ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রবীন্দ্র-লালনের পথে একদিন

লাবু হক
🕐 ২:৪২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০

দিনটি ছিল শনিবার। ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম শিক্ষা সফর। যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেখান থেকে ক্যাম্পাস প্রায় দু-কিলোমিটারের পথ। ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম। তখনও আবছা আবছা অন্ধকার চারদিকে। রিকশা না পেয়ে হেঁটেই চলতে শুরু করলাম। একা হাঁটছি। শুরু হলো শীতের সকালে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কাপড়-চোপড় হালকা ভিজেই গেল। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে পৌঁছালাম।

গিয়ে দেখি, আমার আগেই আরও কয়েকজন এসেছে, গাড়িও চলে এসেছে। ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে, একে একে সবাই জড়ো হলো। গাড়ি ছাড়ল। 

আমি জানালা দিয়ে সবুজ মাঠ দেখছি। শহরে অনেকদিন ধরে থাকায় সবুজ মাঠ দেখা হয়নি বেশ কিছুদিন। আমি গ্রামে বড় হয়েছি, সবুজ মাঠ দেখতেই অভ্যস্ত আমি। গাড়ি থেকে রাস্তার ধারে দেখি অনেক কৃষক জমিতে রোপা গাড়ছেন। এসব দেখে নিজেকে অনেক ভালো লাগছে।

আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আমরা তিন জায়গায় ভ্রমণ করবো। প্রথমত রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি, তারপর লালন শাহ্ মাজার, আর হার্ডিঞ্জ সেতু। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে যখন আমরা তখন এক বড় ভাই আমাদের বলল ঐ যে দেখ হার্ডিঞ্জ সেতু, সকলেই নাচ-গান বাদ দিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে জানালার পাশে উঁকি দিয়ে গাড়ি থেকেই দেখতে লাগলাম হার্ডিঞ্জ সেতু, দেখলাম সত্যিই এর বিশালতা অনেক।

বলা হলো কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা কুঠিবাড়িতে পৌঁছাব। শুনে সবাই তখন আরও বেশি আনন্দিত হয়ে উঠল, নাচা-গাওয়ার পরিমাণ তখন আরও বেশি বেড়ে গেল। দুপুর ১টা। গাড়ি রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে পৌঁছাল। প্রথমে টিকিট কাটা হলো, পনের টাকা করে টিকিট। আমাদের শিক্ষক একসঙ্গে সকলের টিকিট কেটে নিল। শিলাইদহে রবি ঠাকুরের বাড়িটা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়িটা দেখতে অনেকটা বাংলো টাইপের। তবে সেটা তিন তলা পর্যন্ত লম্বা। ইট-কাঠ আর টিন দিয়ে বানানো বাংলোটা কিন্তু অবিকল আগের মতোই আছে।

কুঠিবাড়িটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে বিবেচিত। তাই আমিও সেটাকে জাদুঘরই বলব। ভেতরে প্রবেশ করে গুনে দেখলাম পুরো জাদুঘরটিতে প্রায় আঠারটি কক্ষ, সতেরটি দরজা ও ত্রিশটি জানালা আছে। জাদুঘরটির নিচতলা আর দ্বিতীয়তলা মিলে দেখলাম ষোলটি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখলাম, রবি ঠাকুরের নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির ছবি দিয়ে ছবি সজ্জিত ছিল প্রতিটি কক্ষ।

একেবারে বাল্যকাল থেকে শুরু করে মৃত্যুসজ্জার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। সেখানে রবি ঠাকুরের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র। তিনি কোথায় বসে লিখতেন, কোন পালঙ্কে ঘুমাতেন। এমনকি কোন থালায় খাবার খেতেন, তাও দেখলাম সেখানে। ব্যবহার্য জিনিসগুলোর ভেতর দেখলাম সেখানে আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোট, পল্টুন, আট বেহারার পালকি, কাঠের চেয়ার, টি টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালঙ্কসহ আরও অনেক কিছু, যেগুলোর নাম আমি মনে করতে পারছি না।

জাদুঘরটির তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখলাম একটি কামরা, শুনলাম সেই কামরাটিতে নাকি রবি ঠাকুর বসে বসে লেখালেখির কাজ করতেন। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, প্রায় ১১ একর জায়গার ওপরে আম-কাঁঠাল আর নানা জাতের ফলের গাছের বাগান।

 
Electronic Paper