ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অপেক্ষার প্রহর...

সানজিদা ইয়াসমিন
🕐 ১২:৫০ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৭, ২০২১

অপেক্ষার প্রহর...

দু’চোখ ভরা স্বপ্ন আর বুক ভরা আশা নিয়ে ঘুম ভাঙল। আজও প্রতিদিনের মতো সেই রৌদ্রোজ্জ¦ল সূর্য উঠেছে আকাশে। কিন্তু অবকাশ নেই ছাত্র-ছাত্রীদের নেই সেই প্রাণোচ্ছল চাঞ্চল্যকর মুখ। ধীরে ধীরে সব কিছুতেই যেন বিষণ্ণ নেমে এসেছে। জীবনটাই যেন সমুদ্রের কিনারে এসে পৌঁছেছে। শুনলাম পরীক্ষা হবে তাই বরাবরের মতো বইটা নিলাম পড়তে হবে। 

সামনেই পরীক্ষা। বলা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ১৫ দিনের মধ্যেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তাই ঘুম থেকে উঠেই ভাবলাম একটু বই নিয়ে বসি। যদিও ঘুম থেকে এখন আর আগে ওঠা হয় না। লকডাউনে যে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে তা কিন্তু নয় জীবনযাত্রায়ও ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। সামনেই পরীক্ষা এই ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় পার করে দিলাম। অবশেষে যা হওয়ার তাই, পড়া আর হলো না। সকালের নাস্তা শেষ করে আবার সেই অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়। যদিও ক্যাম্পাসের আড্ডার মতো আড্ডা আর দেওয়া হয় না। তবুও মাঝে মাঝে মাথায় ঘুরপাক খায় কোথায় গেল সেই সোনালি দিন, ক্যাম্পাসের সেই আড্ডা, স্যারদের সেই উপদেশাবলি বকুনি, শিশিরভেজা সকাল, বন্ধুদের হাসাহাসি, সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, বিভিন্ন উৎসব পালনাদি একত্রে সবার সঙ্গে। সবকিছুই যেন আলো আঁধারের মধ্যে লুকোচুরি খেলছে। অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে কথায় জানতে পারলাম বেশিরভাগই ব্যস্ত থাকে তাদের ফ্যামিলি, সোশ্যাল মিডিয়া আর অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে। তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনটা কি এরকমই? আমি শুনেছিলাম খাচার ভিতরের পাখিটার গল্প।

আজ বুঝতে পারলাম তাদের অবস্থা নিজের অবস্থান থেকে। করোনা আমাদের জীবনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি মানসিকতায়ও বেশ পরিবর্তন এনেছে। আবারো পরেরদিন সকালে বই নিয়ে সেই একই জায়গায় উপস্থিত হলাম। আজ মনে মনে স্থির করেছি যেভাবেই হোক সামান্য হলেও পড়ব। কিন্তু পিছনের কয়েক মাস যেভাবে অনলাইনে ছিলাম তাতে মাথা আর কাজ করছিল না। মাথায় শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন যেন ঘুরপাক খাচ্ছে। তারপরেও পড়ার টেবিলে বসেই রইলাম। আজকে পড়তেই হবে আমাকে যেভাবেই হোক। বইয়ের পাতা যেন ঘোলাটে লাগছে। মনে মনে বলতে লাগলাম এ কোথায় আমি অজানা অচেনা এক নতুন পৃথিবী। মনের মধ্যে আবারো প্রশ্ন আমি কি আদৌ ‘শিক্ষার্থী? সেই প্রশ্নই মনের আনাচে কানাচে উঁকি দিতে লাগল। এভাবেই কিছু সময় পার করে দিলাম। মনোবল ঠিক করে আবারো শুরু করলাম পড়া। দশ মিনিট হতে না হতেই মনে পড়ল হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জার এর সেই ফানি ভিডিওর কথা নিজ থেকেই হাসতে লাগলাম সামনে বই নিয়ে। আর সেই দশ মিনিটের পড়া মনে হতে লাগল ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেন বইয়ের সঙ্গে আটকে ছিলাম। অবশেষে বই রেখে ঢুকলাম অনলাইনে। মনে মনে ভাবলাম আজকে অনেক পড়েছি। ইনশাআল্লাহ আবার কালকে পড়ব।

এইভাবে কেটে গেল কয়েকদিন। শুনলাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেবে। এক লুক্কায়িত আনন্দ যেন ছেয়ে গেল। হঠাৎ করেই অনলাইনের আগ্রহ কমে গেল, যেন কোনো ম্যাজিক এসে তার চমক দেখাল। কেউ একজন বলেছিল সম্ভবত চার/পাঁচদিন পরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে টিভিতে বলা হচ্ছে। মুখোজ্জ্বল হাসি আর প্রাণ চাঞ্চল্যকর অবস্থায় ফিরে এলাম। মাথায় ঘুরতে লাগল আমাকে ব্যাগ গোছাতে হবে, বইগুলো কোথায় রেখেছি, ঠিকঠাক আছে তো? দেখতে হবে, যেই বলা সেই কাজ সবকিছু ঠিকঠাক করা শুরু ও করে দিয়েছিলাম, উফ কোথায় রাখলাম আইডি কার্ডটা, মনে হচ্ছিল নতুন এক জায়গায় নতুনভাবে বাঁচতে সবকিছু গুছিয়ে রাখছি। বই, ব্যাগ সবকিছুতেই মোটা ধুলাবালির স্তূপ পড়ে গিয়েছে। বইয়ের র‌্যাকের অবস্থা আরও খারাপ। পিছনের কয়েক মাস খুলেও দেখিনি। চারিদিকে যেন সেই একই সংবাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তাই ধরেই নিলাম ক্যাম্পাসে যাব প্রথম দিনই যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। এতদিন যে বইয়ের প্রতি অবহেলা ছিল, হঠাৎ করেই যেন তার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল।

সকালে উঠেই বইটা নিয়ে নাড়াচাড়া দিতে লাগলাম মনে মনে ভাবতে লাগলাম আর মাত্র কয়েক দিনই আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেই তো পরীক্ষা হবে। যদিও আমি এত ভাবি না পরীক্ষা নিয়ে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতো। এভাবে দেখতে দেখতে আরও দুই/তিন দিন কেটে গেল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তিন থেকে চারদিন আগে হঠাৎ শোনা গেল করোনার ভয়াবহ অবস্থার কারণে এ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। মুখ যেন ম্লান হয়ে গেল। বই সেই আগের জায়গায়ই রয়ে গেল। কোনো পরিবর্তন এলো না, শুধু যোগ হয়েছে অপেক্ষা। সকল শিক্ষার্থী আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় আবার ফিরে পাবে সেই চাঞ্চল্যকর স্নিগ্ধদিন আর শিক্ষার্থীরা পাবে তাদের সোনালি দিনের ক্যাম্পাসের মুখকর মুহূর্ত।

লেখক : শিক্ষার্থী, একেএম রহমত উল্লাহ কলেজ, ঢাকা।

 
Electronic Paper