ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আর নয় হেপাটাইটিস

অধ্যাপক ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৫, ২০১৯

যকৃৎ বা লিভারের প্রদাহকে হেপাটাইটিস বলা হয়। প্রদাহের শুরুতেই যথাযথ চিকিৎসা না করলে এক সময় যকৃৎ আঁশময় ও সংকুচিত হয়ে যায় এ অবস্থাকে বলে সিরোসিস। প্রতিবছর ২৮ জুলাই বিশ্ব যকৃৎ দিবস পালন হয়। এ দিনে ডা. বারুচ ব্লোমবার্গ (১৯২৫-২০১১) জন্মেছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি প্রথম যকৃৎ প্রদাহের বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এর ২ বছর পর আবিষ্কার করেন যকৃৎ বি প্রদাহের টিকা। এ জন্য তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

৫ রকম ভাইরাস দ্বারা যকৃৎ প্রদাহ হয় ও ভাইরাসঘটিত যকৃৎ প্রদাহ স্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট ঝুঁকি। এ রোগে ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, বমিভাব, বমি, হরিদ্রাভতা বা জন্ডিস (রক্তে বিলিরুবিন বৃদ্ধি, চর্ম ও শ্লেষ্মা আবরণী যথা চোখের সাদা অংশ হলুদ হওয়া) দেখা দেয়। যকৃত এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির মল (অণুবেক্ষণগত হলেও) দ্বারা দূষিত খাবার ও পানি বা পানীয় দ্বারা ছড়ায়।

বি ভাইরাস ছড়ায় এইডসের মতো দূষিত রক্ত ও যৌন সংসর্গ (লালা, বীর্য, যোনির রস) দ্বারা। সন্তান জন্মদানের সময় রোগাক্রান্ত মা থেকে শিশুর এ রোগ হতে পারে। সি ভাইরাস ছড়ায় দূষিত রক্ত (একই দাঁতের ব্রাশ বা দাড়ি কামানোর ব্লেড ব্যবহার, উল্কি করা ইত্যাদি) দিয়ে। ডি ভাইরাসঘটিত ডেল্টা যকৃৎ প্রদাহ পূর্বে যারা বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের হয়। ই ভাইরাসও এ ভাইরাসের মতো মল দ্বারা ছড়ায়। পয়ঃপ্রণালিতে চাষ করা মাছ কাঁচা খেলেও এ রোগ হতে পারে।

অন্য যেসব কারণে যকৃৎ প্রদাহ হয় তা হলো ইপস্টেইন বার ভাইরাস, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ইয়ালো ফিভার ভাইরাস, ভাইরাসবিহীন লেপ্টোস্পাইরোসিস, কক্সাইলা বার্নেটি, মাশরুম, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, কোনো কোনো ওষুধ, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি।

যকৃৎ হলো অনেকটা ত্রিকোণাকার শরীরের সর্ববৃহৎ গ্রন্থি। এটা লালচে বাদামি ভঙ্গুর, উদর গহ্বরের ঊর্ধ্বদিকে মুখ্যত ডান অংশজুড়ে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ওজন ১৬০০ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৩০০ গ্রাম হয়। রক্তপ্রবাহের ৮০ শতাংশ আসে পোর্টাল শিরা ও ২০ শতাংশ আসে যকৃৎ ধমনী থেকে। এর কাজ হলো শর্করা বিপাক, পিত্তরস, কোলেস্টেরল ও প্রথম বিন তৈরি এবং ওষুধ ও বিষাক্ত পদার্থ নিষ্ক্রমণ। সুতরাং যকৃৎ নষ্ট হলে এ কাজগুলো বিঘ্নিত হয়। গরিব ও ধনী লোক সমানভাবে যকৃতের রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়।

বি ও সি যকৃৎ প্রদাহে বর্তমানে পৃথিবীতে ৩২৫ মিলিয়ন লোক ভুগছে এবং প্রতিবছরে ১.৪ মিলিয়ন লোক মারা যাচ্ছে। এইডস থেকে ৯ গুণ বেশি লোক যকৃৎ প্রদাহে আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মার পর এ রোগেই পৃথিবীতে বেশি লোক পরলোক গমন করে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে ২/৩ বি যকৃৎ প্রদাহ এবং ১/৩ সি যকৃৎ প্রদাহ ক্যান্সারে পর্যবসিত হয়। তবে ভয়ের কিছু নেই। আমরা ইচ্ছা করলে এ রোগ প্রতিহত করতে পারি যথাযথ পয়ঃপ্রণালি নিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানি পান, মল ত্যাগের পর ও খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা, ভাগাভাগি না করে বিশুদ্ধ সিরিঞ্জ ব্যবহার করা, কান, নাক ছিদ্র বা খৎনা বিশুদ্ধ যন্ত্র দিয়ে করা, রক্ত গ্রহণ বা সঞ্চালনের পূর্বে তা সংক্রমণমুক্ত কিনা যাচাই করা ও নিরাপদ যৌন জীবনযাপন করা তথা প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার করা।

টিকা দ্বারা বি ভাইরাস প্রদাহ ১০০ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা ডি ভাইরাসকেও প্রতিরোধ করে। এ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও টিকা আছে। ই ভাইরাসের টিকা সর্বত্র পাওয়া যায় না। সি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো টিকা নেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, উচ্চ শর্করা খাবার (ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে), প্রয়োজনে ভাইরাসবিরোধী ওষুধ ও ইন্টারফেরন ব্যবহার করে রোগ চিকিৎসা করা যায়। সিরোসিস ও পেটে পানি সঞ্চয় হলে কম লবণ যুক্ত খাবার, মূত্রবর্ধক ওষুধ (প্রয়োজনে পেট ফুটো করে পানি বের করা) ও অন্যান্য জটিলতা অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। এমনকি যকৃৎ প্রতিস্থাপন করতে হতে পারে। মনে রাখবেন হাঁচি, কাশি, হাত মেলানো, একঘরে বসবাস ইত্যাদি দ্বারা এ রোগ ছড়ায় না।

কিছু ধড়িবাজ লোক হাতে হলুদ রঙের ক্রিস্টাল লুকিয়ে রেখে রোগীর মাথা ধুয়ে হলুদ পানি বের করে জন্ডিস ধুয়ে বের করেছে বলে পয়সা কামায়। এসব অপচিকিৎসক থেকে দূরে থাকুন এবং অসুস্থ হলে সত্যিকার চিকিৎসক দেখান।

অধ্যাপক ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
অধ্যক্ষ, মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কার্তিকপুর, শরীয়তপুর

 
Electronic Paper