ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইবির গান পাগল লালচাঁন

রায়হান মাহবুব
🕐 ১:৪২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৮

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লালচাঁন। দেশের প্রায় ৫৬টি জেলায় গান গেয়ে মাতিয়েছেন। লিখেছেন রায়হান মাহবুব।

মনোমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত আসার গল্প। শুনছিলাম তার গানের প্রতি প্রবল অনুরাগ আর অধ্যাবসায়ের কথা। কিশোর বয়সেই নিজ এলাকা বগুড়ার সারিয়াকান্দির বিভিন্ন স্থানে বাউল গানের আসরে শামিল হতেন লালচাঁন তালুকদার। গ্রামের স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে চাইলে তাকে স্টেজে উঠতে দেওয়া হতো না। সেই স্কুলে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে গানের অভিষেক ঘটে লালচাঁনের। সেখান থেকেই এ গানের অনুরাগী তার এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলাতে সুললিত কণ্ঠে গান পরিবেশন করে বাড়িয়েছে ভক্তানুরাগীর সংখ্যা, পেয়েছে অনেক শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

মাধ্যমিক স্তর শেষ করে পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে প্রায় বছর খানেক গার্মেন্ট শ্রমিকের কাজ করেছে সে। এ সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রবল ইচ্ছা জাগে তার মনে। তখন থেকেই লালচাঁন খুব উদ্যমে লেখাপড়া করে। কিন্তু প্রথমবারে কোথাও চান্স না পাওয়ায় আবার দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে গর্বিত ইবিয়ান হওয়ার সফলতা অর্জন করে সে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে গানের প্রতি অনুরাগ আরও বেড়ে যায় লালচাঁনের। গভীর রাত পর্যন্ত টিএসসিসিতে, বঙ্গবন্ধু পুকুর পাড়ে, খেলার মাঠে, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’-সহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গিটারের ছন্দে ছন্দে সুরের মূর্ছনায় প্রকম্পিত করে তোলে ১৭৫ এককের প্রতিটি প্রান্ত। তার গানের আসরে শামিল হয় সহপাঠী, ছোট ভাই ও বন্ধুরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিভাগের অ্যালামনাইতে গান গেয়ে পেয়েছিল এমপির কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকার সেলামি।

এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্ব লালচাঁন ছাড়া যেন সরগরমই হয় না। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, যশোর, দিনাজপুর, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের প্রায় ৫৬টি জেলায় গান গেয়ে মাতিয়েছে সে। এর মধ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আসরে আমন্ত্রিত প্রধান শিল্পী হিসেবে পেয়েছে শ্রেষ্ঠসব পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা।

যশোরের মণিরামপুরের বইমেলায় শ্রোতাদের সম্মুখে তার সুলেলিত কণ্ঠের গান শুনিয়ে জিতে নিয়েছে জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার খানি। ফোক, লালন ও বাউল গানের প্রতি ঝোঁক তার ছোটবেলা হতেই। যারই সুবাদে নকুল কুমার, রিংকু, শফি মণ্ডল, মুনির কিশোর, কাঙ্গালীনি সুফিয়াদের মতো উপমহাদেশের সব খ্যাতিনামা শিল্পীদের সাহচর্য এবং তাদের সঙ্গে গান করার সুযোগ হয়েছে এই লালচাঁনের। লালচাঁন বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা তার সমানে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে লালচাঁন বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি জাতীয় পর্যায়ে ভালোমানের শিল্পী হতে চাই। সবশ্রেণির মানুষ আমাকে ভালোবাসে এবং এ গানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, সাহস জোগায়। ভালোবেসে গানের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’

 
Electronic Paper