আমাশয় নিরাময়ে হোমিও
ডা. মাজেদ হোসাইন
🕐 ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০১৯
আমাশয় হলো একটি বিশেষ ধরনের পাতলা পায়খানাজনিত রোগ। এখানে মলের সঙ্গে মিউকাস বা সাধারণ মানুষ যাকে আম বলে থাকেন অথবা রক্ত অথবা দুটোই গিয়ে থাকে। আমাশয় বা পাতলা পায়খানাজনিত বিশেষ রোগের প্রধান কারণ সংক্রমণ। বিভিন্ন রকমের সংক্রমণ হয়। জীবাণুঘটিত, পরজীবীঘটিত। এটি অপরিচ্ছন্ন খাবার, হাত ও পানীয়র মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। পাশাপাশি কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো সিগেলাফ্লেক্সেরি নামক এক প্রকার জীবাণু অথবা ক্যামপাইলোব্যাকটর জেজোনি নামের এক প্রকার জীবাণু। একটি হলো স্বল্পমেয়াদি আমাশয়, আরেকটি হলো দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়। স্বল্পমেয়াদি আমাশয় সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। আরেকটি হলো দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়। এটি সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী চিকিৎসা নিতে হয়।
আমাশয় রোগটি কী? এ প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে বলা যায়, উদরাময় ও তার সঙ্গে পেটের বেদনাসহ অল্প অল্প মল রক্ত আম বা আম রক্ত বার বার বের হতে থাকলে তাকে আমাশয় বলা হয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি বলতে আমরা সাধারণভাবে যা বুঝি অ্যামিবা (এক কোষী পরজীবি বা পেরাসাইট) এবং সিগেলা এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার ধারা মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রে (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল) বাসা বেঁধে যে ঘা বা ইনফেকশনে পেটে কামড়ানোসহ মলের সঙ্গে পিচ্ছিল আম অথবা শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত যাওয়াকে আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি বলা হয়।
প্রথমে বলি, আমাশয় কী? যদি আপনার বারবার পায়খানা হয়। পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত বা মিউকাস যায়, তখন আমরা একে বলি আমাশয়। আমাশয় প্রধানত দুই ধরনের। এক. এমোয়েবিক ডিসেনট্রি, দুই. বেসিললারিক ডিসেনট্রি। আমরা গ্রাম্য ছন্দে বলি, সাদা আমাশায় ও রক্ত আমাশায়। তবে এই আমাশয়গুলো দীর্ঘমেয়াদি নয়। এগুলো স্বল্প মেয়াদির আমাশয়। তিন থেকে সাতদিনের। চিকিৎসা না করা হলেও চলে যেতে পারে। তবে জোড়ালোভাবে যদি আক্রান্ত হয় রোগী তাহলে চিকিৎসা করা দরকার।
আরেকটি রোগ রয়েছে যেটি আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। এটিকে বলা হয় আইবিএস। ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম। এটা নারিভুড়ির এক ধরনের ফাংশনাল রোগ। ফাংশনাল রোগ এই জন্য বলছি যে, এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো কিছু পাওয়া যাবে না। কোনো ধরনের জীবাণু পাওয়া যাবে না।
কোনো ধরনের প্যাথলজি পাওয়া যাবে না। যদি প্যাথলজি পাওয়া না যায় একে আমরা বলি ফাংশনাল রোগ। এ রোগের একটি প্রকৃতি হচ্ছে মাঝেমধ্যে মলের সঙ্গে আম যাওয়া। এটি আইবিএসেরই একটি লক্ষণ। এটি আমাশয় নয়।
হোমিওপ্রতিবিধান : পুরো লক্ষণ নির্বাচন করে চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে আমাশয় রোগী হোমিওতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। আবার ইদানীং অনেক হোমিও চিকিৎসক বের হয়েছে তারা রোগীর লক্ষণ নির্বাচন ছাড়া, পেটেন্ট টনিক মিশ্র প্যাথি দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ওইসব ডাক্তার বাবুদের ডা. হানেমান শংকর জাতের হোমিওপ্যাথ বলে থাকে।
হোমিও চিকিৎসা : প্রাথমিকভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ঘন যেই সব মেডিসিন ব্যবহার করে থাকে। একোনাইট, মার্ক সল, মার্ক কর, ইপিকাক, ক্যাপসিকাম, কলচিকাম, কলোসিন্থ, এলোজ, নাক্সভোম, সালপার, থুজা, লাইকোপডিয়ামসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে, তাই মেডিসিন নিজে নিজে ব্যবহার না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. মাজেদ হোসাইন
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র