ডেঙ্গু থেকে বাঁচুন
ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০২, ২০১৯
ডেঙ্গু (সঠিক উচ্চারণ ডেঙ্গি) একটি স্পেনীয় শব্দ। সম্ভবত সোহেলি শব্দ ডিঙ্গা থেকে তা এসেছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ২৯ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে ৩০ জুলাই ৩টা পর্যন্ত ১৩৩৫ নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে ৪১ জন এ রোগে মারা গেছে তবে সরকারি হিসাবে একজন সিভিল সার্জন ও কয়েক জন চিকিৎসকসহ ১৪ জন মারা গেছে।
ফ্লাভিভাইরাস গোত্রের উঊঘঠ-১, ২, ৩ ও ৪ ভাইরাস দ্বারা রোগ হয়। স্ত্রী এডিস ইজিপ্টি (কদাচিৎ এডিস এলবোপটিকাস) দিনের বেলা কামড়ে এ রোগ ছড়ায়। এডিস মশা দেখলে চেনা যায়। তার গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে।
এ রোগ দুই প্রকারের। সাধারণ (ক্লাসিকাল) ও রক্তক্ষয়ী (হেমোরেজিক) ও সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর, শরীর ব্যথা ইত্যাদি ছোটখাটো উপসর্গ হয়ে সেরে যায় কিন্তু রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু মারাত্মক। এতে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হয়। পেটে, শরীরে, চোখের পেছনে দারুণ ব্যথা। বমি, উদরাময়, খিঁচুনি, অনুচক্রিকা কমে গিয়ে রক্তপাত (মলের সঙ্গে, নাক দিয়ে, দাঁতের গোড়া থেকে, চর্মের নিচে রক্ত জমে লাল আঝি বা অতিরিক্ত রজঃস্রাব) ইত্যাদি হয়। রক্তনালিকা থেকে রক্তরস চুইয়ে বের হয়ে ফুসফুস ও পেটে পানি জমা হয়। রক্তের পরিমাণ ও রক্তচাপ কমে তার সঞ্চালনে বিপর্যয় ঘটে। রোগী অভিঘাতে বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে চলে যায়। এমনকি গর্ভপাত ও অকালজাত সন্তান হতে পারে। মা থেকে গর্ভস্থ শিশুও ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। জ্বর ২-৭ দিন থেকে কমে গিয়ে কয়দিন পর আবার আসতে পারে। একই মশা দ্বারা চিকুনগুনিয়াও ঘটে। এ রোগকে চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, জিকা, লাসা ফিভার, ইবোলা ভাইরাস ইত্যাদি থেকে আলাদাভাবে শনাক্ত করতে হবে।
ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। অ্যান্টিবায়োটিক বা বীজঘ্ন প্রয়োজন নেই। প্যারাসিটামল ও প্রচুর পানি পান করিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। এসপিরিন বা এনএসআইডি নিষেধ। প্রয়োজনে শরীরে অনুচক্রিকা সঞ্চালন ও কর্টিসন দিতে হবে।
সাধারণত বর্ষাকালে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়ায়। খেয়াল রাখতে হবে জলাভূমি, গর্ত, ফুলের টব, ভাঙাপাত্র ইত্যাদিতে যেন পানি জমা না থাকে। থাকলে মশা ডিম পাড়বে। যথাযথ পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন ও পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, ঝোপ-ঝাড় সাফ করা ইত্যাদি দ্বারা রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পড়াশোনা ইত্যাদি করতে দিনের বেলায়ও ঘরে মশারির ভেতরে করা ভালো। শরীরের খোলা অংশে ২০-৩০% ডি ই টি বা পিকারিডিন যুক্ত মশার তেল মাখতে হবে। নারকেল তেল মাখা বা পেঁপের পাতা খাওয়া এ সবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। একবার ডেঙ্গু হলে ৯ মাস পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। আর ডেঙ্গু থেকে ভালো হয়ে গেলে ৬ মাস পর্যন্ত তার রক্ত দান করা উচিত নয়।
জ্বর হলেই চিকিৎসক দেখান ও রক্ত পরীক্ষা করুন। ডেঙ্গু হলে প্রথম ৩ দিনের ভেতর এনএস (ননস্ট্রাকচারাল প্রোটিন)-১ এবং ৫ দিন পর আইজিজি তথা আইজিএম হ্যাঁ সূচক হবে। ঘরে ও বাইরে ফুলহাতা জামা এবং পাজামা বা ফুলপ্যান্ট পরুন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কোনো দেশে ডেঙ্গভাক্সিয়া নামে টিকা দেওয়া হয়।
ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
অধ্যক্ষ, মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কার্তিকপুর, শরীয়তপুর