয়েকটি উন্নত দেশে ল্যাবরেটরিতে প্রমাণ হয়েছে যে এটা করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার পরে কাজ করে কি-না তা দেখার জন্য পর্যবেক্ষণ শুরু করেছি।
কীভাবে স্টাডি করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাউথ ওয়াসটি ব্যবহারের পরে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে পজিটিভ না নেগেটিভ আসে। পজিটিভ না হয়ে নেগেটিভ হলে বোঝা যাচ্ছে করোনা ভাইরাস মারা গেছে। সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি করোনাভাইরাস মারতে পারে। তবে পভিডোন ব্যবহারের পর কতক্ষণ পর্যন্ত ভাইরাস মুক্ত বা নেগেটিভ থাকে; এটা পরে পরীক্ষা করে দেখা হবে। আগে দেখব নেগেটিভ হয় কি-না।
কয় ঘণ্টা পভিডোন কার্যকারিতা বজায় থাকতে পারে তা দেখার প্রক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এটা করতে আরও ঘণ্টা খানেক পরে একটা স্যাম্পল নিতে হবে। তারপর আরও একটা স্যাম্পল নিতে হবে। পর পর কয়েকটা স্যাম্পল নিতে হবে। আমরা এটা আগে করব না। এটা করব পরে। আগে করব আসলে এটা কাজ করে কি-না?
যদি কাজ না করে তাহলে এতগুলো স্যাম্পল নিয়ে এত টেস্ট করিয়ে তো লাভ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেখতে হবে মানবদেহে কাজ করে কি-না। যদি কাজ করে তখন আমরা পর্যবেক্ষণ সম্প্রসারণ করব। কাজ করে কি-না এটা দেখতে কতদিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটামুটি একটা ক্যালকুলেট করে দেখেছি ৯৬টি স্যাম্পল হলে, এটা রোগীর ওপর করব। আবার প্রমাণ করার জন্য কিছু নেগেটিভ কন্ট্রোল লাগবে। সেই কন্ট্রোলগুলোতে শুধু আমরা পানি ব্যবহার করব। ডিস্টিল্ড ওয়াটারে দেখব ফল কী রকম আসে।
বিশ্লেষণ করে ফল ভালো হলে আমরা বলে দেব এটা করোনাভাইরাস কিল করতে পারে। করোনার জন্য ব্যবহার করা যাবে। প্রাথমিকভাবে কী মনে হচ্ছে জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, স্টাডি শেষ না হলে আন্দাজে কিছু বলা যাবে না। তবে যতগুলো করেছি- তাতে আমরা ভালো ফল পেয়েছি। এই চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. মো. গাউছুল আজমও এ ব্যাপারে কার্যকর ফল আশা করছেন।
একজন জানিয়েছেন গার্গল করার পর গলার মধ্যে হালকা ঠা-া ঠা-া অনুভূতি হয়। স্বস্তি লাগে বা আরাম হয়। বিভিন্ন ওষুধের ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওষুধটির যথেষ্ট সরবরাহ আছে। দামও বেশি নয়।