ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পেপটিক আলসার বা পাকস্থলীর ক্ষত

অধ্যাপক ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ১২:১৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০১৯

পেপটিক আলসার বলতে পাকস্থলী, গ্রহণী বা ডুডিনামের প্রথম অংশ এবং খাদ্যনলের নিম্নাংশের ক্ষতকেও বোঝায়। অনেক রোগী অভিযোগ করে- আমার গ্যাস্ট্রিক, স্যার। এতে তারা শুধু ক্ষত নয়, এসিড বৃদ্ধি, (বুক জ্বলা), বদহজম, পেট ফাঁপা বা ব্যথা ইত্যাদি যে কোনো পেটের সমস্যাকে বোঝায়।

পাকস্থলীর একশ কোটি (১ বিলিয়ন) অক্সিনটিক বা প্রাচীর (পেরাইটাল) জীবকোষ থেকে খাদ্যদ্রব্য জীর্ণ করতে কড়া হাইড্রোক্লোরিক এসিড (পি এইচ ০’৯) আবার তাতে যে অসংখ্য গ্রন্থি (গর্ত) রয়েছে তার গ্রীবার জীবকোষ থেকে বের হয় শ্লেষ্মা। এ শ্লেষ্মা বাইকার্বোনেট ক্ষার নিঃসরণ করে ও কড়া এসিডের আক্রমণ থেকে অঙ্গটির দেয়ালকে বাঁচায়। তা না হলে পাকস্থলী নিজেই নিজের দেহকে হজম করে ফেলত। সবসময় ক্ষার ও অম্ল ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। গ্রহণীয় ক্ষতে প্রাচীর জীবকোষের সংখ্যা বেড়ে ১’৭৫ বিলিয়নে দাঁড়ায়। ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অম্ল বা এসিড বেশি হয়ে পেটে ব্যথা হয় বা পাকস্থলী ও খাদ্য নলের সংযোগস্থল দিয়ে খাদ্যানলে অম্লরস চলে এলে বুক জ্বলে। দীর্ঘদিন তা চললে ক্ষত এবং আরও বেশি দিনে ক্যান্সার অথবা প্রদাহে পাকস্থলীর গাত্র পুরু হয়ে চামড়ার থলের মতো হয়ে যায়। তবে পেপটিক আলসারের প্রধান কারণ হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি জীবাণু। কিছু ওষুধও ক্ষত সৃষ্টি করে যথা এসপিরিন, এনএসএআইডি, কর্টিকোস্টেরয়েড ইত্যাদি। যাদের রক্তের গ্রুপ ও এবং শরীরে এইচএল এবি ৫ এন্টিজেন আছে তাদের ক্ষত হয় বেশি। ধূমপানে নিকোটিন অগ্নাশয়ের বাইকার্বোনেট নিঃসরণ বন্ধ করে ক্ষত ঘটায়।

পুরুষ ও স্ত্রী রোগীর সমানুপাতিক হার : গ্রহণী ক্ষতে ৫:১ এবং পাকস্থলীর ক্ষতে ২:১।
এ রোগে ঊর্ধ্বপেটে ব্যথা থাকে। ঊর্ধ্বফলকের নিচে বৃদ্ধাঙ্গুলের চাপে, ব্যথা পায় রোগী (লক্ষ্য চিহ্ন বা পয়েন্টিং সাইন) ও গ্রহণীর ক্ষতে ব্যথা সাধারণত খালি পেটে ভোর রাতে হয় এবং খেলে বা অম্লানাশক সেবনে কমে যায়। পাকস্থলীর বেলা ব্যথা বাড়ে। পুরনো ক্ষতে অনেক সময় ব্যথা পেছনে পিঠে চলে যায় বা গ্রহণী দ্বার সংকুচিত হয়ে খাদ্য চলাচলে বাধা দেয়। রোগী মুখে আঙ্গুল দিয়ে বমি করে ব্যথার উপশম ঘটায়। ক্ষতস্থানে ধমনী ছিঁড়লে রক্তবমি বা মলে রক্ত গিয়ে নিম্ন রক্তচাপ হয়।

শারীরিক পরীক্ষা, রোগ ইতিহাস, বেরিয়াম খাইয়ে রঞ্জন ছবি তুলে যান্ত্রিক পর্যবেক্ষণ (এন্ডোস্কোপি) ও জীবন্ত কোষ পরীক্ষা (বায়োপ্সি) করে রোগ নির্ণয় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম (রাতজাগা নিষেধ), যথাসময়ে সহজপাচ্য আহার (টক-ঝাল কম), ধূমপান বর্জন ও চিন্তামুক্ত থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। হেলিকবেক্টর পাইলোরি নির্মূলে ৩টি ওষুধের একযোগে যথা ১টি ল্যান্সোপ্রাজল (৩০ মিগ্রা) বা ওমেপ্রাজল (২০ মিগ্রা), ২ এমোক্সিসিলিন (৫০০মিগ্রা) বা মেট্রোনিডাজল (৪০০ মিগ্রা) ও ১ ক্লারিথ্রোমাইসিন (৫০০) দিনে দুবার করে ৭/১৪ দিন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এইচ ২ প্রতিবন্ধক (২ মাস), অম্লরোধী বড়ি, বিশ্রাম ও খাদ্যনিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার (ভেগাস স্নায়ু কর্তন, পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্র সংযোজন ইত্যাদি) করতে হবে।


অধ্যাপক ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস

 
Electronic Paper