ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চিনির তৈরি পানীয়তে আগাম মৃত্যুঝুঁকি

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ০৭, ২০১৯

চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে তৈরি পানীয় আগাম মৃত্যুঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে, কারণ এসব খাবারের কারণে হৃদরোগ এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিচালিত নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

৩০ বছর ধরে সারা বিশ্বের ৩৭ হাজার পুরুষ এবং ৮০ হাজার নারীর ওপর এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। যেখানে দেখা গেছে, চিনি দিয়ে তৈরি পানীয় খাওয়ার কারণে অন্য কোনো কারণ ছাড়াই তাদের আগাম মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে গেছে। গবেষণাটি বলছে, এই জাতীয় পানীয় যত বেশি খাওয়া হবে মৃত্যুঝুঁকিও ততই বেড়ে যাবে।

গবেষণা দলের প্রধান লেখক ভাসান্তি মালিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, যারা মাসে একবার এরকম চিনি দিয়ে তৈরি পানীয় পান করে, তাদের তুলনায় যারা চারবার পর্যন্ত পান করে, তাদের আগাম মৃত্যুঝুঁকি ১ শতাংশ বেড়ে গেছে। যারা সপ্তাহে দুই থেকে ছয়বার পান করে, তাদের বেড়েছে ৬ শতাংশ, আর যারা প্রতিদিন এক-দুইবার চিনির পানীয় খায়, তাদের বেড়েছে ১৪ শতাংশ। যারা প্রতিদিন দুইবারের বেশি এরকম চিনি দিয়ে তৈরি পানীয় পান করে, তাদের আগাম মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়েছে ২১ শতাংশ।

বিশ্বব্যাপী কোমল পানীয় খাওয়ার হার
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা চিনি দিয়ে তৈরি পানীয় খেয়েছে, তাদের আগাম হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক এই কারণে, সারা বিশ্বে এখন কোমল পানীয় পানের প্রবণতা বাড়ছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটর বলছে, বিশ্বে এখন কোমল পানীয় পানের হার বছরে গড়ে জনপ্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১.৯ লিটারে, যা পাঁচ বছর আগেও ছিল গড়ে ৮৪.১ লিটার।

হার্ভার্ডের গবেষকরা বলছেন, ডায়েট কোমল পানীয় খাওয়া কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ, তবে কোমল পানীয়র বাজারে তাদের অংশ খুবই কম। এ রকম পানীয় পানের হার বছরে জনপ্রতি মাত্র ৩.১ লিটার। দেখা গেছে, বিশ্বে এখন কোমল পানীয় পানের দিক থেকে চীন এগিয়ে রয়েছে। বছরে দেশটির একেকজন নাগরিক এ জাতীয় পানীয় গ্রহণ করে ৪১০.৭ লিটার। এর পরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (৩৫৬.৮ লিটার), স্পেন (২৬৭.৫ লিটার), সৌদি আরব (২৫৮.৪ লিটার), আর্জেন্টিনা (২৫০.৪ লিটার)। এই পরিসংখ্যানের হিসাবে চীনে একজন বাসিন্দার গড় কোমল পানীয় পানের হার প্রতিদিন এক লিটারেরও বেশি।

ক্যালোরির হিসাব-নিকাশ
চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে ২০১৫ সালে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল একজন আমেরিকান প্রতিদিন চিনিযুক্ত পানীয় থেকে ১৫৭ ক্যালোরি গ্রহণ করে যেটি এক ক্যান কোমল পানীয়র চেয়ে একটু বেশি।

যেমন কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৩৩০ মিলি লিটারের এক ক্যান কোকা-কোলায় ৩৫ গ্রাম চিনি রয়েছে, যা সাত চা চামচ চিনির সমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ হলো, প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু যখন ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল, তখন কোমল পানীয় খাওয়ার তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না।

চীনের একজন নাগরিক প্রতিদিন গড়ে ১৮৮ ক্যালোরি গ্রহণ করছেন। যদিও এই হিসাবটি ছিল দেশটিতে চিনির ওপর শুল্ক বাড়ানোর আগে। শুল্ক বাড়ার পর মাসে চিনির তৈরি পানীয় খাওয়ার হার কিছুটা কমেছে।

বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে চিনি দিয়ে তৈরি পানীয়র ওপর নানা ধরনের কর রয়েছে। এ কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ গবেষণা এটাই প্রমাণ করছেÑআরও অনেক দেশের এ রকম কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

হার্ভার্ডের পুষ্টিবিজ্ঞানবিষয়ক অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট বলছেন, ‘এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, শিশু ও তরুণদের কাছে চিনিযুক্ত পানীয়র প্রচার সীমিত করা উচিত, সেই সঙ্গে সোডাজাতীয় পণ্যের ওপর কর বসানো উচিত। কারণ এ জাতীয় চিনির পানীয় খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে যেসব রোগের শিকার হতে চিকিৎসা ব্যয় হয়, বর্তমান কোমল পানীয়র মূল্য থেকে সেই খরচ আসছে না।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি বড় উদ্বেগ হলো, এই জাতীয় চিনিযুক্ত কোমল পানীয় প্রভাব শিশু এবং তরুণদের ওপর যেসব প্রভাব ফেলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে স্থূলতার হার ১৯৭৫ সালেও ছিল ১১ মিলিয়ন, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪ মিলিয়ন। তবে সম্প্রতি এই গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত কোমল পানীয় খেলে তার প্রভাব হতে পারে আরও ভয়াবহ।

 
Electronic Paper