দুটি কুড়ি একটি পাতার দেশে
অনিক আহমেদ
🕐 ২:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
ক্যালেন্ডারের পাতায় একে একে পার হয়ে গেছে ৪৮২ দিন। অথচ এর মাঝে ভ্রমণপিপাসু একদল শিক্ষার্থী ভ্রমণবিহীন অবস্থায় ঘরে বসে! যতই দিন যাচ্ছিল, সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভ্রমণের নেশায় ততই তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠছিল। একাডেমিক পড়ালেখার চাপে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা করেও দীর্ঘদিন ভ্রমণহীন অবস্থার ‘ব্রেক থ্রু’ আনা সম্ভব হয়নি।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন প্রিয় ক্যাম্পাসকে ছেড়ে বন্ধুবান্ধববিহীন অবস্থায় একঘেয়ে ওঠা জীবনে সতেজতা ফেরাতে অক্টোবর মাসের ১৯-২২ তারিখ ট্যুরের পরিকল্পনা করা হয়। সে মোতাবেক সপ্তাহখানেক আগেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা হয়। ট্যুরের আগের দিন সকলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা পাড়ি জমায়।
নির্ধারিত দিনে রাত ৯টায় ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেসে চেপে বসি। যখন প্রথম দিনের গন্তব্য শ্রীমঙ্গল স্টেশনে নামি, তখন রাত ২টা। আট বন্ধু মিলে শ্রীমঙ্গলের এদিক-ওদিক ঘুরে, চা-বিস্কুট খেয়ে সময়টা কাটিয়ে দিই। স্টেশনে নেমেই একজন চালকের সঙ্গে দর কষাকষি করে ১৮০০ টাকায় সারাদিনের জন্য চাঁদের গাড়ি ভাড়া করি। প্রথম দিনের প্ল্যানের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল হামহাম জলপ্রপাত। সঙ্গে মাধবপুর লেক, লালটিলা, নুরজাহান টি স্টেট এবং লাউয়াছড়া উদ্যান।
সিলেটে বাকি দুই দিনের ট্যুর প্ল্যানে ছিল শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার, লালাখাল, জাফলং, আগুন পাহাড়, রাতারগুল, বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর।
জাফলং দৃশ্য ছিল মোহনীয়। বিশাল পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সড়কে গাড়ি চলাচল, জাফলং ব্রিজ, বিশাল বিশাল পাথর দেখতে পর্যটকের কমতি ছিল না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মোহনীয় এই জায়গায় দেড় ঘণ্টা ধরে গোসল, ফটোশুট, হৈ-হুল্লোড় করে বিকালে ফেরার পথ ধরি। সন্ধ্যায় আগুন পাহাড়ে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালাই। রাতে পুনরায় সিলেট শহরে পৌঁছে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত অবস্থায় দুপুরের ও রাতের খাবার একসঙ্গে সেরে নিই। পরদিন ছিল আরও ব্যস্তময় দিন।
বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ি। তবে ঘাটে পৌঁছাতেই দুপুর হয়ে যায়। সেখান থেকে নৌকায় যাওয়া-আসা মোট আরও তিন ঘণ্টা লাগবে। এতে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ‘নতুন’ জনপ্রিয় স্থান ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর মিস হয়ে যেত। এছাড়া বিছানাকান্দি ও জাফলংয়ের মাঝে অনেকটা মিল ছিল। তাই শেষমেষ বিছানাকান্দি বাতিল করে ভোলাগঞ্জ রওনা করি। হয়। বিছানাকান্দি যেতে না পারার আফসোস সাদাপাথর ভ্রমণ অনেকটাই ঘুচিয়ে দিল। এরপর পুনরায় নৌকায় নদী পার হয়ে লেগুনাতে উঠলাম। সন্ধ্যার পরপরই সিলেট শহরে শাহজালাল (র.) এর মাজার দেখে কিছু কেনাকাটা করে রাতের খাবার শেষ করলাম। রাত ১০টায় ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। প্রায় ঘণ্টাখানেক আগেই স্টেশনে পৌঁছে বিশ্রাম নিতে থাকলাম। ট্রেন ছাড়ার পর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে এবারের মতো দুটি কুড়ি একটি পাতার দেশ সিলেটকে বিদায় জানালাম।