ইতিহাস ঐতিহ্যের নড়াইল
রূপসী বাংলা ডেস্ক
🕐 ২:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৫, ২০২০
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তীর্থভূমি নড়াইল। নড়াইল শ্যামল সবুজ প্রান্তর, ইছামতি, চাচুড়ীসহ অসংখ্য বিলের জলধারা, মধুমতি, চিত্রা আর নবগঙ্গা নদী বেষ্টিত খুলনা বিভাগের একটি জেলা। গাজিরগান, বৃষ্টির গান, নৌকাবাইচ, হা-ডু-ডু, লাঠিখেলা ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে উল্লেখযোগ্য এই জনপদ।
নড়াইলের গোয়াল বাথান গ্রামের মসজিদ, কদমতলা মসজিদ, নালদীতে গাজীর দরগা, উজিরপুরে রাজা কেশব রায়ের বাড়ী, জোড় বাংলায় রাধাগোবিন্দ মন্দির, লক্ষ্মীপাশায় কালিবাড়ী, নিহিনাথতলার বড়দিয়াতে মঠ, চাপাইল সেতু, নিরিবিলি পিকনিক স্পট, অরুনিমা ইকো পার্ক পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ জেলা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন
নড়াইল একটি প্রাচীন জনপদ। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ মাসে তৎকালীন মহকুমা হতে জেলা হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। ভূ-তাত্ত্বিকদের মতানুসারে আনুমানিক দশ লাখ বছর পূর্বে গঙ্গা নদীর পলিমাটি দ্বারা যে গঙ্গেয় ব-দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছিল সেই দ্বীপসমূহের অন্তর্গত এক ভূখন্ডই হল বর্তমান নড়াইল জেলা।
জানা যায়, গুপ্ত যুগে নড়াইল অঞ্চলের পূর্ব সীমান্ত মধুমতি নদী পর্যন্ত, সমগ্র যশোরসহ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং ইহা ৩৪০ হতে ৩৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। রাজা শশাঙ্ক ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন এবং তার রাজধানী ছিল কর্ণ সুবর্ণ নগর মতান্তরে লক্ষণাবর্তী। অতঃপর সম্রাট হর্ষ বর্ধন শশাঙ্ককে পরাজিত করে এই অঞ্চলকে তারা করায়ত্ত করেন। পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চল পাল বংশ দ্বারা শাসিত হয়।
পাল বংশের পতনের কর্ণাটক হতে আসা সেন রাজাদের রাজত্ব কায়েম হয়। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি সেনা নায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর বাংলাদেশ অধিকারের ফলে রাজা লক্ষণ সোনের রাজত্বকাল সমাপ্তি ঘটতে থাকে। এরপর আসে মুসলিম শাসনামল। ইংরেজ আমলে ১৭৮৬ সালে যাশোর একটি জেলা রূপে প্রকাশ পায়। ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের সময় নড়াইল একটি পৃথক মহকুমা স্থাপিত হয়।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর লোহাগড়া, কালিয়া, আলফাডাঙ্গা ও নড়াইল এই চারটি থানা নাড়াইল মহকুমা অবশিষ্ট থাকে। ১৯৬০ সালে আবার আলফাডাঙ্গা নাড়াইল হতে বিছিন্ন করে ফরিদপুরের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়্।১৯৪৮ সালের ১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে নড়াইলকে জেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলেও অনেক সংগ্রাম, হরতাল, সমাবেশ ও অনশন ধর্মঘটের ফলশ্রুতিতে ১৯৮৪ সালের ১ জুলাই নড়াইলকে পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সুলতান কমপ্লেক্স
নড়াইল জেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মাছিমদিয়া গ্রামে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশে সুলতান কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৩ সালে চিত্রা নদীর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রায় ২৭ একর জায়গা জুড়ে দুর্লভ নানা প্রজাতির গাছের সমারোহ ও লাল সিরামিকে মোড়া এই কমপ্লেক্স শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ আর অপূর্ব সব চিত্রকর্ম সুলতান কমপ্লেক্সের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। অজস্র পাখির কলতান মুখর করে রাখে এই কমপ্লেক্সের সবুজ প্রকৃতির মাঝে শায়িত এস এম সুলতানের সমাধিস্থল। সুলতান কমপ্লেক্সের দ্বিতল আধুনিক ফটোগ্যালারিতে শিল্পীর চিত্রকর্ম ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। প্রায় ৩৮ ফুট লম্বা আর্ট গ্যালারিতে সভ্যতার ক্রমবিকাশ, ধান মাড়াই, জমি কর্ষণ, গাঁতা চাষসহ মোট ২৩টি ছবি রয়েছে। এস এম সুলতান শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোর জন্য নদীতে বজরা নামে একটি ‘শিশু স্বর্গ’ তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শিশুস্বর্গে বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখানো হয়।
বাধাঘাট
নড়াইলে মনোরম চিত্রা নদীর পাড়ে এই ঘাটটি প্রায় ২০০ বছর পূর্বে তৈরি করা হয়। ঐতিহ্য ও নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশেলে বাধাঘাট এখানকার দর্শনীয় স্থানে পরিবর্তন হয়েছে। ঘাটটি নির্মাণ করেন স্থানীয় জমিদার রাম রতন রায়। জমিদার বাড়ির নারীদের বিভিন্ন পূজা পার্বণে স্নান এবং প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ঘাটটি নির্মাণ করা হয়। এছাড়া জমিদারদের নিজস্ব নৌযানও এই ঘাটে এসেই ভিড় করতো। এখানে পাশে রয়েছে একটি মন্দিরও।
২০ ফুট উঁচু কারুকার্যময় থামের ওপর নির্মিত ছাদ বিশিষ্ট এই নান্দনিক ঘাটটির সঙ্গে জড়িত আছে বঙ্কিম চন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত। খুলনা কালেক্টরেটে চাকার করা বঙ্কিম নড়াইল মহকুমা শহরে নৌপথে চলাফেরা করতে এই ঘাটটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেন। তার এই মুগ্ধতার চিহ্ন রচিত ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ ও ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ এ পাওয়া যায়। দেশ বিভাগের পর এই জমিদার বংশের লোকরা ভারতে চলে গেলে রাজ প্রাসাদসহ মন্দির, ঘাট সব কিছুই পড়ে থাকে অরক্ষিত। স্থানীয়দের উদ্যোগে ঘাটটি আবার সংস্কার করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই ঘাটটি এখন রূপগঞ্জ বাঁধা ঘাট নামে পরিচিত।
মাশরাফি বিন মর্তুজা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইল-এ মাশরাফির জন্ম। মাশরাফি বিন মর্তুজা একজন বাংলাদেশি ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ ও একদিনের আন্তর্জাতিকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার বোলিংয়ের ধরন ডানহাতি পেস বোলার। বাংলাদেশ জাতীয় দল ছাড়াও তিনি এশিয়া একাদশের একদিনের আন্তর্জাতিক দলে খেলেছেন। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা পেস বোলার ও সেরা অধিনায়ক। ২০১৮ অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগ ব্যানারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স
বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে যশোর অঞ্চলের ৮ নং সেক্টরে যোগদান করেন। এই মহান বীরের দেশপ্রেম ও বীরত্বে পরবর্তী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে নড়াইলের চণ্ডিবরপুর ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদনগরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোলিং টিমকে সুতিপুরের গোয়ালহাটি গ্রামে পাঠানো হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পেট্রোলটিকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করতে থাকেন। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শত্রুদের গুলিতে আহত সিপাহী নান্নু মিয়াকে কাঁধে নিয়ে শত্রুপক্ষকে মোকাবেলা করতে থাকেন। একসময় শত্রুপক্ষের মর্টারের আঘাতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত অবস্থায় নূর মোহাম্মদ সহযোদ্ধাদের নিরাপদ অবস্থানে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একা রাইফেল চালিয়ে যান। আহত নূর মোহাম্মদ হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীনতা যুদ্ধে নূর মোহাম্মদের অপরিসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশ প্রেমের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। তার স্মৃতি রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার জন্মস্থানে একটি ট্রাস্ট এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তুলেছে।
লোকজ ঐতিহ্য
প্রাচীন জনপদ নড়াইল নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে আপন মহিমায় ভাস্বর। অসংখ্য স্বচ্ছ জলের বিল, অবারিত মাঠ, শ্যামল প্রান্তর আর মধুমতী, চিত্রা, নবগঙ্গা আর কাজলা নদীর প্রবাহমানতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এই জেলায় গেলে দেখা পাবেন গ্রামীণ বাংলার শতবর্ষী ইতিহাস ও লোকজ ঐতিহ্যের।
নড়াইলের যাত্রাগান
জমিদার আমলে নড়াইলের জমিদারবাড়ি কেন্দ্রিক শিল্প সংস্কৃতির বিভিন্ন আয়োজন জাঁকজমকের সঙ্গে সম্পন্ন হত এবং এর প্রভাবে উৎসাহিত হয়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা হতে গায়ক, অভিনেতা, অভিনেত্রী সুর শিল্পীসহ বিভিন্ন মানুষের আবির্ভাব হতো নড়াইলে।
নড়াইলের পালাগান
পালাগান প্রাচীনকাল হতে বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার যুগেও সাধারণ মানুষের কাছে এক চির পরিচিত পছন্দের সংগীত। যা মানুষকে শুধু আনন্দই দেয়না বরং প্রচণ্ড আলোড়নে আন্দোলিত করে। নড়াইলের পালা গান বলতে জারি গান এবং কবি গানকে বোঝায়। বিজয় সরকার ও মোসলেম বয়াতির জন্য নড়াইলের কবি ও জারি গান শ্রেষ্ঠ হয়ে আছে।
নৌকা বাইচ
নড়াইলের চিত্রা, নবগঙ্গা, মধুমতী কাজলা নদীতে বর্ষাকালে নৌকা বাইচ হয়ে থাকে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নৌকা বাইচ হল এস, এম সুলতানের জন্মদিন উপলক্ষে ১০ই আগস্ট অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচ।
হা-ডু-ডু খেলা
হা-ডু-ডু বাংলার প্রাচীন ও জনপ্রিয় খেলা। সাধারণত আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন এই চার মাস এই খেলা হয়ে থাকে। স্থানীয় ভাষায় হা-ডু-ডু খেলাকে ডুগডুগে বা চোল কুত কুত খেলা বলা হয়।
লাঠি খেলা
লাঠি খেলা নড়াইল জেলার একটি প্রাচীনতম খেলা, হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের শুধু পুরুষরাই এই খেলায় অনুশীলন করে।
চিত্রা রিসোর্ট
চিত্রা নদী তীরে শহরের কোলাহল মুক্ত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে চিত্রা রিসোর্ট। সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্যের স্বকীয়তার জন্য এই পার্কটিতে প্রতিদিন শত শত বিনোদনপ্রেমীদের সমাগম ঘটে। প্রায় সাত বিঘা জমির ওপর নির্মিত চিত্রা রিসোর্টে রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড, পৃথিবী বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের ছবির গ্যালারি, শিশুপার্ক, ক্যাফে, সেমিনার হল, কটেজ, বনভোজন এবং বারবিকিউ-এর ব্যবস্থা। অন্যান্য বিনোদন আয়োজনের মধ্যে বিলিয়ার্ড, বাস্কেট বল, বোট রাইডিং, দোলনা, মিনি ট্রেন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এখানে আগত দর্শণার্থীরা চাইলে চিত্রা নদীতে নৌ-ভ্রমণ করতে পারেন।
অরুনিমা ইকোপার্ক
৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব স্থানীয় ভাবে অরুনিমা ইকো পার্ক নামেও পরিচিত। নড়াইল জেলার নারাগাতির পানিপাড়া গ্রামে অবস্থিত অরুনিমা ইকো পার্কে মোট ১৯টি ছোট বড় পুকুর ও একটি লেক আছে। আর লেকের মাঝে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম দ্বীপ, যেখানে রেস্টুরেন্ট, কটেজ এবং কনফারেন্স রুম নির্মাণ করা হয়েছে। আউটডোর ও ইনডোর গেমসের মধ্যে এখানে আছে ব্যাডমিন্টন, গলফ, বাস্কেট বল, টেনিস, টেবিল টেনিস, দাবা এবং লুডু খেলার ব্যবস্থান।
নিরিবিলি
নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার রামপুরে অবস্থিত নিরিবিলি পিকনিক স্পট দক্ষিণবঙ্গের একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। ১৯৯১ সালে নিরিবিলি পিকনিক স্পট উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ১৪ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত এই বনভোজন কেন্দ্রে দর্শণার্থীদের জন্য রয়েছে শিশু পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা, এস এম সুলতানের শিল্পকর্ম, দোলনা, রোপওয়ে, মিনি ট্রেন এবং ওয়াটার বোট। মিনি চিড়িয়াখানায় স্থান পেয়েছে- কুমির, হরিণ, ভাল্লুক, পেলিকন পাখি, অজগরসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। এছাড়া রয়েছে ৭০ ফুট লম্বা একটি তিমি মাছের কঙ্কাল। নিরিবিলি পিকনিক স্পটের শোভা বর্ধনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে- কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এবং প্রাণীর ভাস্কর্য।
স্বপ্নবীথি
নড়াইল জেলার লোহগড়া উপজেলার রামপুরে স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রায় ১২ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত এই বিনোদন কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে সুন্দর পিকনিক স্পট হিসাবে সুনাম অর্জন করেছে। স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পটের কাছেই রয়েছে নিরিবিলি পিকনিক স্পট নামে আরও একটি পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। অনেকের কাছে স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট নিরিবিলি পিকনিক স্পট-২ নামে পরিচিত। সবুজে ঢাকা স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পটে আছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্য, রেস্তোরাঁ, বোট রাইডিং এবং কার পার্কিং ব্যবস্থা।
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
চিত্রশিল্পী এস, এম সুলতান
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান (লালমিয়া) ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল সদর উপজেলার মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর এই মহান শিল্পী ইহলোক ত্যাগ করেন।
উদয় শংকর
প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর ১৯০০ সালের ৮ ডিসেম্বর নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বড়কালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে ৮ নং সেক্টরের অধীন যশোর জেলার শার্শা সীমান্তে যুদ্ধরত অবস্থায় প্রথমে আহত হন পরে পাকসেনাদের অত্যাচারে নিহত হন।
রবি শংকর
আধুনিক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধ্রুপদী সংগীতজ্ঞ রবি শংকর ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল উত্তর ভারতের কাশিতে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বড়কালিয়া গ্রামে।
নীহাররঞ্জন গুপ্ত
সাহিত্যিক নীহার রঞ্জন গুপ্ত ১৯১১ সালের ০৬ জুন নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালের ২০ জানুয়ারি এই মহান সাহিত্যিক কলিকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
কমল দাস গুপ্ত
বিশ্বখ্যাত সংগীতশিল্পী কমল দাস গুপ্ত ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই তার পিতা তারাপ্রসন্ন দাস গুপ্তের ব্যবসায়স্থল কুচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকার পিজি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লে. মতিউর রহমান
লে. মতিউর রহমান লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি তীরবর্তী মাকরাইল গ্রামে ১৯৩৬ সালে ১ ডিসেম্বর তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালের ৫ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কবিয়াল বিজয় সরকার
চারণ কবিয়াল সম্রাট বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জারি সম্রাট মোসলেম উদ্দিন বয়াতী
চারণ কবি জারী সম্রাট মোসলেম উদ্দিন বয়াতী ১৯০৪ সালে নড়াইল সদর উপজেলার তারাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালের ১৯ আগস্ট নিজ গ্রামে এই মহান গায়ক মৃত্যুবরণ করেন।