একজন রক্তের ফেরিওয়ালা
মুতাছিম বিল্লাহ রিয়াদ
🕐 ৩:২৮ অপরাহ্ণ, জুন ০৬, ২০২১
২৪ বছর বয়সেই রক্তের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন হাফিজুর রহমান। জন্মেছেন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের মাজাট গ্রামে। পড়ছেন শ্যামনগর সরকারি মহসীন ডিগ্রি কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন অনবরত। রক্ত দেওয়া ও সংগ্রহের নেশায় ছুটে চলেছেন শহর কিংবা গ্রামে। কখনো নিজে রক্ত দেন, আবার কখনো রক্তদাতা নিয়ে পৌঁছে যান হাসপাতালে।
হাফিজ নিজ এলাকায় এক নজির সৃষ্টি করেছেন। কয়েক বছর আগেও রক্তের প্রয়োজনে এলাকাবাসী দ্বারস্থ হতেন পেশাদার রক্তদাতাদের কাছে। মূল্য পরিশোধ করে রক্ত সংগ্রহ করতেন। বেশি বিপাকে পড়ত গরিব-দুস্থরা। হাফিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন বিনামূল্যে এবং সহজেই রক্ত পাচ্ছে তারা। হাসি ফুটছে অনেকের মুখে।
একসময় রক্ত দিতে ভয় পেতেন হাফিজ। কেউ রক্ত দেওয়ার কথা বললে নানা অজুুহাতে এড়িয়ে যেতেন। কিন্তু প্রথমবার রক্ত দেওয়ার পর ভালো লাগা শুরু হয় তার। অসহায় পরিবারের মুখে অমলিন হাসি দেখে রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হন। ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সিডিও ইয়ুথ’ টিমে যোগ দেন হাফিজ। কর্মদক্ষতার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই টিমের সহযোগী সংগঠন ‘রক্ত সহায়তা কেন্দ্র’র দায়িত্ব পান। তখন থেকেই পুরোদমে কাজ করে চলেছেন। এখন এক ব্যাগ রক্তের জন্য মুঠোফোনে এক কলই যথেষ্ট।
‘রক্ত দিন, জীবন বাঁচান’ এই মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন হাফিজ। সংগঠনের সদস্যদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার লোকের রক্ত সংগ্রহ করেছেন। নিজে রক্ত দিয়েছেন ৬ বার। অনেক সহপাঠীরাই এখন তাকে রক্তবালক হাফিজ বলেই সম্বোধন করে থাকেন। চলতি রমজানেও প্রায় ৩০ ব্যাগের মতো রক্ত সংগ্রহ করেছেন। রক্তদানে আগ্রহী ও রক্তগ্রহীতাদের রক্তের গ্রুপ, নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহে রাখেন তিনি। তার কাছে জেলার বিভিন্ন স্থানের প্রায় ১৫শ’ ডোনারের তালিকা রয়েছে।
রক্তদান ছাড়াও ওই সংগঠনের সহযোগিতায় উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারণাসহ নানা সামাজিক কাজ করে চলেছেন। এসব কাজে মাঝে মধ্যে বিরক্তও হন তিনি। তবে কারও রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়ার পর রক্তগ্রহীতার ভালোবাসা আর হাসি তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অ্যাওয়ার্ড মনে হয়। ফিরে পান নতুন উদ্যম। নিজেকে কল্পনা করেন সবচেয়ে সুখী এবং সার্থক মানুষের তালিকায়।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রক্ত নিয়ে কাজ করতে চান হাফিজ। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে অসংখ্য অভাবগ্রস্ত মানুষ রয়েছে। যাদের টাকা দিয়ে রক্ত কেনার সামর্থ্য নেই। এছাড়া সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে সঠিকসময় রক্ত জোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমাদের আশেপাশের অনেকে নিজের রক্তের গ্রুপ পর্যন্ত জানে না। রক্তদান ও সংগ্রহ করে মানুষের জীবন বাঁচানোতেই আমার তৃপ্তি। আমার সামান্য কষ্টে অসহায়দের মুখে হাসি ফোটে। এই হাসিই আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অ্যাওয়ার্ড। যতদিন বেঁচে থাকি মানুষের সেবায় এ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই।