ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আবার দেখা হবে বন্ধু!

আরাফাত শাহীন
🕐 ২:২১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০

একটা দুর্যোগ ও মহামারী আমাদের পুরো জীবনব্যবস্থাকে একেবারে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। এই দুর্যোগ আমাদের কাছ থেকে অনেকের জীবন কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি কেড়ে নিয়েছে অনেকের স্বপ্ন এবং আশা। চারিদিকে মৃত্যুশীতল একটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। আমরা হন্য হয়ে খুঁজে ফিরছি জীবনের স্পন্দন। প্রিয় বন্ধুদের কাছ থেকে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে করোনা মহামারী। আহা! কতদিন দেখা হয় না আমাদের। প্রত্যেকেই হয়ত চোখ বুজলেই অনুভব করতে পারি একে অপরকে।

আবার ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমেও চেহারা দেখতে পাচ্ছি একে অন্যের। কিন্তু ছুঁয়ে দেখতে পারছি না তাদের। কতদিন বুকের সঙ্গে বুক মিলিয়ে অনুভব করতে পারি না বন্ধুর হৃদস্পন্দন! বন্ধু, আমরা কিছুতেই হতাশ হবো না। এই পৃথিবীর নানা দুর্যোগ কালো অন্ধকারের মতো আমাদের ঘিরে ধরতে চাইবে; তার সুকঠিন বন্ধনে আবদ্ধ করে আমাদের শ্বাসরোধ করতে উদ্যত হবে। কিন্তু আমাদেরও হতে হবে কঠিনপ্রাণ। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। হাল ছেড়ে দেওয়া তো তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে ছয় মাস হয়ে গেল। এতদিন দেখা নেই কোনো বন্ধুর সঙ্গে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য সীমাহীন কষ্টের। এই কষ্টটা প্রতিনিয়ত আমাকে তাড়া করে ফেরে।

কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সবকিছু ঠিক হলে আমরা অবশ্যই আমার মিলিত হবো প্রিয় প্রাঙ্গণে; আমাদের কলতানে অচিরেই মুখরিত হয়ে উঠবে চারপাশ। প্রিয় শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনের ২০৪ নম্বর রুমটাকে কী পরিমাণ অনুভব করছি সেটা বোঝাতে পারব না কিছুতেই। ২০৪ এবং ৪০৩ নম্বর রুমে ক্লাস করেই অনার্স জীবনটা শেষ করেছি। এখন মাস্টার্সে এসেও প্রিয় ২০৪ নম্বর রুমটা জড়িয়ে পড়েছে আমাদের স্মৃতিতে। আমি প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করি প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি জায়গাকে। আহা! সারাক্ষণ যে টুকিটাকি চত্বর আমাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকতো, সেটা এখন কেমন বিরাণ হয়ে পড়েছে- ভাবতেই একটা অদ্ভুত কষ্ট ছড়িয়ে পড়ছে সারা হৃদয়জুড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিতের সংখ্যা একটু বেশিই। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই বিকেলে প্রিয় সংগঠনগুলোর সাপ্তাহিক আড্ডা বসতো। একটি বিকেল সেই আড্ডাগুলোতে গিয়ে কীভাবে যে রঙিন হয়ে উঠতো! আমি আমাদের প্রিয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটাকেও দারুণভাবে অনুভব করি। সবাই যখন পড়াশোনার জন্য ছুটে যেত লাইব্রেরিতে; ঠিক তখন আমি সেখানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে আমার লেখালেখির কাজটা সেরে ফেলতাম। অমন নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে কোনো লেখা তৈরি করতে সত্যিই আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করতাম।

দেখতে দেখতে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। বাড়িতে সময়টা কাটানো একটু কষ্টকর হলেও সেটা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি পরিবারের কাজে সহযোগিতা করার মাধ্যমে।

এছাড়া চেষ্টা করছি পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে। সেটা না করে অবশ্য উপায়ও নেই। যতটুকু জানতে পেরেছি, অক্টোবর মাসেও হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরা হবে না। তাহলে কেন খামোখা হতাশায় আক্রান্ত হয়ে নিজেকে কষ্ট দেব! আমি দারুণভাবে আশাবাদী একজন মানুষ। প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে অনেকদিন হয়তো দেখা নেই, পছন্দের কাজগুলোও বাড়িতে বসে করা সম্ভব হচ্ছে না; তবে এখানেই থেমে গেলে চলবে না।

নিজেকে নতুনভাবে গঠন করে তবেই বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হতে হবে। আমি আশাবাদী- আমার বন্ধুরাও সময়টাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে নিজেদের। প্রিয় বন্ধু, আমাদের দেখা হবে অচিরেই। ততদিন ভালো থাকুক সবাই।

 
Electronic Paper