ইফতার সাহরিতে কী খাচ্ছি!
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৭ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০১৮
বাঙালি ‘আত্মঘাতী’ বটে! হেন কোনো খাবার নেই যেখানে ইতোমধ্যে ভেজাল মেশানো বাদ রয়েছে। অর্থাৎ, একে অপরকে বিষ খাওয়াচ্ছে আয়োজন করে। বেচাকেনার নামে আত্মঘাতী ও আত্মহননের প্রতিযোগিতা করছে সবাই।
মাছ-মাংস-ফলসহ বিভিন্ন খাবারে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে সেসব ‘স্লো পয়জন’ এর মতো কাজ করছে শরীরে, মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে আস্তে আস্তে।
পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। সারা দিন রোজা রেখে আপনি কী খেতে চান? যা-ই খেতে চাইবেন, ধরে নিতে পারেন, তাতে কোনো না কোনো ভেজাল আছেই। বাস্তবতা এমন, ভেজালমুক্ত খাবার খেতে চাইলে আপনাকে না খেয়েই থাকতে হবে। কিন্তু সেটা আমাদের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়?
মুড়ি ছাড়া তো ইফতারের কথা ভাবাই যায় না। সেই মুড়ি উজ্জ্বল এবং সাদা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে হয় রাসায়নিক ‘সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড’। বিষাক্ত এ রাসায়নিক দ্রব্য চামড়া শোধনের জন্য ট্যানারিশিল্পে ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্যের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ইফতারে মুড়ির মতো বিভিন্ন ভাজাপোড়াও অপরিহার্য। কিন্তু পিয়াজু, বেগুনি, সবজিবড়া, বিভিন্ন কাবাব, আলুর চাপ-এসব খাবার আকর্ষণীয় করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষতিকারক টেক্সটাইল রং মানে কাপড়ে ব্যবহার্য রং। জিলাপি দীর্ঘক্ষণ মচমচে রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে পোড়া মবিল।
ইফতারের শুরুতেই দুটো খেজুর মুখে দেবেন? খেজুরে বেশি মাত্রায় না হলেও ‘ফরমালডিহাইড’ মেশানোর অভিযোগ এসেছে কোনো কোনো সময়। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ, পচা দুর্গন্ধযুক্ত খেজুরে বাজার সয়লাব হয়ে আছে বাজার।
ফল পাকাতে ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড। বিশেষ করে আম, মালটা, খেজুর, আপেল, আঙ্গুর ও কমলায় এর ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এ বিষ মেশানোর ঘণ্টাখানেক পরই নাকি জাদুর মতো হলদে হয়ে যায় ফলগুলো। অন্যদিকে পচনরোধ করতে ব্যবহার করা হয় ফরমালিন। এ ফরমালিনের কারণে ফল এক মাসেও পচে না।
ফলে ভেজাল, তাই জুস খাওয়ার কথা ভাবছেন? বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ফলের জুসে ফলের রসের ন্যূনতম উপাদান না থাকলেও নির্দিষ্ট ফলের রং, গন্ধ, চিনি ও পানি মিশিয়ে জুস হিসেবে তা প্যাকেট বা বোতলজাত করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চিনির বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘স্নাইকোমেট’ নামের রাসায়নিক তরল পদার্থ।
প্যাকেটজাত দুধ খাওয়াতে স্বস্তি নেই, মেশানো হচ্ছে ফরমালিন কার্বোইড। অতি সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে আরেক ভয়ানক তথ্য। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাজারে পাওয়া যায় এমন পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশ অনিরাপদ। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কোম্পানির দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, মানুষ যেন দুধ কেনার পর অবশ্যই ফুটিয়ে পান করেন।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, মৌসুমের শুরুতেই ইফতার কিংবা সাহরিতে আম থাকলে মন্দ হয় না। কিন্তু এ আমে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক ক্যালসিয়াম কার্বাইড। মাত্র ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রায় ১০০ কেজি আম পাকাতে পারে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এ রাসায়নিকের কারণে ক্যানসার হতে পারে, কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত করে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, মাছের বাজারে এখন আর মাছি নেই। স্বাভাবিকভাবেই ফরমালিন মেশানো মাছের আশপাশেও মাছি থাকার কথা না। শুধু তাই নয়, মাছের গায়ে দেওয়া হচ্ছে ঢেঁড়সের রস এবং কানকোতে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে কাপড়ের রং। আপনার কাছে মনে হবে, মাছটা এই মাত্রই মরেছে।
ফরমালিনযুক্ত মাছ এড়াতে শাকসবজি খেয়ে থাকবেন? শাকসবজিতে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর মাত্রার কীটনাশক। মূলত দ্রুত বর্ধনের জন্য এ কীটনাশক ছিটানো হয় উৎপাদন পর্যায়ে।