কেমন আছে প্রিয় ক্যাম্পাস
আল আমিন ইসলাম নাসিম
🕐 ২:৪৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাস। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে প্রায় দেশের সকল ক্যাম্পাসগুলোই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিষণ মন আর এই নিথর দেহ চার দেয়ালে আটকে প্রায় দীর্ঘ পাঁচ মাস। মনে হয় এক দৌড়ে বাড়ির দেয়াল টপকে চলে যাই ক্যাম্পাসে। সর্বক্ষণ মনে হয়, কেমন আছে প্রিয় ক্যাম্পাস? ক্যাম্পাসের সঙ্গেই যেন সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা ক্যাম্পাসের চিরচেনা দিনগুলো স্মরণ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রিয় বন্ধুদের চেহারা থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গে ক্লাস করা, আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো। ক্যাম্পাসের সব কিছুই অপেক্ষায় চিরচেনা শিক্ষার্থীদের সেই স্পর্শগুলোর ছোঁয়া পেতে, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে তারা হাসবে, খেলবে ও দুলবে। ক্যাম্পাসকে সবসময় আলোকিত বা উজ্জ্বল, আনন্দ উল্লাসে মুখরিত করবে, রঙিন ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত করবে, জরাজীর্ণতা দূর করে ক্যাম্পাসকে প্রাণোচ্ছল করবে।
একইসঙ্গে মুখরিত করবে ক্যাম্পাসের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ। প্রকৌশলী ভবনের চত্বর থেকে শুরু করে বটতলা, আমতলা চত্বরগুলো আজ প্রহর গুনছে শিক্ষার্থীদের চরণের সংস্পর্শ পেতে। কেননা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় শহীদ মিনার চত্বর, প্রকৌশলী ভবন চত্বর, বটতলা, আমতলা চত্বরগুলো এক নতুন প্রাণ যেন ফিরে পায়। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের মাঝে আনন্দ উল্লাস সর্বদা লেগে থাকতো, পাশাপাশি যে কোনো দিবসেই অনুষ্ঠান কিংবা আলোচনা সভা চলতো। কোনো না কোনো বিভাগ বা যে কোনো শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা নানা আয়োজন করতো ক্যাম্পাসে।
হাসি, ঠাট্টা বা ট্রিট নামক বড় ভাই আপুদের নিকট আবদার কত কি না হতো? কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবকিছুই এখন নিস্তব্ধ। প্রিয় ক্যাম্পাসে আজ নেই কোনো বর্ণিল রূপসজ্জা কিংবা আয়োজন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন যেন একাকিত্বের বসবাস। প্রিয় ক্যাম্পাসে এখন নেই কোনো বিখ্যাত শিল্পীদের আনাগোনা, মঞ্চ কাঁপানো বা জমকালো অনুষ্ঠান কিংবা কোনো শীর্ষক সেমিনার।
শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষকদের পদচারণার অভাবে প্রিয় ক্যাম্পাস যেন এখন চিরচিন্দ্রায়। ক্যাম্পাসের সেই ঝালমুড়িওয়ালা, বাদাম বিক্রেতা, ভ্যানওয়ালা, পেয়ারা বিক্রেতা, আমতলা ও সাদ্দাম মোড়ের দোকানদাররা, আখের রস বিক্রেতা মামা, ফুল হাতে করে বিক্রির জন্য আসা ছোট্ট শিশুরা, বাসের ড্রাইভার-হেল্পাররা, বিভাগের পিয়নরা, কুলফি বিক্রেতা কাকুরা, ক্যাম্পাসের কর্মচারীরা তারাইবা কেমন আছে ? তাদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের দীর্ঘ সময়ের ও আত্মার সম্পর্ক।
অতি দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাদের জীবন-জীবিকা কেমন চলছে ? ক্যাম্পাসই ছিল একমাত্র তাদের আয়ের উৎস। সর্বোপরি ক্যাম্পাসের কথা বলতে গেলে সবচেয়ে যেটি বেশি মনে হয় তা হল ক্যাম্পাসের বন্ধুদের কথা। দেশের চারশত বিরানব্বই উপজেলার শিক্ষার্থীদের এখানে মিলন মেলা ঘটে থাকে। মোহনার ন্যায় এখানে সকলেই এক হয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বের এই প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য কারোর সঙ্গেই দেখা সাক্ষাৎ করা সম্ভব হচ্ছে না।