শীত এসেছে ফেরেনি প্রাণ
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
🕐 ২:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
শীত কারও কাছে পিঠাপুলির বিচিত্র আনন্দময় অনুভূতি, কারও কাছে নিতান্তই মর্মস্পর্শী নিরানন্দ। একদিকে শুকনো পাতার নূপুরের শব্দে কবিমনে চরম আলস্য, অন্যদিকে মন মাতানো সরষে খেতে অলির গুঞ্জনের মুখরতা। হিমহিম বাতাসে টাটকা খেজুরের রস ও গুড়ের গন্ধ আর নরম রোদে বসে ভাপা পিঠা বানানোর বাহানায় গল্পে মশগুল নারী- গ্রামবাংলার শীতের চিরায়িত ঐতিহ্য।
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে শীত এসেছে সবুজের শ্যামলিমায় ঘেরা দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও। বিবর্ণ কানন-বীথির পাতায় পাতায় এখন নিঃশেষে ঝরে যাওয়ার নির্মম ডাক। ঘন কুয়াশায় ছেয়ে থাকা অলস ভোরে উষ্ণতা ছড়াতে কেউ কেউ বসে আছে চায়ের দোকানগুলোতে। কিন্তু চায়ের কাপের টুং টাং শব্দের মাঝেও রয়েছে অব্যক্ত চাপা আক্ষেপ। বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়, নেই শিক্ষার্থী, স্থবির বেচা-বিক্রি। জব্বারের মোড়, কে.আর.মার্কেট আর প্লাটফর্মের চায়ের কাপের অজস্র আড্ডাগুলো আজও অনলাইন আর মুঠোফোনেই বন্দি। পল্লববিহীন বৃক্ষের মতো হাহাকার পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। কেননা শিক্ষার্থীরাই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। আর তাদেরকে ছাড়া একরকম প্রাণহীন মহাশ্মশানে পরিণত হয়েছে এক সময়ের প্রাণচঞ্চল ক্যাম্পাসটি।
প্রতিবছর শীত আসে একঝাঁক নতুন মুখ সঙ্গে নিয়ে। নবীনদের পদচারণায় মুখর পরিবেশে চলে বিভিন্ন সংগঠনের নানান আয়োজন। আনন্দ উচ্ছ্বাসে তারুণ্যের জয়গান ক্যাম্পাসের বুক ছাপিয়ে এখন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। তাইতো পৌষের ডাকে সাড়া দিয়ে কেউ ছুটে আসছে না। ঘটা করে একসঙ্গে শাড়ি পড়া বা প্রিয় মানুষটির হাতে হাত রেখে শিশিরভেজা ঘাসে হাঁটা- সবই স্মৃতির পাতায় একমুঠো শূন্যতা। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর জন্য বদলে গেছে অনেক কিছুই।
সেই পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা মানিয়েও নিয়েছি। হয়তো খুব শিগগিরই এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব, ফিরে যাব স্বাভাবিক কর্মব্যস্ত জীবনে। কনকনে শীতের সকালের আরামের ঘুম ফেলে ক্লাসে ছোটার চ্যালেঞ্জের দিনগুলো হয়তো আবার ফিরে আসবে। কিন্তু মহামারীতে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলা সময়গুলো কখনো ফিরে না পাওয়ার আক্ষেপ নিঃসন্দেহে পোড়াবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হৃদয়কে।