ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যেতে হবে বহুদূর

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ১:৫৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৮

স্বপ্নছোঁয়ার উদ্যম তো সেদিনই ডানা মেলেছিল, যেদিন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার পদচারণা শুরু হয়েছিল। সমাবর্তনের প্রাপ্তি ও আনন্দ অনুভূতির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্মৃতিচারণ করলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আহসান রনি।

তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একটি স্বপ্নের নাম ছিল ছোট থেকেই। সেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুণ একটি বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছি এবং পড়াশুনার পাশাপাশি নানা কাজে যুক্ত থেকেছি; ফলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটি আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় সময় হয়ে থাকবে সারা জীবন। ক্যাম্পাসে থাকতেই সাংবাদিকতার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ প্রতিষ্ঠা এবং সেটিকে একটি সফল সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাসহ আরও কত কি; আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটি আসলেই অনেক ঘটনাবহুল এবং সাফল্যমণ্ডিত।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনের মাধ্যমে বিদায় নেওয়া সত্যিই খুবই আবেগময় বিষয় আমার জন্য। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য কিছু যেন করতে পারি এ প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে চলেছি।

দর্শন বিভাগের মো. ফিরোজ আহম্মেদ সমাবর্তনের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ আনুষ্ঠানিকতা হলো গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষ্ঠানই উৎসবে পরিণত হয়। সমাবর্তন তো এ ক্ষেত্রে অনন্য এক মাত্রা। সমাবর্তনের কস্টিউম হাতে পাওয়ার পর আনন্দে আটখানা। বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছিল খুব। আবেগি হয়ে যাচ্ছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে এটা ভেবে খারাপ লাগছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ।

একই বিভাগ থেকে মাস্টার্সে পড়া অবস্থায় সমাবর্তনে অংশ নেওয়া বদরুন নেছা স্বর্ণালি জানান, সবচেয়ে ভালো লাগছে আকাক্সিক্ষত কালো গাউনটা পড়তে পেরে। ছোটবেলা থেকেই এটার প্রতি একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করত। ভাবতাম আমিও কবে এটা পরে ছবি তুলব। অবশেষে সেটা সত্যি হলো, আর এর মধ্য দিয়ে চার বছরের সাধনার রেজাল্টটা পেলাম। সত্যি অসাধারণ অনুভূতি। তবে ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে। পাঁচ বছরে এর প্রতিটা ইট, কাঠ, কংক্রিটের সঙ্গে মায়া তৈরি হয়েছে। আমি এর এক্স স্টুডেন্ট হয়ে যাচ্ছি। এটা ভেবে কষ্ট লাগছে। তবে ক্যাম্পাসের প্রতি যে ভালোবাসা দূরত্ব যতই হোক এই ভালোবাসা কমবার নয়।

ইসলামিক স্টাডিজের এম এ লতিফ জানান, সমাবর্তনের পর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যায়তনের ছাত্র হিসেবে আমি বিশ্বাস করি এখন থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা বাধ্যতামূলক হয়ে গেল। যে সেক্টরেই থাকি না কেন খেটে-খাওয়া মানুষের পয়সার সম্মান রাখার চেষ্টা করব। আজ শুধু ক্যাম্পাসে কাটানো অতীত দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। আনন্দ উল্লাস গান করে কত রাত কাটিয়ে দিয়েছি। নতুনদের ছেড়ে দিতে হবে এই ক্যাম্পাস। নয়তো থেকে যেতাম চিরসবুজ এই ক্যাম্পাসে। তবে ফিরে আসব বারবার। হয়তো কোনো রিউইনিয়নে অথবা বন্ধুদের চায়ের দাওয়াতে। তবে সব মিলিয়ে আমাদের এটাই হোক লক্ষ্য, দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। সবাই মিলে পণ করলে তা সম্ভব। কারণ, এখানকার মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের উচ্চাসনে আসীন হয়। আর সেটা আমাদেরই শুরু করতে হবে। কারণ, ঢাবি তো পথ দেখায়। আর পথে নামলে পথই পথ দেখিয়ে দেবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আহমেদ মুসা ইশতির অনুভূতি এরকম, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন পূর্ণতা পায় এই সমাবর্তনের মাধ্যমে। চার বছর ধরে আসলে অপেক্ষায় ছিলাম হ্যাট-গাউন পড়ে ক্যাম্পাসে এভাবে ঘুরে বেড়াবার। সমাবর্তনের সময় ক্যাম্পাসের এই উৎসবমুখরতার সঙ্গে আর কোনোকিছুর তুলনা হয় না। এই অনুভূতি বলে বুঝানো সম্ভব নয়।’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মনিরুজ্জামান মুন্না বলেন, সমাবর্তন নিয়ে আমার মিশ্র অনুভূতি কাজ করেছে। প্রথমত, স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করতে পেরেছি বলে স্বপ্ন পূরণের সুখ অনুভব করেছি। বাবা-মার কথা মনে পড়েছে, তারাও এ ব্যাপারটা নিয়ে গর্ববোধ করেছেন। নিজেও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ করেছি, সিনিয়র, জুনিয়র ও শিক্ষকদের সঙ্গে ছবি তুলে স্মৃতি সংরক্ষণ করেছি। এসব কিছুর পরে যখন রুমে ফিরে এসে বাস্তবতার কথা মনে পড়লো, তখন ভেবে দেখলাম, আমার ওপর অনেক দায়িত্বভার অর্পিত হলো, পরিবার-পরিজনের যে প্রত্যাশা তা পূরণ করতে পারব কি না, সে চিন্তায় কিছুটা আনমনা হয়ে ছিলাম। বুঝলাম, যেতে হবে আরও বহুদূর।

 

 
Electronic Paper