অন্তঃসত্ত্বা নারীর ব্যাক পেইন কেন হয়?
স্বাস্থ্য ডেস্ক
🕐 ২:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৮
অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যথা সমস্যায় কমবেশি ভুগে থাকেন। অন্তঃসত্ত্বায় সময় এ উপসর্গ দেখা দিতে পারে তবে শেষের দিকে যখন গর্ভের শিশু বড় হতে থাকে তখন এ ব্যথা বেশি দেখা যায়।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী শতকরা ৫০-৭০ ভাগ নারী অন্তঃসত্ত্বায় ব্যাক পেইনে ভোগেন।
অন্তঃসত্ত্বায় ব্যাক পেইন কেন হয়?
অন্তঃসত্ত্বায় ব্যাক পেইন বা পিঠব্যথা হওয়ার অনেক কারণ আছে। কিছু কিছু মায়েরা গর্ভধারণের শুরু থেকেই এতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে যেসব মায়েদের ওজন বেশি থাকে বা গর্ভধারণের আগে থেকেই যাদের ব্যাক পেইনের সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বায় এর ঝুঁকি বেশি থাকে।
যেসব কারণে অন্তঃসত্ত্বায় ব্যাক পেইন হয়।
হরমোনের বৃদ্ধি
অন্তঃসত্ত্বায় অন্য অনেক সমস্যার মত ব্যাক পেইনের কারণ হিসেবেও হরমোনকে দায়ী করা যেতে পারে। অন্তঃসত্ত্বায় হরমোনের নিঃসরণের কারণে সন্তান জন্মদানের প্রস্তুতি হিসেবে পেলভিক এরিয়ার লিগামেন্টগুলো নরম হয়ে যায়। এবং জয়েন্টগুলো ঢিলে হয়ে যায়।
ফলে মায়ের শরীর অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং হাঁটার সময়, অনেক বসে থাকলে, নিছে চেয়ার থেকে ওঠার সময়, বা কোনো কিছু তোলার সময় ব্যথা অনুভূত হয়।
শরীরের ওজন বৃদ্ধি
অন্তঃসত্ত্বায় জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের শরীরের ভর-কেন্দ্রও পরিবর্তিত হয়। এছাড়া পেটের পেশি সম্প্রসারিত ও দুর্বল হয়ে যায়। মায়ের পিঠের অতিরিক্ত চাপ পড়ে
এ ছাড়াও যেহেতু মায়ের শরীর এ সময় অতিরিক্ত ওজন বহন করে তাই এ সময় মায়ের শরীরের পেশি এবং জয়েন্টগুলোর উপর চাপ বেশি থাকে। এই কারণে অন্তঃসত্ত্বায় ব্যাক পেইন বা পিঠব্যথা দেখা দিতে পারে।
বাচ্চার অবস্থান
এছাড়াও অন্তঃসত্ত্বায় শেষের দিকে বাচ্চার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে মায়ের স্নায়ুর ওপর চাপ পড়তে পারে যার কারণেও ব্যাক পেইন দেখা দিতে পারে।
ব্যাক পেইনের ধর
সাধারণত দুই ধরনের ব্যাক পেইন দেখা যায়-
লাম্বার বা লোয়ার ব্যাক পেইন
পোস্টেরিয়র পেলভিক পেইন
সঙ্গত কারণেই এ দুই ধরনের ব্যাক পেইন এবং প্রসব যন্ত্রণার মধ্যে পার্থক্য জেনে রাখা উচিত। কারণ প্রসব যন্ত্রণাও পেছন থেকেই শুরু হয়।
লাম্বার বা লোয়ার ব্যাক পেইন
এ ধরনের ব্যথা সাধারণত কোমর বা কোমরের ওপরে পিঠের মাঝ বরাবর হয়। এ ব্যথা কখনো কখনো পায়ের দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। এ ধরনের ব্যথাকে বলে sciatica। অন্তঃসত্ত্বায় লাম্বার বা লোয়ার ব্যাক পেইন সাধারণত আমরা যে ব্যাক পেইনে আক্রান্ত হয় অনেকটা সেতার মতোই। কিছু কিছু কারণে এ ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, যেমন- একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে বা ভারি কিছু আল্গালে। রাতের দিকে এ ধরনের ব্যথা বেশি অনুভূত হয়।
পোস্টেরিয়র পেলভিক পেইন
পোস্টেরিয়র পেলভিক পেইন সাধারণত পেলভিসের পেছন দিকে অনুভূত হয়। এ ধরনের ব্যথায় অন্তঃসত্ত্বায় সবচাইতে কমন। এ ধরনের ব্যথা কোমরের নিচে, নিতম্বের এক বা উভয় পাশে হতে পারে। এ ছাড়াও উরুর পেছন দিকেও তা অনুভূত হতে পারে। কিছু কিছু কাজে এ ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। যেমন- হাঁটার সময়, সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময়, নিচু চেয়ার থেকে ওঠার সময় ইত্যাদি। সামনের দিকে ঝুঁকে চেয়ারে বসে থাকলে পেলভিক পেইনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ব্যাক পেইন থেকে স্বস্তি পেতে কী করা যেতে পারে?
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কোনো না কোনো সময় অন্তঃসত্ত্বায় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যাক পেইন এর মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু কিছু উপায় রয়েছে যা আপনাকে ও আপনার সন্তানকে কোনো কষ্ট না দিয়ে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করবে।
অধিক সময় শুয়ে থাকা
ব্যাক পেইন হলে আমারা সাধারণত বিছানায় শুয়ে থাকি তবে খুব বেশি সময় শুয়ে থাকা উচিত নয়। শুয়ে থাকলে ব্যাক পেইনের তেমন কোন উপশম হয় না বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা আরও বেড়ে যেতে পারে।
ব্যায়াম
অন্তঃসত্ত্বায় ব্যাক পেইন বা পিঠব্যথা দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো ব্যায়াম। নিজের পেশিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি শরীরের সর্বস্তরের সুস্থতা খুব সহজেই শিশুকে বহন করার শক্তি জোগায়। তখন ওজন বৃদ্ধির পরও আপনি খুব সহজেই এবং আরামে শিশুকে বহন করতে পারবেন।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য শ্রেষ্ঠ ব্যায়াম হলো হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং আসতে আসতে সাইকেল চালান। আপনি আপনার ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে আপনার জন্য যে ব্যায়ামটি ভালো হয়, সে ব্যায়ামটি করা শুরু করেন।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে ব্যাক পেইন থেকে স্বস্তি মিলতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে এ ধরনের ব্যায়াম করার সময় তা দ্রুত করা না হয় বা স্ট্রেচিং বেশি করা না হয়। এর ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ব্যায়ামের সময় সব সময় নিজের শরীরের কথা শোনার চেষ্টা করুন। যখনি মনে হবে অসুবিধা হচ্ছে বা ব্যথা হচ্ছে তখন ব্যায়াম বন্ধ করুন।
রিলাক্সেশন
রিলাক্সেশনের টেকনিকগুলো জেনে নিন। প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে মাসাজ করাতে পারেন। মাসাজের ফলে কিছুটা আরামাবোধ করতে পারেন। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে হালকা মাসাজ ঘুমে সহায়তা করতে পারে। যদি প্রফেশনাল কাউকে পাওয়া না যায় তবে আপনি আপনার সঙ্গীর সহায়তা নিতে পারেন। আপনার মাথা, ঘাড়, গলা, পিঠ, হাত এবং পায়ে আলতো মাসাজ এ সময় অনেক কাজে দিতে পারে।
ঠাণ্ডা বা গরম
আপনার ব্যথার স্থানে গরম ও ঠাণ্ডা সেঁক দিতে পারেন। এতে আপনি কিছু সময়ের জন্য ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাবেন। তবে অবশ্যই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। প্রথমে দুই-তিন দিন আপনার ব্যথাযুক্ত স্থানে ২০ মিনিট করে ঠাণ্ডা কম্প্রেস প্রদান করুন। এরপরে আবার কয়েক দিন একই স্থানে গরম কম্প্রেস প্রদান করুন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, গর্ভাবস্থায় কখনও পেটে ঠাণ্ডা বা গরম কম্প্রেস করবেন না।
সোজা হয়ে দাঁড়ানো
সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা সাধারণত ঝুঁকে থাকেন। এতে মেরুদণ্ডের ওপর আরও চাপ পড়ে। যদি সোজা হয়ে দাঁড়ানোটা এ সময় একটু কঠিন হবে তারপরও চেষ্টা করুন যাতে দাঁড়ানোর সময় ঘাড় যাতে পেছনের দিকে থাকে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার চেষ্টা করুন। দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কিছুক্ষণ পরপর বসে বিশ্রাম নিন।
সিঁড়ি বাইবেন না
যদি পোস্টেরিয়র পেলভিক পেইন থাকে তবে বেশি সিঁড়ি বাইবেন না। এছাড়াও এমন সব ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন যেগুলোতে কোমর বা মেরুদণ্ড বেশি বাঁকাতে হয়।
জুতা ব্যবহার
ফ্যাশনের জন্য মেয়েরা অনেক সময় উঁচু হিল ব্যবহার করেন আবার অনেকে সমতল জুতা ব্যবহার করেন। দুটোই ক্ষতিকর অভ্যাস, যার কারণে ব্যাক পেইন হয় কারণ দুই ক্ষেত্রেই দেহের ওজন সমতা রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই অপেক্ষাকৃত নিচু হিল পরে চলাফেরা করা ভালো। নিজের হাঁটার ছন্দের সঙ্গে মিলে যায় – এমন জুতা ব্যবহারই ভালো তবে সামান্য হিল হলে ভালো।
ভারি জিনিস আলগানো
অন্তঃসত্ত্বায় ভারি জিনিস আলগানো উচিত নয়। যদি নিচ থেকে কোনো জিনিস তুলতে হয় তবে ঝুঁকে না তুলে আগে হাঁটু ভেঙে বসে তারপর তুলুন। বাজারের ব্যাগ বা কিছু বহন করতে হলে দুই হাতে সমান ভর নেয়ার চেষ্টা করুন। একটি ব্যাগে সব জিনিশ না নিয়ে দুটি ব্যাগে সমান ওজন নিয়ে বহন করুন। এক হাতে ওজন বেশি নিলে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা কষ্টকর হয় এবং তাতে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে।
ঘুম
আপনি কীভাবে ঘুমাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে আপনার মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়তে পারে এবং ব্যাক পেইন হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাম পাশ ফিরে শোয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার মেরুদণ্ডের ওপর চাপ যেমন কমবে তেমনি শরীরে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না। এছাড়াও ঘুমানোর সময় দুই পায়ের মাঝখানে বালিশ ব্যবহার করতে পারেন যাতে ওপরের পায়ের ভর বালিশের ওপর পড়ে। পেটের নিচে বালিশ ব্যবহার করতে পারেন বা পিঠের দিকে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিতে পারেন।